চলতে-চলতে: লোকান ট্রেনে বেচাকেনা। ছবি: শান্তনু হালদার
নদিয়া থেকে এসেছিলেন মনোরমা দে। একটি শাড়ির দোকানে ঢুকেই বললেন, ‘‘তাঁতের শাড়ি দেখান।’’ আবার গাইঘাটা থেকে এসে এক মাঝবয়সী মহিলাও তাঁতের শাড়ি দেখতে চাইলেন।
হাবরা বাজারে এ বার তাঁতের শাড়ির মারকাটারি বিক্রি, জানালেন বহু দোকানি। শহরের অন্যতম বড় শাড়ির দোকানের মালিক স্বপনকুমার রায়ও এক মত। বললেন, ‘‘এ বার পুজোর বাজার ভাল। বহু দিন পরে মহিলাদের মধ্যে তাঁতের শাড়ির চাহিদা দেখা যাচ্ছে। সঙ্গে জামদানি শাড়িও বিক্রি হচ্ছে।’’ তাঁত মূলত সাতশো টাকা থেকে শুরু করে চার হাজার টাকা পর্যন্ত দরে বিক্রি হচ্ছে।
হাবরা শহর ব্যবসার প্রাণকেন্দ্র। দেখা গেল, ছোট-বড় সব দোকানে ভিড় উপচে পড়ছে। জিনিসপত্র নেড়েঘেঁটে, দোকানের বাইরে লাইনে দাঁড়িয়েও বিরক্তি নেই কারও মুখে। এক মহিলা বললেন, ‘‘ভাল জিনিস পেতে গেলে একটু সময় তো খরচ করতেই হয়।’’
এত দিন হাবরা শহরের বাসিন্দা যাঁরা কলকাতা বা বারসতে পুজোর বাজার করতে যেতেন, তাঁরাও এ বার স্থানীয় বাজারের উপরে ভরসা করছেন বলে জানালেন বহু ব্যবসায়ী। স্থানীয় স্টাফ কোয়ার্টার এলাকার বাসিন্দা নীলিমা সাহা দাস বলেন, ‘‘এলাকার যেতাম, কারণ এখানে পোশাকের নামী-দামি পোশাকের ব্র্যান্ডের ভ্যারাইটি তেমন মিল তো না। এ বার শহরের বিভিন্ন আধুনিক পোশাকের ভ্যারাইটি পাওয়া যাচ্ছে। দামও হাতের নাগালে। এ বার তাই এখানেই পুজোর বাজার করেছি।’’
ক্রেতাদের মধ্যে পোশাক কেনার বিষয়ে রুচিরও পরিবর্তন দেখছেন ব্যবসায়ীরা। স্থানীয় রেডিমেট পোশাকের দোকান মালিক সৌমেন পাল বলেন, ‘‘এ বার অল্পবয়সী ছেলেমেয়েরা দেখছি দাম নিয়ে ভাবছে না। ভাল ব্র্যান্ডের পোশাকের উপরেই তাঁদের নজর।’’
তবে শহরের দোকানগুলিতে পুজোর বাজার ভাল হলেও গ্রামীণ এলাকার দোকানগুলিতে যে ভাবে পুজোর বাজার জমেনি। ফসল ভাল হওয়ায় লোকের হাতে টাকা আচে। কিন্তু এলাকার বাইরে গিয়ে পুজোর বাজার সারার চাহিদা তৈরি হয়েছে গ্রামে গ্রামে।
শহর এলাকায় অনেক বাড়িতে বুটিকের ব্যবসা চলে। এ বার বুটিকের পোশাকেরও চাহিদা বেড়েছে। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা লোকাল ট্রেনে চেপে কর্মস্থলে যান। কিছু ব্যবসায়ী ট্রেনেই শাড়ি-সহ নানা পোশাক নিয়ে ফেরি করেন। ওই সব শাড়িরও চাহিদা বেড়েছে এ বার। কারণ ট্রেনের মধ্যে শাড়ি, জামাকাপড় নিত্যযাত্রীদের কাছে কিস্তিতেও বিক্রি হয়।
স্থানীয় জয়গাছি সুপার মার্কেটে সপ্তাহের বুধ ও শনিবার হাট বসে। হাটের দিনগুলি দূর-দূরান্ত থেকে এসে মানুষ পুজোর বাজার সারেন। পার্লারগুলিতেও ভিড় লেগে গিয়েছে। সব মিলিয়ে হাবরা শহরে ব্যবসা জমজমাট। জিএসটি, নোট-বন্দিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে লাভের মুখ দেখছেন ব্যবসায়ীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy