Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

বাড়ছে জ্বরের প্রকোপ, নেই ডেঙ্গি পরীক্ষার ব্যবস্থা

রোজই জ্বর-ডেঙ্গি নিয়ে মানুষ অশোকনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। ইতিমধ্যেই তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। 

আবর্জনা: অশোকনগর হাসপাতাল চত্বরে। ছবি: সুজিত দুয়ারি।

আবর্জনা: অশোকনগর হাসপাতাল চত্বরে। ছবি: সুজিত দুয়ারি।

সীমান্ত মৈত্র
অশোকনগর শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৯ ০১:৩৭
Share: Save:

জ্বর-ডেঙ্গি ছড়িয়েছে অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভা ও হাবড়া ২ ব্লক এলাকায়। এখানকার মানুষ চিকিৎসা পরিষেবার জন্য অশোকনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালের উপর নির্ভরশীল। রোজই জ্বর-ডেঙ্গি নিয়ে মানুষ অশোকনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। ইতিমধ্যেই তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, রোজ তিরিশ-চল্লিশজন মানুষ জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। তাঁদের মধ্যে অনেকেরই ডেঙ্গি ধরা পড়ছে। অথচ সরকারি ভাবে অশোকনগরের মানুষের ডেঙ্গি নির্ণয়ের জন্য অ্যালাইজা পরীক্ষার কোনও ব্যবস্থা নেই। অ্যালাইজা মেশিন নেই স্টেট জেনারেল হাসপাতালেও। পুরসভায় মেশিন থাকলেও টেকনিশিয়ানের অভাবে তা চালু করা যায়নি। সব মিলিয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। পাশাপাশি হাসপাতাল চত্বরের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ রোগীদের আরও আতঙ্কিত করে তুলেছে।
সরকারি ভাবে পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়ে জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের বাইরে থেকে কয়েক’শো টাকা খরচ করে অ্যালাইজা পরীক্ষা করাতে হচ্ছে। অনেক গরিব মানুষের পক্ষে ওই টাকা ব্যয় করা সব সময় সম্ভব হচ্ছে না। সরকারি ভাবে ডেঙ্গি পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় বেসরকারি প্যাথোলজি সেন্টারগুলো ফুলে ফেঁপে উঠছে। অভিযোগ, বেসরকারি প্যাথোলজি কেন্দ্রের কর্মীরা হাসপাতাল থেকে রোগীদের রক্ত সংগ্রহ করছেন। বাধ্য হয়ে জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের ওই কর্মীদের কাছে রক্ত পরীক্ষা করাতে হচ্ছে। অশোকনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই হাসপাতালে অ্যালাইজা পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের অ্যালাইজা পরীক্ষা হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতাল থেকে করিয়ে আনা হচ্ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, হাবড়া হাসপাতাল পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত। ফলে সেখান থেকে দ্রুত অ্যালাইজা পরীক্ষার রিপোর্ট নিয়ে আসা হচ্ছে। সেই মতো রোগীদের চিকিৎসাও
করা হচ্ছে।
বাসিন্দারা জানান, হাসপাতালে ভর্তি রোগীর অ্যালাইজা পরীক্ষা হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতাল থেকে করিয়ে আনা হচ্ছে ঠিকই। তবে হাবড়া থেকে রিপোর্ট আসতে দীর্ঘ সময় লাগছে। অনেক ক্ষেত্রে রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে রক্তের রিপোর্ট হাতে আসার আগেই। হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের ভাগ্যে অ্যালাইজা পরীক্ষার সুযোগ মিললেও বহির্বিভাগে জ্বর নিয়ে চিকিৎসক দেখাতে আসা রোগীদের ভাগ্যে সেই সুযোগ নেই। রোজ বহির্বিভাগে জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের দীর্ঘ লাইন পড়ছে। ছোট ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন এক মহিলা। তিনি বললেন, ‘‘ছেলের জ্বর। চিকিৎসক বলেছেন রক্ত পরীক্ষা করাতে। হাসপাতালে হবে না। টাকা দিয়ে বাইরে থেকে করতে হচ্ছে।’’ হাসপাতাল সুপার সোমনাথ মণ্ডল বলেন, ‘‘হাসপাতালে অ্যালাইজা পরীক্ষার ব্যবস্থা করার বিষয়টি স্বাস্থ্য দফতরকে জানানো হয়েছে।’’
পুরপ্রধান প্রবোধ সরকার বলেন, ‘‘পুরসভায় একটি অ্যালাইজা মেশিন আছে। তবে টেকনিশিয়ান না থাকায় তা চালু করা সম্ভব হয়নি। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর-সহ সচিবকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। উনি আশ্বাস দিয়েছেন সাতদিনের মধ্যে সমস্যার সমাধান করে দেবেন। মেশিনটি চালু করা গেলে বহু মানুষ উপকৃত হবেন।’’
অশোকনগর হাসপাতাল চত্বর মশার আঁতুড় ঘরে পরিণত হয়েছে। চারিদিকে আবর্জনা ভর্তি। ঝোপ জঙ্গলে ভরা। বৃষ্টির জল জমে আছে। তাতে মশার লার্ভা ভাসছে। আবর্জনার মধ্যে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগও দেখা যাচ্ছে। পুর এলাকাতেও ঝোপ জঙ্গল ও আবর্জনা পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। পুরপ্রধান বলেন, ‘‘কর্মীরা রোজ দু’টি শিফটে সাফাইয়ের কাজ করছেন। শীঘ্রই হাসপাতাল-সহ পুর এলাকার ঝোপ জঙ্গল পরিষ্কার হয়ে যাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dengue Fever Dengue in Ashokenagar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE