বন্ধ: গোবরডাঙা হাসপাতাল। ফাইল চিত্র
দিন কয়েক আগে জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন মনোহর বসাক নামে এক বৃদ্ধ। গোবরডাঙার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মনোহর এক বেসরকারি প্যাথোলজি থেকে রক্ত পরীক্ষা করান। তাঁর ডেঙ্গি ধরা পড়ে। তাঁকে গাইঘাটার চাঁদপাড়া ব্লক গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
গোবরডাঙায় হাসপাতাল থাকা সত্ত্বেও মেলেনি পরিষেবা। মনোহর বলেন, ‘‘শেষমেশ বনগাঁ হাসপাতালে যেতে হয়েছিল। স্ত্রী-ও সেখানে ভর্তি। বনগাঁ হাসপাতাল যেতে অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। আমার মতো গরিব মানুষের পক্ষে যা কষ্টকর।’’
১৭ নম্বর ওয়ার্ডেরই বাসিন্দা শঙ্কর মল্লিকের মেয়ে ও প্রশান্ত সরকারের ছেলেও বনগাঁ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল। ওই কিশোর কিশোরী এখন বাড়িতে মশারি টাঙিয়ে থাকছে। এলাকার হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা না পেয়ে হতাশ তাঁরাও।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গোবরডাঙা থেকে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালের দূরত্ব ২৫ কিলোমিটার, হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালের দূরত্ব ১৪ কিলোমিটার। বাধ্য হয়ে গোবরডাঙার জ্বরে আক্রান্ত রোগীরা সেখানে যাচ্ছেন। দিনের বেলা যা-ও বা গাড়ি মেলে, রাতে বনগাঁ-হাবড়া যেতে গাড়ি পেতেই সমস্যায় পড়ছেন শহরবাসী।
কয়েক বছর ধরে গোবরডাঙা গ্রামীণ হাসপাতালে রোগী ভর্তি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অতীতে অস্ত্রোপচার হত। সে সবও বন্ধ। এখন সপ্তাহের তিন-চার দিন বহির্বিভাগে একমাত্র চিকিৎসক কয়েক ঘণ্টার জন্য রোগী দেখেন। নেই ডেঙ্গির রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা। যদিও ওই হাসপাতালের উপরই গোবরডাঙা ও সংলগ্ন এলাকার মানুষের চিকিৎসার প্রধান ভরসা জায়গা। দিন কয়েক আগেও দুপুর ১টা নাগাদ হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। চিকিৎসক না আসায় রোগীরা এসেও ফিরে গিয়েছেন। রোগীরা জানালেন, দুপুরের পর জ্বর আসলে হাতুড়ে দেখিয়ে বা ওষুধের দোকান থেকে ওষুধ কিনে খেতে হচ্ছে।
‘গোবরডাঙা হাসপাতাল বাঁচাও কমিটি’র আহ্বায়ক বাপি ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে জ্বর-ডেঙ্গির প্রকোপ ছড়িয়েছে। আমরা এলাকায় ব্লিচিং, চুন ছড়িয়েছি। মানুষকে সচেতন করছি।’’ হাসপাতাল পূর্ণাঙ্গ ভাবে চালু না হওয়ার হতাশ বাপি। তিনি বলেন, ‘‘মানুষ জ্বর-ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা পরিষেবা পাচ্ছেন না। এরপরও কেন হাসপাতালটি চালু করবে না রাজ্য সরকার।’’
শহরবাসীর অভিযোগ, এক মাস আগে এলাকায় জ্বর ছড়িয়েছে। বেড়েছে মশার উপদ্রব। অথচ আগে ভাগে ডেঙ্গি প্রতিরোধে পদক্ষেপ করা হয়নি। বর্ষার আগে থেকে পদক্ষেপ করা হলে জ্বরের প্রকোপ কমানো যেত। এখন অবশ্য পুরসভার তরফে মশা মারার তেল, ব্লিচিং ছড়ানো হচ্ছে এলাকায়। দেওয়া হচ্ছে ধোঁয়া। জঙ্গল সাফাই করছেন পুরসভার কর্মীরা। পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে জ্বর আক্রান্ত রোগীদের খোঁজ খবর নিচ্ছেন।
এখনও এলাকায় বেশ কিছু নিকাশি নালায় জল জমে আছে। তার মধ্যে জমে আছে আবর্জনা। মশার লার্ভা ভেসে রয়েছে নালার জলে। বাসিন্দারা জানালেন, রাস্তা-সংলগ্ন এলাকায় মশার তেল ছড়ানো হচ্ছে। ঝোপ-জঙ্গল সাফ করা হচ্ছে। কিন্তু ওয়ার্ডের ভিতরের দিকে কাজ তেমন হচ্ছে না। গোবরডাঙা পুরসভা এলাকায় বহু মানুষের জমি বাড়ি কেনা আছে। সেখানে লোকজন বসবাস করেন না। সেই সব বাড়ি জমিতে আগাছায় ভরে গিয়েছে। মশার বংশবৃদ্ধি হচ্ছে সেখানে। বাসিন্দাদের দাবি, ওই সব আগাছা পরিষ্কার করা হোক। বাজারে দোকানগুলিতে চলছে প্লাস্টিক ব্যাগের যথেচ্ছ ব্যবহার। ক্রেতা-বিক্রেতা কেউ সচেতন নন। পুরসভার নজরদারিও নেই।
বাপি বলেন, ‘‘নিকাশি নালা দিয়ে জল বের হওয়ার উপায় নেই। ফলে আবর্জনা জমে থাকে।’’ পুরপ্রধান সুভাষ দত্ত অবশ্য বলেন, ‘‘বাড়ি বাড়ি গিয়ে চুন, ব্লিচিং, তেল দেওয়া হচ্ছে। নালা সাফাই করা হচ্ছে। জ্বর-ডেঙ্গি এখানে নিয়ন্ত্রণে। হাসপাতালের বিষয়টি রাজ্য সরকারের পরিকল্পনায় রয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy