Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

হাসপাতাল হবে না শুনে হতাশ গোবরডাঙা

ফোঁড়াকাটা, কুকুরে কামড়ের ইঞ্জেকশনটুকুও ইদানীং মেলে না গোবরডাঙা গ্রামীণ হাসপাতালে। ফলে এই হাসপাতালের উপরে নির্ভরশীল প্রায় ৫ লক্ষ মানুষ পড়েছেন অথৈ জলে। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘কবে এইমস হবে, তারই ঠিক নেই।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সীমান্ত মৈত্র
গোবরডাঙা  শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৭ ০২:০৮
Share: Save:

তেতাল্লিশ কিলোমিটার দূরে এইমসে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। শুনে আকাশ থেকে পড়ছে গোবরডাঙা!

ফোঁড়াকাটা, কুকুরে কামড়ের ইঞ্জেকশনটুকুও ইদানীং মেলে না গোবরডাঙা গ্রামীণ হাসপাতালে। ফলে এই হাসপাতালের উপরে নির্ভরশীল প্রায় ৫ লক্ষ মানুষ পড়েছেন অথৈ জলে। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘কবে এইমস হবে, তারই ঠিক নেই। তার পরে এত দূর উজিয়ে যাবই বা কী ভাবে? আমরা তবে বাঁচব কিসের ভরসায়?’’

আপদে-বিপদে ১২ কিলোমিটার দূরের হাবরা স্টেট জেনারেল হাসপাতালে গাড়ি ভাড়া করে যেতে খরচ পড়ে প্রায় ৪০০ টাকা। ৩০ কিলোমিটার দূরের বারাসত জেলা হাসপাতালে যাওয়ার খরচ প্রায় ৭০০ টাকা। হাসপাতালের হাল না ফিরলে এলাকার মানুষের ভোগান্তি যে কমবে না, তা মানছে সব পক্ষ।

সুসিত সরকার

(বই বিক্রেতা)

আমাদের পক্ষে রাত-বিরেতে বনগাঁ বা হাবরায় যাওয়া সম্ভব নয়। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা গোবরডাঙার স্বাস্থ্য পরিষেবার উপরে বড়সড় আঘাত। আমাদের ফের এ নিয়ে আন্দোলনে নামা উচিত।

অথচ, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলে দিয়েছেন, গোবরডাঙায় হাসপাতাল হচ্ছে না। কল্যাণীতে নির্মীয়মাণ এইমস-এ যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। যে হাসপাতালটি চালু হলে গোবরডাঙা থেকে সড়ক পথে দূরত্ব পড়বে প্রায় ৪৩ কিলোমিটার।

ব্যারাকপুরের প্রশাসনিক বৈঠকে বনগাঁ হাসপাতালের প্রসঙ্গও তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। যার দূরত্ব মেরেকেটে ৩০ কিলোমিটার তো হবেই।

প্রাক্তন পুরপ্রধান সিপিএমের বাপি ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরে এখানকার স্বাস্থ্যব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়ল।’’

আশিস চট্টোপাধ্যায়

(নাট্য নির্দেশক)

মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা দুঃখজনক। হাসপাতালটি আমাদের খুবই প্রয়োজন। এমন তো নয়, নতুন করে পরিকাঠামো তৈরি করতে হবে। আমি আশা করি, মুখ্যমন্ত্রী আমাদের এখানে হাসপাতালটি ঠিকঠাক করে দেবেন।

একটা সময় ছিল, গোবরডাঙা গ্রামীণ হাসপাতালটি ছিল শহর ও সংলগ্ন এলাকার মানুষের চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়ার বড় ভরসার জায়গা। চোখ, দাঁত, কান, প্রসূতি বিভাগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আসতেন। অপারেশন থিয়েটারে সিজার করানো হতো। ছোটখাট অস্ত্রোপচারও হতো। ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসক থাকতেন। রোগী ভর্তির ব্যবস্থা ছিল ৩০টি শয্যায়। অন্তর্বিভাগ চালু ছিল।

নারায়ণচন্দ্র দে

(প্রাক্তন অধ্যাপক, গোবরডাঙা হিন্দু কলেজ)

বহু টাকা খরচ করে গোবরডাঙা গ্রামীণ হাসপাতালের পরিকাঠামো তৈরি করা হয়েছিল। সে সব আমরা নষ্ট হতে দিতে পারি না। ওখানে কি এখন গরু ছাগল চরবে, নাকি মানুষ চিকিৎসা পাবে?

হাসপাতালটি জেলা পরিষদ পরিচালিত। জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে হাসপাতালটি চালানোর মতো পরিকাঠামো নেই বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। জেলা পরিষদ সূত্রের খবর, স্বাস্থ্য দফতর যাতে হাসপাতালটি নিজেদের তত্ত্বাবধানে ফিরিয়ে নেয়, সে জন্য জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য দফতরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্ত এখনও কোনও উচ্চবাচ্য করেনি দফতর।

পবিত্রকুমার মুখোপাধ্যায়

(সহ সভাপতি, গোবরডাঙা পৌর উন্নয়ন পরিষদ)

মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন তিনি বারো হাজার চিকিৎসক সংগ্রহ করতে পেরেছেন। তাঁদের নিশ্চয়ই তিনি কোনও না কোনও হাসপাতালে পাঠাবেন। আমাদের প্রশ্ন সেখানকার মানুষ কী গোবরডাঙার মানুষের থেকে বেশি ট্যাক্স দেন সরকারকে? ওই চিকিৎসকদের মধ্যে থেকে দু’তিনজনকে কি আমাদের এখানে পাঠানো যেত না?

যত দিন যাচ্ছে, হাসপাতালের পরিকাঠামো আরও খারাপ হচ্ছে। এ দিন হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল, ভবনগুলিতে শ্যাওলা ধরেছে। জানলার শার্সি ভেঙেছে। ছাদের চাঙড় খসে পড়ছে। ঝোপঝাড়ে ভরা হাসপাতাল চত্বর। আর্সেনিকমুক্ত জলের জন্য একটি প্রকল্প তৈরি হয়েছিল। সেটি বহু দিন ধরে খারাপ। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেল, এখনও গড়ে ৫০ জন করে রোগী বর্হিবিভাগে আসেন রোজ। যার মধ্যে বেশিরভাগই জ্বরের রোগী। আগে প্রতিদিন সংখ্যাটা ছিল শতাধিক। মানুষের প্রশ্ন, এই অবস্থা কি কোনও ভাবেই বদলাবে না?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE