Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

রেশন কার্ড নিয়ে হুড়োহুড়ি

ব্লক অফিসের এক কর্মী জানালেন, এখানে নথি যাচাই হচ্ছে না। শুধু ফর্ম সংগ্রহ করে ‘রিসিপ্ট কপি’ দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। 

উদ্বিগ্ন: ব্লক অফিসে উপচে পড়ছে ভিড়। ছবি: সুমন সাহা

উদ্বিগ্ন: ব্লক অফিসে উপচে পড়ছে ভিড়। ছবি: সুমন সাহা

সমীরণ দাস
জয়নগর শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০০:১০
Share: Save:

ভোর ৪টেয় উঠে ২৫ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে বহড়ু এসেছেন জয়নগরের তিলপির বাসিন্দা আবদুল রশিদ সর্দার। রেশন কার্ড সংশোধনের লাইনে দাঁড়িয়ে ষাটোর্ধ্ব রশিদ ফর্ম জমা দিয়েছেন বেলা ২টোয়। বৃদ্ধের আক্ষেপ, ‘‘গত বছরও ফর্ম জমা করেছি। এখনও কিছু হয়নি। আবার ফর্ম জমা দিতে বলেছে।’’

সকাল থেকে জয়নগর ১ ব্লক অফিসে এসে লাইন দিয়েছেন রশিদের মতো কয়েক হাজার মানুষ। দিন দশেক ধরে চলছে এমন পরিস্থিতি। সকলেই এসেছেন রেশন কার্ড সংশোধন করতে বা নতুন রেশন কার্ড তৈরি করতে। খাদ্য দফতর থেকে রেশন কার্ড সংশোধন শিবির শুরু হতেই গত কয়েক দিন ধরে ভিড় করছেন মানুষ। ব্লক অফিসে না করে রেশন কার্ড সংশোধনের এই কাজ পঞ্চায়েতগুলিতে ভাগ করে করা হচ্ছে না কেন, সেই প্রশ্ন তুলছেন দীর্ঘ পথ পেরিয়ে এসে অনেকটা সময় রোদে-গরমে লাইনে দাঁড়ানো মানুষজন।

তাঁদেরই এক জন জাফর লস্কর। বললেন, ‘‘রেশন কার্ড সংশোধনের জন্য প্রায় ১০-১২টা পঞ্চায়েতের মানুষ ব্লক অফিসে এসেছেন। স্বাভাবিক ভাবেই ভিড় বাড়ছে। এই কাজটাই প্রতিটা পঞ্চায়েতে ভাগ করে করা হলে অনেক সহজে মানুষ কাজটা করতে পারতেন।’’

কিন্তু কার্ড সংশোধনে হঠাৎ এত তাগিদ কিসের?

অনেকেই জানালেন, এর পিছনে কাজ করছে ‘এনআরসি ভীতি।’ অসমে এনআরসি চালু হওয়ার পরে একটা বড় অংশের মানুষের মনে ধারণা জন্মেছে, কাগজপত্র ঠিক না থাকলে আগামী দিনে তাঁদেরও ভিটেমাটি ছাড়া হতে হবে। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব যে ভাবে এ রাজ্যে এনআরসি চালু করা নিয়ে হুঙ্কার ছাড়ছেন, তাতে রোজই আশঙ্কা গাঢ় হচ্ছে মানুষের। রেশন কার্ড সংশোধন বা তৈরির জন্য তাগিদ সে কারণেই।

খাদ্য দফতর সূত্রের খবর, রেশন কার্ডের জন্য ন’রকম ফর্ম রয়েছে। যার যা কাজ, সেই অনুযায়ী ফর্ম সংগ্রহ করে তা পূরণ করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের কপি ওই ফর্মের সঙ্গে সংযুক্ত করে জমা করতে হচ্ছে নির্দিষ্ট কাউন্টারে। ব্লক অফিসের এক কর্মী জানালেন, এখানে নথি যাচাই হচ্ছে না। শুধু ফর্ম সংগ্রহ করে ‘রিসিপ্ট কপি’ দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।

অভিযোগ, এর আগেও এ ভাবে রেশন কার্ড সংশোধন হয়েছে। বহু মানুষ ফর্ম পূরণ করে জমা দিয়েছেন। কিন্তু সংশোধিত কার্ড এখনও হাতে আসেনি। তিলপির বাসিন্দা আফজাল হোসেন শেখ বলেন, ‘‘২০১৭-১৮ তেও ফর্ম পূরণ করেছিলাম। কিন্তু বার বার পঞায়েত, ব্লক অফিসে দরবার করেও কার্ড পাইনি। এ বার আবার লাইন দিয়েছি।’’ দফতরের এক কর্মীর কথায়, ‘‘অধিকাংশ ক্ষেত্রে ফর্ম পূরণে ভুল থাকার কারণেই কার্ড আসেনি। এ বারও ভুল হলে কার্ড আসা মুশকিল।’’

টাকার বিনিময়ে ফর্ম পূরণ করে দিতে দেখা গেল অনেককে। বিভিন্ন দোকানে বা অন্য নানা জায়গায় টাকা নিয়ে ফর্ম পূরণ চলছে। সেই কাজে ব্যস্ত এক ব্যক্তি জানালেন, পরিবারের সদস্যদের নামের বানান, ঠিকানা, আধার, প্যান নম্বর সব ঠিক মতো লিখতে হবে। ভুল হলেই মুশকিল।’’

অফিস-কাছারি, দোকান-ব্যবসা ছেড়েও আসছেন অনেকে। সদ্যোজাতকে কোলে নিয়ে লাইনে দাঁড়াতে দেখা গেল অনেককে। ঢোসার বাসিন্দা এক মহিলা বলেন, ‘‘কার্ড ঠিক না থাকলে নাকি ঘরবাড়ি ছাড়া করবে। তাই সব ছেড়ে দেড় মাসের বাচ্চাকে সঙ্গে নিয়েই রেশন কার্ড ঠিক করতে এসেছি।’’ সব মিিলয়ে এনআরসি-ভীতি ঘুম কেড়েছে বহু মানুষের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

NRC Ration Card
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE