আশ্বাস। দেগঙ্গায়। নিজস্ব চিত্র
কোথাও আধ ঘণ্টার ব্যবধানে মৃত্যু হচ্ছে দুই বোনের, কোথাও একই দিনে মৃত্যু হচ্ছে দম্পতির। জ্বর, ডেঙ্গিতে এমনই পর্যুদস্তু উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকা। দমদম, বিধাননগর, কামারহাটির মতো শহরাঞ্চলে ডেঙ্গি ও জ্বরে ভুগে মারা গিয়েছেন অনেকে। কিন্তু দুর্গাপুজো পেরিয়ে গেলেও জেলার গ্রামীণ এলাকায় জ্বরে আক্রান্ত ও মৃত্যুর মিছিল অব্যাহত। বারাসত, বসিরহাট ও বনগাঁ মহকুমার বেশ কিছু এলাকায় বৃহস্পতিবারেও মারা গিয়েছেন ৪ জন। গত দেড় মাসে মৃত্যুর সংখ্যাটা জনা পঞ্চাশ। কিন্তু অভিযোগ, ডেঙ্গির লক্ষণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেও মৃত্যুর পরে অনেক ক্ষেত্রে ‘ডেঙ্গি’ লেখা হচ্ছে না। ‘হৃদযন্ত্র বিকল’ এমনকী, ‘সেপটিসেমিয়া’ও মৃত্যুর কারণ হিসাবে নথিভুক্ত করা হচ্ছে স্বাস্থ্য দফতরের খতিয়ানে। এ ভাবে আসলে জ্বরের ভয়াবহতা গোপন করতে চাওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠছে।
জ্বরের মোকাবিলায় স্বাস্থ্য দফতর ও প্রশাসনের গাফিলতির অভিযোগ তুলে ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন মানুষজন। বুধবারই জ্বরে আক্রান্ত রোগিনীর মৃত্যু ঘিরে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে ভাঙচুর চলে দেগঙ্গার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। এর আগে উত্তেজনা ছড়িয়েছে বাদুড়িয়াতেও।
যদিও ‘আতঙ্কিত হবেন না’ বলে বাণী শোনাচ্ছেন স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। জানাচ্ছেন, চিকিৎসায় গাফিলতি নেই কোথাও। স্বাস্থ্যশিবির, ডেঙ্গি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে প্রচার চলছে বলেও তাঁদের দাবি। ব্লিচিং, মশা মারার তেল ছড়ানো হচ্ছে।
দেগঙ্গা, বাদুড়িয়া, হাবরার মতো এলাকার মানুষজন অবশ্য চোখে যা দেখছেন, তা হল, কোনও এলাকায় মৃত্যু ঘটলে তড়িঘড়ি কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বটে। কিন্তু তা নেহাতই দু’চার দিনের মতো। দেড়-দু’মাস ধরে জ্বরের প্রকোপ বেড়ে চললেও যে তৎপরতা দেখানোর দরকার ছিল স্বাস্থ্য দফতর বা প্রশাসনের, তার ছিটেফোঁটাই কেবল চোখে পড়ছে। কিন্তু পরিস্থিতির মোকাবিলার জন্য যা যথেষ্ট নয়।
ফলে দিন দিন বেড়ে চলেছে জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা। হাবরা, বাদুড়িয়া, বসিরহাট, দেগঙ্গা, বারাসতের হাসপাতালে প্রতি দিন হাজার রোগীর ভিড় চোখে পড়ছে। যাঁদের বেশির ভাগই জ্বর গায়ে আসছেন। একেকটি বেডে ঠাঁই হচ্ছে চার-পাঁচজন রোগীর। শরীর পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার আগে অনেককে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ। ক’দিন বাদে ফিরে আসছে জ্বর। মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে।
চিকিৎসায় কি সত্যি কোনও গাফিলতি হচ্ছে না?
স্বাস্থ্যকর্তারা এ ক্ষেত্রে বার বার চিকিৎসক কম থাকার কথা বলছেন। চিকিৎসককে যে কম, সে কথা অবশ্য সত্যি। হাবরা স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ৮০টি বেডে শ’তিনেক রোগী শুয়ে। মেঝেতে আরও কয়েকশো। কিন্তু চিকিৎসক মাত্র ২ জন। দেগঙ্গার হাসপাতালেও মাত্র দু’জন চিকিৎসক হাজার হাজার রোগীর চাপ সামলাচ্ছেন।
বৃহস্পতিবার দেগঙ্গার বিভিন্ন এলাকা ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখেন জেলাশাসক অন্তরা আচার্য ও স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিনিধিরা। জ্বর প্রতিরোধে বাড়িতে কী কী ব্যবস্থা নিতে হবে, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আরও কী কী করণীয়, এ দিন তার নির্দেশ দেন জেলাশাসক। তিনি বলেন, ‘‘বেসরকারি প্যাথলজি ল্যাবরেটরি থেকে যে ভাবে ডেঙ্গির কথা রক্তের রিপোর্টে লেখা হচ্ছে, তাতে আতঙ্ক আরও বেশি ছড়িয়েছে। সরকারি ব্যবস্থায় রক্ত পরীক্ষা করার কথাও বলা হয়েছে।’’ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রাঘবেশ মজুমদার বলেন, ‘‘কিছু স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক নেই। অন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে চিকিৎসক এনে পরিস্থিতি সামাল দিতে হচ্ছে। যতটা সম্ভব সকলে মিলে পরিস্থিত মোকাবিলা করছেন।’’
কিন্তু সব হাসপাতালে ডেঙ্গির পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকাতেই তো বাইরে থেকে গাঁটের কড়ি খরচ করে পরীক্ষা করাতে বাধ্য হচ্ছেন রোগীরা। সেই সমস্যা কতটা সামলানো যাবে, তা নিয়ে অবশ্য স্পষ্ট উত্তর নেই স্বাস্থ্যকর্তাদের কাছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy