Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
sundarban

বাঘের সঙ্গে লড়াই করেও সঙ্গীকে বাঁচাতে পারলেন না কেনারাম

বন দফতর ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার সকালে সুন্দরবন কোস্টাল থানার অন্তর্গত কুমিরমারি গায়েনপাড়া থেকে বাবুরাম ও তাঁর সঙ্গী কেনারাম মণ্ডল ডিঙি নৌকো নিয়ে মাছ, কাঁকড়া ধরতে যান। চিলমারির খাল ধরে নৌকো এগোনোর সময়ে ঘোলের খালের দিকে জঙ্গল থেকে বাঘ বেরিয়ে নৌকোর উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

ফাইল চিত্র

ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
গোসাবা শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৪:৫৭
Share: Save:

সঙ্গীকে বাঁচাতে বাঁশ নিয়ে বাঘের সঙ্গে লড়াইয়ে নেমেছিলেন সুন্দরবনের কেনারাম মণ্ডল। তাঁর দাপটে মুখের শিকার ছেড়ে পালালেও শেষপর্যন্ত সঙ্গী বাবুরাম রপ্তানকে (৩২) বাঁচাতে পারলেন না তিনি। বৃহস্পতিবার ঘটনাটি ঘটেছে সুন্দরবনের পিরখালির জঙ্গলের ঘোলের খাল এলাকায়।
বন দফতর ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার সকালে সুন্দরবন কোস্টাল থানার অন্তর্গত কুমিরমারি গায়েনপাড়া থেকে বাবুরাম ও তাঁর সঙ্গী কেনারাম মণ্ডল ডিঙি নৌকো নিয়ে মাছ, কাঁকড়া ধরতে যান। চিলমারির খাল ধরে নৌকো এগোনোর সময়ে ঘোলের খালের দিকে জঙ্গল থেকে বাঘ বেরিয়ে নৌকোর উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বাবুরামের গলায় থাবা বসিয়ে তাঁকে নিয়ে কাদায় পড়ে যায়। সঙ্গীকে বাঘে ধরেছে দেখে নৌকোর বৈঠা ও বাঁশ নিয়ে বাঘের সঙ্গে লড়াইয়ে নামেন কেনারাম। বাঘের চোখে বাঁশ দিয়ে খোঁচা দেন। শেষপর্যন্ত হার মানে দক্ষিণরায়। এক সময়ে বাবুরামকে ছেড়ে জঙ্গলের মধ্যে ঢুকে পড়ে। যাওয়ার সময় বেশ কয়েকবার বিকট হুঙ্কার ছাড়ে বাঘটি। সঙ্গীর দেহ নৌকোয় তুলে গ্রামের দিকে রওনা দেন কেনারাম। ততক্ষণে রক্তক্ষরণের ফলে নিস্তেজ হয়ে পড়েছেন বাবুরাম। গ্রামে ফিরে আসার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়।
খবর পেয়ে স্থানীয় কুমিরমারি পঞ্চায়েতের প্রধান দেবাশিস মণ্ডল পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যান। তাঁদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন। দেবাশিস বলেন, ‘‘বুধবারের বাজারে একটা ছোট চায়ের দোকান চালাতেন বাবুরাম। কিন্তু সে ভাবে আয় হচ্ছিল না। তাই মাঝে মধ্যে মাছ-কাঁকড়া ধরতে জঙ্গলে যেতেন।’’
বাবুরামের স্ত্রী বলেন, ‘‘লকডাউনের শুরু থেকে চায়ের দোকানে বিক্রি কমেছিল। বাড়িতে ছোট সন্তান, সংসার চালাতে তাই বাধ্য হয়েই জঙ্গলে কাঁকড়া ধরতে যেত। খুব বড় ক্ষতি হয়ে গেল।”
বাঘের সঙ্গে লড়াই করে সঙ্গীকে ফিরিয়ে আনলেও প্রাণে বাঁচাতে না পারায় আক্ষেপ যাচ্ছে না কেনারামের। এলাকায় সাহসী যুবক বলেই তাঁর পরিচিতি। বললেন, ‘‘বৈঠা দিয়ে প্রথমে আঘাত করি বাঘকে। বাঁশ দিয়ে সজোরে মারতে থাকি, চোখেও খোঁচা দিই। অনেক লড়াই করে উদ্ধার করে এনেছিলাম। কিন্তু বাঁচাতে পারলাম না।” সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের ফিল্ড ডিরেক্টর তাপস দাস বলেন, “ একটা ঘটনার কথা শুনেছি, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ওই মৎস্যজীবীদের সরকারি অনুমতিপত্র ছিল কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

sundarban tiger
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE