Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Sundarbans

জঙ্গলে গিয়ে ফের বাঘের কবলে মৎস্যজীবী

শুক্রবার সন্ধ্যায় ঘটনাটি ঘটেছে সুন্দরবনের ঝিলা ৪ নম্বর জঙ্গলের ভাইজুরি খালে।

দীনবন্ধু জোতদার। উদ্বেগে পরিবার।

দীনবন্ধু জোতদার। উদ্বেগে পরিবার।

   নিজস্ব সংবাদদাতা
গোসাবা শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২০ ০১:৪০
Share: Save:

সুন্দরবনের জঙ্গলে মাছ, কাঁকড়া ধরতে গিয়ে বাঘের হামলার মুখে পড়লেন এক মৎস্যজীবী। জঙ্গলের পাড়ে নেমে কাঁকড়া ধরার সময়ে দীনবন্ধু জোতদার নামে ওই মৎস্যজীবীকে তুলে নিয়ে যায় বাঘ। শুক্রবার সন্ধ্যায় ঘটনাটি ঘটেছে সুন্দরবনের ঝিলা ৪ নম্বর জঙ্গলের ভাইজুরি খালে।

পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন, পুজোর কেনাকাটার জন্য এ বার বাড়তি রোজগার প্রয়োজন ছিল। তাই একটু বেশি দিনের জন্য জঙ্গলে গিয়েছিলেন দীনবন্ধু। ২৬ সেপ্টেম্বর গোসাবা ব্লকের অন্তর্গত সুন্দরবন কোস্টাল থানার কালিদাসপুর গ্রাম থেকে দুই সঙ্গী রঞ্জিত মণ্ডল ও গোপাল বৈদ্যর সঙ্গে জঙ্গলে মাছ-কাঁকড়া ধরতে গিয়েছিলেন তিনি। শুক্রবার বিকেলে ফেরার কথা ছিল।

বিকেল থেকে ভাইজুরির খালের পাড়ে প্রচুর কাঁকড়া ধরা পড়ছিল। তিনজন মনে আনন্দে কাঁকড়া ধরতে শুরু করেন। সন্ধ্যার পরে সেখান থেকে বাড়ির দিকে রওনা দেবেন বলে ঠিক করেছিলেন। কিন্তু সন্ধে নামার আগেই ঘটে দুর্ঘটনা। ৫টা নাগাদ জঙ্গল থেকে একটি বাঘ বেরিয়ে এসে পিছন থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে দীনবন্ধুর উপরে। ঘাড়ে কামড় বসিয়ে টানতে টানতে জঙ্গলের মধ্যে গা ঢাকা দেয়। সঙ্গীরা চোখের পলক ফেলার আগেই ঘটে যায় কাণ্ড।

তখন জঙ্গলে অন্ধকার নামতে শুরু করেছে। সঙ্গীরা কেউ ভিতরে যেতে সাহস পাননি। গ্রামে ফিরে এসে খবর দেন তাঁরা। সঙ্গীদের কথায়, ‘‘প্রচুর কাঁকড়া ধরা পড়ছিল। তাই আমরাও খালের পাড়ে নেমে কাঁকড়া ধরতে শুরু করি। এ বার একটু বেশি রোজগারের জন্যই আমরা জঙ্গলে গিয়েছিলাম। ঠিক করেছিলাম, পুজোর আগে আর যাব না। সেই মুহূর্তে বিপদ ঘটে গেল।’’

দীনবন্ধুর স্ত্রী সবিতা শনিবার সকালে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘‘লকডাউনের সময় থেকেই সে ভাবে রোজগার হয়নি। অনেক দিন জঙ্গল বন্ধ ছিল। এ বার সকলকে পুজোর জামাকাপড় কিনে দেবেন বলে বেশি দিনের জন্য গিয়েছিলেন জঙ্গলে। কিন্তু আর ফিরলেন না।’’ বন দফতর ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বহু বছর ধরেই সুন্দরবনের নদী, খাঁড়িতে মাছ-কাঁকড়া ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন দীনবন্ধু। স্ত্রী, ছেলে, বৌমা, মেয়ে, জামাইকে নিয়ে ভরা সংসার তাঁর। বন দফতরের অনুমতি নিয়েই জঙ্গলে গিয়েছিলেন।

সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের ফিল্ড ডিরেক্টর তাপস দাস বলেন, ‘‘এক মৎস্যজীবীকে বাঘে তুলে নিয়ে গিয়েছে। ওঁর খোঁজে তল্লাশি করছেন বনকর্মীরা। কিন্তু বার বার নৌকো থেকে জঙ্গলের পাড়ে মৎস্যজীবীদের নামতে বারণ করা হলেও তাঁরা শুনছেন না। বেশি কাঁকড়ার লোভে জঙ্গলে নেমেই নিজেদের বিপদ ডেকে আনছেন।’’

গত কয়েক মাসে ক্রমশ বেড়েছে বাঘের হামলার ঘটনা। প্রাণহানি হয়েছে অনেকের। করোনা পরিস্থিতিতে অনেকে ভিনরাজ্য থেকে কাজ খুইয়ে এলাকায় ফিরে মাছ-কাঁকড়া ধরাকে বিকল্প পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। পাশাপাশি, বাড়তি রোজগারের জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জঙ্গলে প্রবেশ করছেন অনেকে। আর সে কারণেই গত কয়েক মাসে বার বার বাঘের হামলার ঘটনা ঘটছে বলে মনে করছেন গ্রামের মানুষ। বাঘে মানুষে সংঘাত কমাতে সচেতনতামূলক প্রচার থেকে শুরু করে বিকল্প কাজের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বন দফতর ও স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতগুলির মাধ্যমে। কিন্তু তবুও মিটছে না সমস্যা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sundarbans Gosaba Tiger
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE