Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

লাইফ জ্যাকেট না কিনলে জলে নামানো যাবে না ট্রলার

সাগরদ্বীপের চণ্ডীপুর গ্রামের মৎস্যজীবী রাম মাঝির পরিবার এ বার কিছুটা স্বস্তিতে। গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়ার আগে যে উৎকণ্ঠার মধ্যে ওই মৎস্যজীবীর পরিবারকে কাটাতে হতো, তা এখন থেকে অনেকটাই কমবে বলে আশা করছেন তাঁরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাকদ্বীপ শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৫ ০১:০৬
Share: Save:

সাগরদ্বীপের চণ্ডীপুর গ্রামের মৎস্যজীবী রাম মাঝির পরিবার এ বার কিছুটা স্বস্তিতে।

গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়ার আগে যে উৎকণ্ঠার মধ্যে ওই মৎস্যজীবীর পরিবারকে কাটাতে হতো, তা এখন থেকে অনেকটাই কমবে বলে আশা করছেন তাঁরা। কিছুটা নিশ্চিন্ত রাম মাঝির মতো আরও অনেকে। কারণ, চলতি বছর থেকেই শুরু হয়েছে মৎস্যজীবীদের নিরাপত্তা খতিয়ে দেখে ট্রলারের লাইসেন্স পুণর্নবীকরণ। আর সে জন্য ট্রলার মালিককে যে সব শর্ত পূরণের জন্য বলা হচ্ছে, সেখানে মৎস্যজীবীদের নিরাপত্তার দিকটি অনেকটাই সুরক্ষিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

রামবাবুর কথায়, ‘‘আমার চোখের সামনে না হলেও অনেক মৎস্যজীবীর ট্রলার উল্টে দুর্ঘটনার কথা শুনেছি। নিজেও বার বার সমুদ্রে পাড়ি দিই, ফলে ঝুঁকি তো অনেক থাকে। লাইফ জ্যাকেট দিয়েছে মালিক। বিপদ বুঝলে তা গায়ে দিয়েও নিচ্ছি। অনেকটাই চিন্তা কম।’’ এর আগে অনেকবার ট্রলার মালিকদের মৎস্যশ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়ে বার্তা দিয়েছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু সে কথা শুনতে অনেকেই আপত্তি করতেন। বেশিরভাগ নৌকোয় বিমা করানো থাকত না। শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম নিরাপত্তা দিতে অস্বীকার করতেন ট্রলার মালিকেরা। কিন্তু এ বার থেকে তা আর হচ্ছে না।

ডায়মন্ড হারবার সহ মৎস্য অধিকর্তা (সামুদ্রিক) সুরজিৎকুমার বাগ বলেন, ‘‘এ বছর থেকে সমস্ত মৎস্যজীবীদের সংগঠনকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, নৌকোয় কাজ করা শ্রমিকদের বিমার নথি, প্রাণদায়ী টিউব (লাইফ বয়) এবং ভেসে থাকার পোশাক (লাইফ জ্যাকেট) কেনার রশিদ না দেখালে আমরা ট্রলারের লাইসেন্স পুনর্নবীকরণ করছি না।’’ সামুদ্রিক মাছের জন্য জেলায় ইতিমধ্যেই প্রায় ৪ হাজার ট্রলারের লাইসেন্স ওই নথিগুলি খতিয়ে দেখেই দেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। মৎস্যকর্তারা দাবি করছেন, বোটের নাম দিয়ে যেহেতু লাইসেন্স, তাই একজন মালিকের অনেকগুলি ট্রলার থাকলে তাঁকে আলাদা আলাদা নথি দেখাতে হচ্ছে। আরও হাজার তিনেক ট্রলারের লাইসেন্সও এই মরসুমে একই ভাবে দেওয়া হবে।

এই কড়াকড়ি এ বার করা হয়েছে কেবলমাত্র বড় ট্রলারগুলির ক্ষেত্রে। মৎস্যকর্তারা জানিয়েছেন, ৬টি সিলিন্ডারওয়ালা ট্রলারগুলি এক একটি ট্রিপে ১৫ জন করে শ্রমিক নিয়ে পাড়ি দেয় গভীর সমুদ্রে। তাই যাঁরা নদী-সমুদ্রের মোহনায় ছোট নৌকো, ডিঙি নিয়ে মাছ ধরেন বা ৬টি সিলিন্ডারের কম ক্ষমতাসম্পন্ন ট্রলার ব্যবহার করেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এখনও এই কড়াকড়ি চালু হয়নি। তবে নিরাপত্তার কথা ভেবে তা-ও শীঘ্রই করা হবে।

ট্রলার মালিকদের এতে আর্থিক চাপ হলেও নিয়ম মানতে অনাগ্রহী নন মালিকেরা। কাকদ্বীপ অক্ষয়নগরের ট্রলার মালিক মেঘনাদ দাস বলেন, ‘‘সরকারি নিয়ম মানতেই হবে। আমার ৮টি ট্রলারে প্রায় ১২০ জন শ্রমিক কাজ করেন। তাঁদের সকলের জন্যই ওই লাইফ জ্যাকেট কেনা হয়েছে। বিমাও করেছি।’’ যে সমস্ত ট্রলারে সমস্ত শ্রমিক এবং মৎস্যজীবীর জন্য লাইফ জ্যাকেট থাকছে না, সেই সব মালিকদের প্রয়োজন মতো প্রাণদায়ী টিউব থাকতে হবে। ট্রলার উল্টে বা ডুবে গেলে তাতে অন্তত চারজন করে ভেসে থাকা যায় বলে জানাচ্ছেন মৎস্যকর্তারা।

ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনাইটেড ফিসারমেন অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে কাকদ্বীপের মৎস্যজীবীদের নেতা বিজন মাইতি বলেন, ‘‘এই কড়াকড়ির জন্য অনেক শ্রমিকদের দুর্ঘটনা এড়ানো যাবে। শ্রমিকদের জন্য এই পদক্ষেপ ট্রলার মালিকদের মেনে চলতে হবে।’’ সমুদ্রে এক একটি সফরে দু’সপ্তাহও পেরিয়ে যায়। পরিবারের কাউকে সমুদ্রে রওনা করে এসে ঝড়বৃষ্টির খবরে মৎস্যজীবী পরিবারের সদস্যেরা এ বার থেকে হয় তো আর ততটা উৎকণ্ঠার মধ্যে কাটাবেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Fisherman life jacket Diamond Harbour Chandipu
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE