Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ইলিশের আকাল, হতাশ মৎস্যজীবী

ইলিশের ভরা মরসুম চলছে, কিন্তু মাঝসমুদ্রে রুপোলি শস্যের দেখা নেই। কাকদ্বীপ মহকুমা জুড়ে প্রায় ৩ হাজার ট্রলার ফি বছর গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যায়।

 মঙ্গলকামনায়: মৎস্যজীবীদের হোম-যজ্ঞ চলছে কাকদ্বীপে। নিজস্ব চিত্র

মঙ্গলকামনায়: মৎস্যজীবীদের হোম-যজ্ঞ চলছে কাকদ্বীপে। নিজস্ব চিত্র

দিলীপ নস্কর
কাকদ্বীপ শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৯ ০২:২০
Share: Save:

দু’টি ঝুড়িতে মাত্র ১৩ কিলো ইলিশ নিয়ে ফিরল এফবি শঙ্খমণি ট্রলার। চার দিন গভীর সমুদ্রে গিয়ে খরচ হয়েছে লক্ষাধিক টাকা। ফলে, এ ক’টা ইলিশ ধরে হতাশ মৎস্যজীবীরা।

রবিবার বিকেলে কাকদ্বীপ মৎস্য বন্দরে ফিরেছে ট্রলারটি। এই নিয়ে চার বার গভীর সমুদ্রে গেলেন মৎস্যজীবীরা। কিন্তু লাভের মুখ দেখা তো দূরের কথা, রীতিমতো লোকসানে চলছে কারবার। ওই ট্রলারের এক মৎস্যজীবী জওহরলাল দাসের আক্ষেপ, ‘‘৫০ হাজার টাকা ট্রলার মালিকের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে সংসার চালাচ্ছিল। জানি না, কী করে ধার মেটাবো।’’

ইলিশের ভরা মরসুম চলছে, কিন্তু মাঝসমুদ্রে রুপোলি শস্যের দেখা নেই। কাকদ্বীপ মহকুমা জুড়ে প্রায় ৩ হাজার ট্রলার ফি বছর গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যায়। মূলত জুন মাসের ১৫ তারিখ থেকে সেপ্টেম্বর মাসের শেষ পর্যন্ত সাড়ে ৩ মাস ইলিশের মরসুম। গত বছরের তুলনায় এ বার গভীর সমুদ্রে গিয়ে সিকি ভাগও মাছ জালে পড়েনি বলে জানাচ্ছেন মৎস্যজীবীরা। দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে বৃষ্টি না হলেও গভীর সমুদ্র উত্তাল। আবহাওয়া দফতর প্রায়ই গভীর সমুদ্রে যাওয়া নিয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করছে। তার ফাঁকে ফাঁকে ট্রলার সমুদ্রে যাচ্ছে ঠিকই। কিন্তু এক রকম খালি হাতেই ফিরতে হচ্ছে তাঁদের।

এ জন্য আবহাওয়ার খেয়ালিপনাকেই দুষছেন মৎস্যজীবীরা। তাঁদের দাবি, পূবালি বাতাস ও ঝিরঝিরে বৃষ্টি না হওয়ায় ইলিশের এমন আকাল। বাতাস-বৃষ্টি পেলে ইলিশ উপকূলের দিকে চলে আসে। সে সময়ে জালে ধরা পড়ে। কিন্তু এ বার আবহাওয়া অনুকূলে যাচ্ছে না।

ইলিশের মরসুমে মাছ ধরে ফিরলে মজুরি বাবদ মৎস্যজীবীরা দেড় হাজার টাকা, সঙ্গে খাবার এবং মাছ পান। কিন্তু এ বার জালে মাছ না পড়ায় মালিকের কাছ থেকে কোনও মজুরি পাচ্ছেন না তাঁরা। কাকদ্বীপ শহর জুড়ে প্রায় ৯৫ শতাংশ মৎস্যজীবী পরিবারের বসবাস। এই পরিস্থিতিতে চিন্তিত অনেকেই।

এলাকা জুড়েই অর্থনৈতিক সঙ্কট চলছে। ইলিশের মরসুমে কাকদ্বীপ মৎস্য বন্দরে জাল সারানো জাল তৈরি কাজ করেন কয়েক হাজার মৎস্যজীবী পরিবারের মহিলারা। মৎস্য বন্দরে চলত সে সব কাজ। ওই কাজ করে ৪০০-৫০০ টাকা আয় করতেন মহিলারা। কিন্তু মাছ না থাকায় ফাঁকা পড়ে রয়েছে বন্দর। গভীর সমুদ্রে ট্রলার যাওয়ার সময়ে মুদিখানা দোকান থেকে হাজার হাজার টাকার খাবার, আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র নিতেন মৎস্যজীবীরা। এখন তা-ও কমছে। জ্বালানি তেল, জল, বরফ তোলার জন্য যে সমস্ত শ্রমিকেরা কাজ করতেন, তাঁদের কাজও বন্ধ। ইলিশে গাড়িও ভাড়া নেওয়া হচ্ছে না।

কাকদ্বীপ মৎস্যজীবী উন্নয়ন সমিতির সম্পাদক বিজয় মাইতি ও সতীনাথ পাত্রেরা জানালেন, ৬০-৭০ লক্ষ টাকার দামের ট্রলার সারা বছর ফেলে রাখা হয়। শুধু মাছের মরসুমে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যায়। কিন্তু এ বার মাছের আকাল দেখা দেওয়ায় সমস্ত মালিকের মাথায় হাত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hilsa Fishermen Kakdwip
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE