আবহাওয়া দফতরের দেওয়া গভীর সমুদ্রে নিম্নচাপের বার্তা পাওয়ার পরেই সমস্ত ট্রলার রবিবার ফিরল বিভিন্ন বন্দর ও ঘাটে।
বৈঠক হয়। তারপরে মাসের পর মাস পেরোয়। ফের আলোচনায় বসেন কর্তারা। আলোচনা বাস্তবায়িত হওয়ার আগে আবারও কোনও দুর্ঘটনা মনে করিয়ে দেয়, কী হওয়ার কথা ছিল, আর কী হয়নি। সে জন্য ফের বসে আলোচনা। গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া মৎস্যজীবীদের সমস্যা যে তিমিরে ছিল, সেই তিমিরেই থেকে যায়।
কেঁদোদ্বীপের কাছে ট্রলার দুর্ঘটনায় ৯টি প্রাণ চলে যাওয়ার পরে (এখনও নিখোঁজ ১০ জন) পরে আবারও উঠে এসেছে সেই প্রসঙ্গ। আড়াই মাস আগে মৎস্যজীবীদের সুরক্ষা নিয়ে নবান্নে বৈঠক হয়। সেখানে ঠিক হয়েছিল, মৎস্যজীবীদের সুরক্ষার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু তার পরে নতুন কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ মৎস্যজীবীদের। এমনকী, ট্রলারে যে পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেটও ছিল না, সে কথা বলছেন বেঁচে ফেরা মৎস্যজীবীরা।
১৫ এপ্রিল নবান্নে বৈঠক ডেকেছিল বিপর্যয় মোকাবিলা এবং অসামরিক প্রতিরক্ষা দফতর। সেই বৈঠকে আলোচনার বিষয় ছিল মৎস্যজীবীদের সুরক্ষা। এই একই বিষয় নিয়ে ২০১৭ সালে বৈঠক হয়েছিল। এপ্রিলের বৈঠকে আলোচনা হয়, আগের বৈঠকের কোন কোন বিষয় বাস্তবায়িত হয়নি। বৈঠকের শুরুতেই মেনে নেওয়া হয়, মৎস্যজীবীদের সুরক্ষায় প্রচুর ফাঁকফোঁকর রয়েছে। তার প্রমাণ গত বছরের ঝড়। সরকরি হসাবে, সেই ঝড়ে ৫০ জন মৎস্যজীবীর প্রাণ যায়। তারপর থেকে নিখোঁজ রাজ্যের প্রায় ৮০০ মৎস্যজীবী।
এপ্রিলের বৈঠকে মৎস্য দফতরের আধিকারিকেরা ছাড়াও মৎস্যজীবীদের সংগঠন, অল ইন্ডিয়া রেডিয়ো, উপকূল রক্ষী বাহিনী, বিএসএনএল, হ্যাম রেডিয়ো সংস্থার প্রতিনিধিরা ছিলেন। মৎস্যজীবীদের পক্ষ থেকে প্রথমেই জানানো হয়, আগের বৈঠকে হওয়া সিদ্ধান্তের অনেক কিছুই বাস্তবায়িত হয়নি। মৎস্যজীবীদের নিরাপত্তা উপেক্ষিতই থেকে গিয়েছে।
ওই বৈঠকে বলা হয়, একবার গভীর সমুদ্রে চলে গেলে তাঁদের সঙ্গে বন্দরের কোনও যোগাযোগ থাকে না। রেডিয়ো সিগন্যাল পাওয়া যায় না। পাঁচ কিমি দূরত্ব পার হলে মোবাইলের সিগন্যাল মুছে যায়। তাদের কাছে যে ওয়্যারলেস রেডিয়ো সেট থাকে, তার অ্যান্টেনা প্রায়ই বিকল হয়ে যায়। ট্রলারে পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেট থাকে না। বন্দরের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে যে অসুবিধা রয়েছে, তা জানায় উপকূল রক্ষী বাহিনী। ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাবের (হ্যাম রেডিয়ো) পক্ষ থেকে জানানো হয়, ট্রলারে যে হ্যান্ডস ফ্রি রেডিয়ো সেট থাকে, তা লাইসেন্স-বিহীন।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, মৎস্যজীবীদের প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের ব্যবস্থা ট্রলার মালিকদেরই করতে হবে। তাঁরা যাতে সেই সুবিধা পান, তা দেখবে মৎস্যজীবীদের সংগঠন। ওয়্যারলেস রেডিয়োর লাইসেন্সের ব্যবস্থা করবে মৎস্য দফতর। ব্যবস্থা কার্যকর করবে হ্যাম রেডিয়ো ক্লাব।
মৎস্যজীবীদের অভিযোগ, সেই বৈঠকের কোনও কিছুই বাস্তবায়িত হয়নি। পশ্চিমবঙ্গ সংযুক্ত মৎস্যজীবী সংগঠনের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক বিজন মাইতি বলেন, ‘‘সব ট্রলারে সব রকম সুবিধা নেই। মালিকদের সঙ্গে কথা বলি। আমরা নজরদারিও চালাই। কিন্তু এত ট্রলারে নজরদারি করা আমাদের পক্ষে অসম্ভব।’’ মৎস্য দফতর যাতে নজরদারি চালায়, সেই দাবি তুলেছেন তিনি।
ডায়মন্ড হারবার মৎস্য দফতরের (সামুদ্রিক) সহকারী অধিকর্তা সুরজিৎ বাগ বলেন, ‘‘প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার ট্রলার চলে আমাদের এলাকায়। ফলে নিয়মিত নজরদারির ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। তবে ট্রলার মালিকেরা যাতে নিয়ম মানেন, তা দেখা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy