চলছে ইছাপুরের সেই বাড়ি রং করার কাজ। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়
স্বয়ং মহাদেব ও পরিচিতদের সঙ্গে ফুটবল খেলতে ভাই বগলাকে নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন কলকাতা সর্বমঙ্গলা দলের কর্তা তথা পেশায় ব্যবসায়ী কালীপতি দত্ত। ‘স্বপ্নের ময়দানের’ সেই খেলায় গোল করতে গিয়ে নিজের স্ত্রীকেই ‘কিক’ মেরে বিছানা থেকে ফেলে দেন কালীবাবু।
‘ধন্যি মেয়ে’ ছবির সেই ফুটবল পাগল কালীবাবুর মতো কাণ্ড ইছাপুরের শিবশঙ্কর পাত্র এখনও ঘটাননি। তবে মাঝেমধ্যেই তাঁর প্রিয় খেলোয়াড় মেসি গোল করেছেন বলে চেঁচিয়ে ঘুম থেকে উঠে পড়েন গঙ্গার পাড় ঘেঁষা নবাবগঞ্জের বাসিন্দা শিবেদা। স্বামীর এই চিৎকারে অবশ্য ‘আতঙ্ক’ নয়, বরং মজাটাই উপভোগ করেন ইছাপুরের এই ফুটবলপ্রেমীর স্ত্রী সন্ধ্যাদেবী। তাই বিশ্বকাপ ফুটবল শুরুর আগে কয়েক হাজার গাঁটের কড়ি খরচ করে দোতলা বাড়ির ভিতর থেকে বাইরে, সবটাই প্রিয় দল আর্জেন্তিনার জার্সির রঙে সাজিয়ে তুলতেও আপত্তি করেননি সন্ধ্যাদেবী।
তবে এ বারেই প্রথম নয়। আর্জেন্তিনা ও মেসির প্রেমে পাগল হয়ে বাড়ি সাজানো শুরু ২০০৯ থেকে। সেই বছর কলকাতায় মেসি আসার আনন্দে সাদা ও হালকা নীল রঙে গোটা বাড়ির বাইরের দিকটা সাজিয়েছিলেন পেশায় চা ও নোনতা খাবারের দোকানের মালিক শিবশঙ্কর। শুরুটা তখন থেকেই। এর পরে ২০১৪-এ বিশ্বকাপের আগে ফের আর্জেন্তিনার রং লেগেছিল দোতলা বাড়ির প্রতিটি ঘর থেকে একতলার চায়ের দোকানের ভিতরে। চার বছর পরে এ বারও তার ব্যতিক্রম নেই নবাবগঞ্জের স্ট্র্যান্ড রোডে। বিশ্বকাপের ঘণ্টা বাজতেই গোটা বাড়ি সাদা-হালকা নীল রঙে রাঙিয়ে তুলতে মিস্ত্রি লাগিয়েছেন শিবশঙ্করবাবু। সারা দিন নিজে দাঁড়িয়ে থেকে তদারকি করছেন সেই কাজের। সাদা ও নীল পাশাপাশি সমান মাপের না হলেই তা মুছিয়ে ফের রং করাচ্ছেন ফুটবলপ্রেমী ও খেলোয়াড় শিবেদা।
শুধু বাড়ির দেওয়ালেই নয়, দরজা, জানালা থেকে শুরু করে সিঁড়ির রেলিং, আলমারি— সর্বত্রই পড়েছে আর্জেন্তিনার জার্সির রঙের প্রলেপ। সঙ্গে লাগানো হয়েছে মেসির বিভিন্ন ছবি। এ বার বিশ্বকাপের মধ্যেই প্রিয় খেলোয়াড়ের ৩১তম জন্মদিন। তাই ২৪ জুন শিবেদার বাড়ির সামনে ম্যারাপ বেঁধে বসবে মেসির জন্মদিনের আসর। যোগ দেবেন এলাকার অন্য ফুটবলপ্রেমীরাও। কাটা হবে ৩১ পাউন্ডের একটি কেক। খেলোয়াড়ের ছবির সামনে নিজে হাতে রান্না করা পঞ্চব্যঞ্জন সাজিয়ে দেবেন সন্ধ্যাদেবী। ‘‘ওঁর তো ফুটবল ছাড়া অন্য কোনও নেশা নেই। তাই আর্জেন্তিনা আর ফুটবল প্রেমে বাধা না হয়ে আমিও সঙ্গ দিই। আমার ছেলে-মেয়েরাও আর্জেন্তিনা বলতে অজ্ঞান,’’ বলছিলেন সন্ধ্যাদেবী।
এ বছর বিশ্বকাপ দেখতে রাশিয়া পাড়ি দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন শিবেদা। বললেন, ‘‘অনেক কষ্টে ৬০ হাজার টাকা জমিয়েছিলাম। কিন্তু খোঁজ নিয়ে দেখলাম, দেড় লক্ষ টাকা লাগবে খেলা দেখতে যেতে। তাই আর গেলাম না।’’ বাবার মতো আর্জেন্তিনা পাগল বিএসসি পড়ুয়া নেহাও। নাচ, পড়া নিয়ে যতই ব্যস্ততা থাকুক, ফুটবল খেলা হলে তাঁকে রোখা যায় না। তিনি জানান, ২০১৫-এ চিলের সঙ্গে আর্জেন্তিনার খেলায় পেনাল্টি মারতে গিয়ে মেসি বলটা একেবারে মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দেন। তা দেখে কেঁদে ফেলেছিলেন শিবশঙ্কর। বলেছিলেন, ‘দেখবি মেসি আজই অবসর নেবে।’ নেহা বলেন, ‘‘কিছুক্ষণ পরে অবশ্য তাই হয়েছিল। মেসি অবসরের কথা ঘোষণা করতেই আমি আর বাবা সারা দিন কেঁদেছি।’’
তবে নিজে আর্জেন্তিনার ভক্ত বলে অন্য দলকে ছোট করতে নারাজ শিবশঙ্কর। তাঁর কথায়, ‘‘সব দলই তো ফুটবল খেলছে!’’ পড়ন্ত বিকেলে চায়ের গেলাসে চামচ নাড়তে নাড়তে শিবেদা গেয়ে ওঠেন, ‘সব খেলার সেরা বাঙালির তুমি ফুটবল!’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy