Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

উন্নয়নের ফসল তুললেন নুসরত, বলছে বসিরহাট

তৃণমূল শিবিরের দাবি, রসায়নটা আর কিছু নয়। উন্নয়ন, উন্নয়ন এবং উন্নয়ন।

খুশি: নুসরত। বৃহস্পতিবার তোলা নিজস্ব চিত্র

খুশি: নুসরত। বৃহস্পতিবার তোলা নিজস্ব চিত্র

নির্মল বসু
বসিরহাট শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৯ ০১:১০
Share: Save:

দিনভর দেখা মেলেনি। বিকেল ৪টে নাগাদ যখন পৌঁছলেন গণনাকেন্দ্রে, ততক্ষণে স্কোর বোর্ডে জয় এক রকম নিশ্চিত। বসিরহাটের তৃণমূল প্রার্থী নুসরত জাহানকে দেখে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে ভিড়টা।

প্রার্থীর মুখেও তখন টেনশনের লেশমাত্র নেই। হাসিমুখে হাত নেড়ে সকলকে ধন্যবাদ জানান নুসরত। বলেন, ‘‘আমার উপরে ভরসা রেখেছেন এখানকার মানুষ। সকলকে ধন্যবাদ। বসিরহাটের মানুষের কথা আমি দেশের সামনে তুলে ধরব।’’

কিন্তু কোন জাদুতে তৃণমূলে প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষেরও বেশি ভোটে জিততে চলেছেন (রাত পর্যন্ত সরকারি ভাবে ফল ঘোষণা হয়নি) তৃণমূল প্রার্থী?

তৃণমূল শিবিরের দাবি, রসায়নটা আর কিছু নয়। উন্নয়ন, উন্নয়ন এবং উন্নয়ন। হাসপাতাল, রাস্তাঘাট, সেতু— কোথায় না উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে বসিরহাটে, বলছেন তৃণমূল নেতারা। জয়ের এক কাণ্ডারী বিধায়ক দীপেন্দু বিশ্বাসের কথায়, ‘‘দিদি যে ভাবে প্রত্যন্ত গ্রামে গ্রামে উন্নয়ন করেছেন, তারই প্রতিদান দিয়েছেন মানুষ।’’

স্থানীয় বাসিন্দারাও এ বিষয়ে একমত। কাটাখালি নদীর উপরে বনবিবি সেতু হয়েছে। এখন অনায়াসেই মানুষ হিঙ্গলগঞ্জ থেকে সরাসরি কলকাতায় যেতে পারেন। সন্ধ্যার পরে কিংবা বর্ষাকালে নৌকো চলতে ভয় লাগত। এ ক্ষেত্রে মানুষের যাতায়াতে অসুবিধা হত। কিন্তু এখন নদীতে বার্জ চালু হয়েছে। এক নিত্য যাত্রী বলেন, ‘‘আগে সন্ধ্যার পরে নদী পথে যাতায়াত করতে ভয় লাগত। এখন বার্জ শুরু হওয়ার সুবিধা হয়েছে।’’ এক কলেজ ছাত্রের কথায়, ‘‘বার্জ শুরু হওয়ায় কলেজে পুরো ক্লাস করেই বাড়ি ফিরতে পারি। মাঝপথে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসতে হয় না।’’ সন্দেশখালিতে বেশ কিছু কংক্রিটের রাস্তা তৈরি করেছে তৃণমূল। যাতে মানুষ খুশি। রাস্তায় আলো দেওয়া হয়েছে। বসিরহাটে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল নিয়েও খুশি মানুষ। তৈরি হয়েছে একাধিক পার্ক, নদীর পাড় বাঁধানো হয়েছে। আরও হাজারটা উন্নয়নের ফিরিস্তি ঘুরছে তৃণমূল নেতৃত্বের মুখে মুখে।

সংখ্যালঘু মহিলা প্রার্থীকে এই কেন্দ্র থেকে দাঁড় করিয়েও দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মাস্টারস্ট্রোক খেলেছিলেন বলে মনে করছেন দলের স্থানীয় নেতারা। তবে ভয়ও ছিল। একদিকে অভিনেত্রী হিসাবে নুসরতের জনপ্রিয়তা যেমন বাড়তি সুবিধা দিতে পারত, তেমনই রক্ষণশীল সংখ্যালঘু পরিবার অভিনেত্রী প্রার্থীকে কতটা গ্রহণ করবে, সেই আশঙ্কাও ছিল। কিন্তু প্রচারে নিজেকে ‘ঘরের মেয়ে’ হিসাবে তুলে ধরতে পেরেছিলেন নুসরত, মনে করছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতারা।

বাইরে থেকে প্রার্থী আনার ফলে দলের অন্দরের গোষ্ঠীকোন্দলকেও ধামাচাপা দেওয়া গিয়েছি বলে মনে করছেন তাঁরা। এই কেন্দ্রে গতবার প্রার্থী হয়ে ঘাসফুলের টিকিটে জয়ী হন ইদ্রিশ আলি। তাঁকে এ বার বসিরহাট কেন্দ্রে টিকিট দেয়নি দল। ইদ্রিশ অনুগামীরা শেষমেশ প্রচারে নামবেন কিনা, তা নিয়ে সংশয় ছিল দলের অন্দরেই। তবে শেষমেশ সেই পরিস্থিতি এড়ানো গিয়েছে। বসিরহাট কেন্দ্রে তৃণমূলের আহ্বায়ক ফিরোজ কামাল গাজি বলেন, ‘‘দলের সব অংশকেই আমরা প্রচারে পাশে পেয়েছি। যে কারণে জোরদার ভাবে উন্নয়নের কথা তুলে ধরতে পেরেছি।’’

এক সময়ে বসিরহাট দক্ষিণের বিধায়ক ছিলেন বিজেপির শমীক ভট্টাচার্য। এই এলাকায় বিজেপির তেমন সংগঠন না থাকলেও প্রভাব আছে কিছু। তবে বাইরে থেকে আসা প্রার্থী সায়ন্তন বসুকে দলের একাংশ শুরুতে গ্রহণ করতে দ্বিধায় ছিলেন বলে জানাচ্ছে দলেরই একটি অংশ। ফলে শুরুতে প্রচারে কিছুটা ঘাটতি থেকে গিয়েছে। সায়ন্তনের বিরুদ্ধে দলের একটি অংশ আরও নানা কারণে বিরক্ত ছিলেন। কেন্দ্রীয় বাহিনীকে প্রয়োজনে ভোট লুট করতে আসা দুষ্কৃতীদের বুক লক্ষ্য করে গুলি চালানোর ‘পরামর্শ’ দিয়ে বিতর্ক বাড়ান তিনি। মহিলাদের দা-বঁটি নিয়ে রুখে দাঁড়ানোর কথাও বলেন তিনি।

বিজেপি নেতা তপন দেবনাথ বলেন, ‘‘দু’মাস ধরে আমরা পরিশ্রম করেছি। গ্রামে গিয়ে মানুষের সমর্থন পেয়েছিলাম। দেশ এবং রাজ্যের দলের আসন বৃদ্ধিতে আমরা খুব আনন্দিত। কিন্তু বসিরহাটের ফল আমাদের নিরাশ করেছে। যে ভাবে মানুষ আমাদের সমর্থন জানিয়েছিল কার্যত ইভিএমে তার প্রকাশ পায়নি।’’

সংখ্যালঘু ভোটের একটা বড় অংশ এ বার কংগ্রেস প্রার্থী আব্দুর রহিম দিলু পেতে পারেন বলে আশা ছিল কংগ্রেসের। বাদুড়িয়ার ভূমিপুত্র দিলুর পারিবারিক রাজনৈতিক পরিচয় তাঁর অনুকূলে যাবে বলে ধরে নিয়েছিল কংগ্রেস শিবির। তবে বিরাট ছাপ ফেলতে পারেননি দিলু।

একই অবস্থা বাম শিবিরের। সিপিআই প্রার্থী পল্লব সেনগুপ্ত তাত্ত্বিক নেতা হিসাবে যতটা পরিচিত, রাজনৈতিক সংগঠক হিসাবে ততটা দক্ষ নন বলে দলের একাংশের মত। প্রচারে গা ঘামালেও বাম শিবিরের একটা বড় অংশ এ বার তৃণমূলকেই ভোট দিয়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা।

এক বাম নেতার কথায়, ‘‘গ্রামে গ্রামে যে ভাবে সন্ত্রাস চালাচ্ছে তৃণমূল, তার হাত থেকে পরিত্রাণ পেতে লোকে বিজেপিকে ভরসা করেছিল। ফলে আমাদের ভোট কমেছে। তবে বিজেপি প্রার্থীও জয়ী হতে পারেননি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE