Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ঘোড়ামারায় ভাঙন নিয়ে চিন্তিত মানুষ

গত চার দশক ধরে মুড়িগঙ্গার মাঝখানে সাগর ব্লকের অধীনে এই বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ক্রমাগত ভাঙনের মুখে। সব থেকে বেশি ভাঙন হয়েছে দক্ষিণ-পূর্বে চুনপুরি এবং তার ঠিক পাশেই হাটখোলা এলাকায়।

বিপজ্জনক: তলিয়ে যাচ্ছে জমি। কাজে আসছে না রিং-বাঁধ। নিজস্ব চিত্র

বিপজ্জনক: তলিয়ে যাচ্ছে জমি। কাজে আসছে না রিং-বাঁধ। নিজস্ব চিত্র

শান্তশ্রী মজুমদার
সাগর শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৮ ০০:৪৭
Share: Save:

দশ বছর আগেও প্রায় ৬ হাজার বিঘে জমি ছিল ঘোড়ামারা দ্বীপে। কিন্তু মুড়িগঙ্গার জোয়ারভাটার কারণে ভাঙতে ভাঙতে তা এসে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার বিঘের কাছাকাছি। স্বাভাবিক ভাবেই চিন্তায় মানুষজন।

গত চার দশক ধরে মুড়িগঙ্গার মাঝখানে সাগর ব্লকের অধীনে এই বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ক্রমাগত ভাঙনের মুখে। সব থেকে বেশি ভাঙন হয়েছে দক্ষিণ-পূর্বে চুনপুরি এবং তার ঠিক পাশেই হাটখোলা এলাকায়।

গঙ্গাসাগরে বেড়াতে এসে ঘোড়ামারার ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রীও। যাওয়ার পথে জলযান থামিয়ে ঘোড়ামারার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন তিনি। সচিবদের সঙ্গে আলোচনাও করেন। কিন্তু তিন মাস পরেও সেখানে বড় কোনও প্রকল্পের কাজ শুরু করতে পারেনি সেচ দফতর। তবে দফতরের কর্তারা আশ্বাস দিয়েছেন, অবিলম্বে ঘোড়ামারায় বড় প্রকল্প হাতে নিচ্ছে রাজ্য সরকার।

ঘোড়ামারার পঞ্চায়েতের প্রধান সঞ্জীব সাগর বলেন, ‘‘অবিলম্বে বড়সড় স্থায়ী কাজের প্রয়োজন। প্রতিটি কোটালে মাটি ধসে যাচ্ছে। চুনপুরিতে ২০০ পরিবার এখন থেকেই পুনর্বাসনের দাবি তুলতে শুরু করেছে।’’ ওই দ্বীপের উত্তরে খাসিমারা এবং দক্ষিণে লোহাচড়া দ্বীপ এ রকম ভাঙনেই নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। দ্বীপটি বাঁচাতে প্রায় দু’কিলোমিটার এলাকায় শক্ত এবং স্থায়ী বাঁধ তৈরির প্রয়োজন। প্রতিনিয়ত ভাঙনে একাধিকবার রিং-বাঁধ দেওয়ার চেষ্টা করে পঞ্চায়েতও। সেগুলি সবই ভেঙে যাচ্ছে। স্থায়ী কাজ না হলে বিপদে পড়বেন দ্বীপের প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ।

গত বছরও সাড়ে তিনশো মিটার এলাকায় চুনপুরিতে একটি বাঁধ তৈরি করেছিল সেচ দফতর। তার প্রায় বেশির ভাগটাই চলে গিয়েছে নদীগর্ভে। সেচ দফতরের কর্তারা দাবি করেন, এ বারও প্রায় চারশো মিটার এলাকায় স্থায়ী পাথরের বড় বড় খণ্ড দিয়ে পাড় বেঁধে বাঁধ তৈরি করার কাজ চলছে। এ রকম বাঁধ আগেও তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু কোনও কাজই প্রায় স্থায়ী হচ্ছে না। চাষের জমি পুকুর একটু করে চলে যাচ্ছে নোনা জলে। সাগরের বিধায়ক বঙ্কিম হাজরার বিধায়ক এলাকা উন্নয়ন তহবিল থেকে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সব টাকাই জলে চলে যাচ্ছে বছর বছর, এমনটাই দাবি এলাকাবাসীর।

ঘোড়ামারার পশ্চিম দিকে হুগলি নদীর বাণিজ্যিক করিডোর। সেখান দিয়ে বড় বড় জাহাজ খিদিরপুরের দিকে আসে। ঘোড়ামারার পশ্চিমপাড় ভেঙে পলি জমছিল নদীর মূল স্রোতে। প্রায় বছর পাঁচেক আগে কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের তরফে স্থায়ী কাজ করার পর থেকে আর পশ্চিম দিকে ভাঙন একেবারেই হয়নি। এলাকাবাসী সে রকমই কোনও স্থায়ী কাজ চাইছেন। কাকদ্বীপ মহকুমার সেচ কার্যনির্বাহী বাস্তুকার নমিত সাহা বলেন, ‘‘আমরা জরুরি মেরামতির কাজগুলি নিয়মিত ভাবে করছি। কিছু জায়গায় বড় পাথর খণ্ড বেঁধেই কাজ হচ্ছে।’’

সেচ দফতর সূত্রের খবর, দু’সপ্তাহ আগে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে ঠিক হয়েছে, ঘোড়ামারার ভাঙনের স্থায়ী সমাধানের জন্য কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের সঙ্গে সেচ দফতরের পদস্থ কর্তারা শীঘ্রই যৌথ উদ্যোগী হবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE