Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ব্যারাকপুরে ফের দুর্ঘটনা, বাসে পিষ্ট শিশু

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অনু দেবপুকুরেরই বাসিন্দা। স্থানীয় একটি স্কুলের প্রাথমিক বিভাগে পড়ত সে।

অনু দাস।

অনু দাস।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৮ ০৩:৪৮
Share: Save:

আবার সেই বাস। আবার সেই প্রাণহানি। এবং ঘটনাস্থল, আবারও সেই ব্যারাকপুর।

দিন ছয়েক আগে মেয়েকে স্কুলে দিতে গিয়ে প্রাণ গিয়েছিল মায়ের। বৃহস্পতিবার স্কুলে যাওয়ার পথে প্রাণ গেল চার বছরের এক শিশুকন্যার। আগের ঘটনাটি ঘটেছিল চিড়িয়ামোড়ে। এ বার ঘটল বারাসত-ব্যারাকপুর রোডের দেবপুকুরে।

পুলিশ জানিয়েছে, বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে মৃত শিশুটির নাম অনু দাস। তার মা মণিমালা দাস সামান্য চোট পেয়েছেন। ওই দুর্ঘটনার পরে উত্তেজিত জনতা ঘাতক বাসটিতে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। মারধর করা হয় চালককে। এলাকার বাসিন্দারা রাস্তা অবরোধ করেন। পুলিশ এসে বিক্ষোভের মুখে পড়ে। বাসের চালককে গ্রেফতার করেছে টিটাগড় থানার পুলিশ। একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে শোকে বিহ্বল অনুর পরিবার।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অনু দেবপুকুরেরই বাসিন্দা। স্থানীয় একটি স্কুলের প্রাথমিক বিভাগে পড়ত সে। তার বাবা অজয় দাস মাছ ব্যবসায়ী। এ দিন স্কুলে অঙ্ক পরীক্ষা ছিল অনুর।

আত্মীয়েরা জানান, পরীক্ষার জন্য এ দিন কিছুটা আগেই বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন মণিমালা। সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ তাঁরা সাইকেলে করে শিউলি পঞ্চায়েত অফিসের সামনে পৌঁছন। সাইকেলের পিছনে ক্যারিয়ারে বসে ছিল অনু। সেই সময়ে বারাসত-কমলপুর রুটের একটি বাস ব্যারাকপুরের দিকে যাচ্ছিল।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মণিমালা যখন রাস্তা পার হচ্ছিলেন, সেই সময়ে বাসটি দ্রুত কাছে চলে আসে। হকচকিয়ে যাওয়ায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সাইকেল-সহ মেয়েকে নিয়ে রাস্তার ধারে পড়ে যান তিনি। মণিমালা পড়েন সাইকেল নিয়ে রাস্তার বাঁ দিকে মাটির উপরে। অনু পড়ে রাস্তার উপরেই। তত ক্ষণে বাসটি তাদের সামনে এসে পড়ায় চাকার নীচে চলে যায় অনু। পিছনের চাকা পিষে দেয় খুদে পড়ুয়াটিকে। চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে বাস থামিয়ে দেয় চালক।

এলাকার লোকজন সঙ্গে সঙ্গেই মা-মেয়েকে বি এন বসু হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানেই অনুকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয় মণিমালাকে।

দুর্ঘটনার পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের রাগ গিয়ে পড়ে ঘাতক বাস ও তার চালক শ্যামল মান্নার উপরে। শুরু হয় বাসে ভাঙচুর। বসার আসন থেকে দরজা-জানলা, অনেক কিছুই গুঁড়িয়ে দেয় জনতা। চালক শ্যামল পালানোর চেষ্টা করলে তাঁকে ধরে ফেলে বেধড়ক মারধর করা হয়। তারই মধ্যে অনেকে রাস্তার উপরে বসে পড়েন। অবরোধের জেরে রাস্তার দু’দিকে বিশাল যানজট তৈরি হয়।

খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাঁদের দাবি, ওই রাস্তায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। বারবার পুলিশকে জানানোর পরেও সেখানে ট্র্যাফিক পুলিশ দেওয়া হয়নি। সেই ব্যবস্থা করার আগে তাঁরা অবরোধ তুলবেন না বলেও হুঁশিয়ারি দেন। পুলিশকর্মীরা আটকে রয়েছেন জানতে পেরে টিটাগ়ড় থানা থেকে বিশাল বাহিনী আসে। নামানো হয় র‌্যাফ। তারা অবরোধকারীদের তুলে দেয়।

মণিমালা বলেন, ‘‘পরীক্ষা ছিল বলে মেয়েটা আমাকে সকাল থেকে তাড়া দিচ্ছিল। চোখের সামনে ও চলে গেল।’’ যাঁকে সামনে পাচ্ছেন, তাঁকেই তিনি বলছেন, ‘‘মেয়েটাকে
বাঁচাতে পারলাম না! আমি কেন যে বেঁচে রইলাম!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Road Accident Barrackpur Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE