Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

ভবন সংস্কার, ঠাঁইনাড়া হওয়ার আতঙ্কে মেয়েরা

মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, হোমটি বন্ধ রাখার বিষয়ে এ দিন হোম চত্বরেই অভিভাবকদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছিল। সেখানে ছিলেন বসিরহাটের মহকুমাশাসক সুপ্রিয় দাস-সহ, বিডিও মধুমিতা ঘোষ, হোমের সুপার সর্বাণী বর্মন-সহ অনেকে।

চোখের-জলে: কান্নায় ভেঙে পড়েছে আবাসিকেরা। ছবি: নির্মল বসু

চোখের-জলে: কান্নায় ভেঙে পড়েছে আবাসিকেরা। ছবি: নির্মল বসু

নিজস্ব সংবাদদাতা
বসিরহাট শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৮ ০২:২৫
Share: Save:

হোমের মেয়েদের সরাতে এসে চোখের জল আর ঘেরাও-বিক্ষোভের মুখে পড়ে ফিরতে হল সরকারি আধিকারিকদের।

শুক্রবার দুপুরে এই ঘটনায় উত্তেজনা ছড়ায় বসিরহাটের ধান্যকুড়িয়া বালিকা রাষ্ট্রীয় কল্যাণ আলয়ে। ধান্যকুড়িয়ায় গাইন জমিদারদের প্রায় ২৭ বিঘা জমির উপরে বিশাল বাড়ি। ১৯৪৮ সালে ওই বাড়িতে অনাথ ও দুঃস্থ পরিবারের মেয়েদের হোম শুরু হয়। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুল চলে। নবম-দশম শ্রেণির মেয়েরা অন্য স্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেয়। সেখানে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ৯০ জন মেয়েকে পড়ানোর দায়িত্বে আছেন ১৪ জন শিক্ষিকা।

কয়েক বছর ধরে গাইন পরিবারের পক্ষে জমিটি জেলা পরিষদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ওই জমির একাংশে ‘কর্মতীর্থ’ তৈরি হচ্ছে। ‘গাইন গার্ডেন’ পর্যটন কেন্দ্র হবে বলে মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে। বাড়ি মেরামতির জন্য হোমের ছাত্রীদের সরানোর কথা বলা হলেও কোথায় নিয়ে যাওয়া হবে, কবে তারা হোমে ফিরতে পারবে, সে বিষয়ে আধিকারিকেরা নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে চাননি। তাতে বিক্ষোভ বাড়ে।

মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, হোমটি বন্ধ রাখার বিষয়ে এ দিন হোম চত্বরেই অভিভাবকদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছিল। সেখানে ছিলেন বসিরহাটের মহকুমাশাসক সুপ্রিয় দাস-সহ, বিডিও মধুমিতা ঘোষ, হোমের সুপার সর্বাণী বর্মন-সহ অনেকে। ছিলেন শিক্ষিকা, অভিভাবক, ছাত্রীরাও। জমিদার বাড়ি মেরামতির জন্য ছাত্রীদের অন্য হোমে স্থানান্তরিত করার কথা হয়েছিল সেখানে। সেই মর্মে কাগজে সই করতে বললে ক্ষোভে ফেটে পড়েন ছাত্রী-অভিভাবকেরা। তাঁদের বক্তব্য, ভবন সংস্কারের নাম করে অন্যত্র সরিয়ে দেওয়ার ফন্দি আঁটা হচ্ছে। ছাত্রীদের বড় অংশ বাইরে বেরিয়ে হোম ছাড়ব না বলে দফায় দফায় বিক্ষোভ শুরু করে।

এখানেই চলে হোম। ছবি: নির্মল বসু

অভিযোগ, সাংবাদিকদের কাজে অসযোগিতা করেছিলেন এক সরকারি আধিকারিক। পুলিশ ডেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন বলেও অভিযোগ। তাতে অভিভাবক এবং ছাত্রীরা আরও ক্ষোভে ফেটে পড়ে। বৈঠকও ভেস্তে যায়। ফের আলোচনায় বসা হবে বলে জানিয়ে গিয়েছেন সরকারি আধিকারিকেরা।

অভিভাবকদের তরফে সোহারফ গাজি, জয়ন্তী সর্দার, কওসার আলিরা বলেন, ‘‘এখানে পর্যটনকেন্দ্র করা হবে বলে গরিব, দুঃস্থ মেয়েদের কথা না ভেবে হোমটি বন্ধ করে দেওয়ার চক্রান্ত শুরু হয়েছে। আমাদের দাবি, জমিদার বাড়ি সংস্কার করার হলে পাশের জায়গায় ঘর করে ছাত্রীদের রাখা হোক।’’

সরে যেতে হবে শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েছিল দশম শ্রেণির ছাত্রী সহেলি বিশ্বাস, কমলা হাজরা। তাদের কথায়, ‘‘ছোট থেকে এখানে আছি। আমরা অত্যন্ত অসহায়। কেউ নেই। মাধ্যমিক পরীক্ষার আগে অন্যত্র গেলে পড়াশোনাও ঠিক মতো হবে না।’’

আবাসিকদের কোথায় সরানোর কথা তাঁরা ভাবছেন, তা নিয়ে মহকুমাশাসক জানান, বারাসত, ব্যারাকপুর ও বসিরহাটের হোমে এই মেয়েদের পাঠানোর কথা। কিন্তু কোন কোন হোমে পাঠানো হবে তাদের, তা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে সদুত্তর মেলেনি। ভবন সংস্কারের পরে মেয়েদের আবার ফিরিয়ে আনা হবে কিনা, মেলেনি তারও উত্তর।

বিডিও মধুমিতা ঘোষ বলেন, ‘‘জমিদার বাড়িটির অবস্থা আশঙ্কাজনক। প্রায়ই চাঙড় খসে পড়ছে। মেয়েদের এখানে ফিরিয়ে আনা হবে কিনা, সেটা
সরকারের বিষয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Basirhat Home Girls Student Agitation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE