গোলাপি খাতুন
ইচ্ছা থাকলে যে কঠিন পরিস্থিতিও জয় করা যায়—তার নজির গড়ল উস্তির কেয়াকানা গ্রামের অ্যাসিডে আক্রান্ত গোলাপি খাতুন। মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে সে এ বার দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছে।
মাধ্যমিক পরীক্ষার ঠিক সতেরো দিন আগে উস্তির কারবালা বাজারে ওই ছাত্রীর উপর অ্যাসিড ছুড়ে চম্পট দেয় এক দুষ্কৃতী। তার মুখের ডান দিক ঝলসে যায়। ওই দিনই তাকে ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। প্রায় ৮দিন পর হাসপাতাল থেকে সে ছুটি পায়।
তার অবস্থা দেখে বাড়ি থেকে এ বছর পরীক্ষা দিতে তাকে বারণ করা হয়েছিল। কিন্তু মনের জোরে সব প্রতিবন্ধকতাকে কাটিয়ে পরীক্ষায় বসেছিল গোলাপি। এখন সে পড়তে চায়। গোলাপি জানায়, পরীক্ষা দিতে খুব কষ্ট হয়েছে তার। তবু সে পিছু পা হয়নি। রাতে লাইটের আলোয় চোখ জ্বালা করত। চোখ থেকে অনবরত জলও ঝরত। সে কারণে বেশির ভাগ পড়াশোনাই তাকে দিনের বেলায় করতে হয়েছে। রাতে পড়াটা এড়িয়েই চলত সে। তাঁর কথায়, ‘‘কষ্ট হয়েছে খুব। কিন্তু তবু মনে জোর ছিল যে, পরীক্ষা দেবই। পড়াশোনা করে শিক্ষিকা হতে চাই।’’ গোলাপি পাশ করায় খুশি তার উত্তর কুসুম হাইস্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকা থেকে সহপাঠীরাও।
চার ভাই বোনের মধ্যে ছোট গোলাপি। বাবা দিনমজুর মতিয়ার রহমান বলেন, ‘‘মাধ্যমিক পাশ করাটা ওর শুধু একার গর্ব নয়। পরিবারের গর্ব। খুব কষ্ট করেই পরীক্ষা দিয়েছে গোলাপি।’’
তবে এত আনন্দের মধ্যেও কালো মেঘ রয়েছে। ওই ছাত্রীর উপরে অ্যাসিড হামলার পর কেটে গিয়েছে কয়েক মাস। কিন্তু আজও অধরা মূল অভিযুক্ত প্রতিবেশী যুবক হাফিজুল লস্কর। ঘটনার পর পুলিশ তার বাবাকে গ্রেফতার করতে পারলেও হাফিজুল এখনও ফেরার। ওই ছাত্রীর মা আসমিরা বিবির আক্ষেপ, ‘‘মেয়েটি আমার পরিবারের মুখ রাখল। কিন্তু তার সাফল্যের হাসি মুখটা আর নেই। এখনও ক্ষতের দাগ রয়ে গিয়েছে। যা সব হাসির মাঝেও জ্বলজ্বল করছে।
গ্রামবাসী থেকে গোলাপির বাড়ির লোক এবং সহপাঠীরা প্রত্যেকেই চান, ওই যুবকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy