জমেছে-জল: ল্যারিকার ভিতরে। নিজস্ব চিত্র
শুধু পৌষসংক্রান্তির মেলা নয়, সারা বছরই গঙ্গাসাগরে পর্যটকের ভিড় বাড়ুক, চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাতে সরকারের আয় বাড়বে। কিন্তু পর্যটকদের থাকার এখনও সুব্যবস্থাই নেই সাগরে। এমনকী, একমাত্র সরকারি হোটেল ল্যারিকাও রীতিমতো ধুঁকছে।
বছর পনেরো বন্ধ থাকার পরে চালু হয়েছে ল্যারিকা। গত কয়েক বছর ধরে পরিকাঠামো অবশ্য বেহাল। সংস্কারের জন্য প্রায় ১৭ কোটি টাকার তহবিল প্রয়োজন। পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের কাছে একটি সংস্কার প্রকল্পের রিপোর্ট তুলে দিয়ে আর্থিক সাহায্যের আবেদন করেছে গঙ্গাসাগর-বকখালি উন্নয়ন পর্ষদ (জিবিডিএ)।
প্রশাসন সূত্রের খবর, ব্যবস্থাপনার অভাবেই বন্ধ ছিল গঙ্গাসাগরে পর্যটন দফতরের হোটেল ল্যারিকা। কপিলমুনির আশ্রম থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে মেলার সময়ে সরকারি কাজেই ব্যবহার হত সেটি। তারপর আবার বন্ধ পড়ে থাকত সেটি। হোটেলটি পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন উন্নয়ন নিগম ২০১৫ সালে জিবিডি-র হাতে তুলে দেয়। ‘গঙ্গাসাগর ট্যুরিস্ট লজ’ নাম দিয়ে নতুন করে চালু হয় সেটি। শুরুতে বাৎসরিক ৭ লক্ষ টাকার চুক্তি থাকলেও প্রতি বছর সেই টাকা ১০ শতাংশ হারে বাড়ছে। সেই তুলনায় পর্যটক থাকছেন না হোটেলে। অথচ গঙ্গাসাগরে এখন সারা বছরই পর্যটকেরা আসেন। ভাল হোটেলের অভাবে তাঁরা বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার আশ্রমে থাকেন।
প্রবেশ-পথ: হোটেলের। সাগরে। নিজস্ব চিত্র
কেন এই অবস্থা?
তিনতলার হোটেলটির নীচের তলায় ডরমেটরি রয়েছে। পুরো বাড়িটি ক্রমাগত মাটিতে বসে যাচ্ছে। নীচতলার বারান্দায় জল জমে। প্লাস্টার খসে পড়ছে। ডরমেটরিতে থাকতে পারেন না পর্যটকেরা। দোতলা এবং তিনতলার কয়েকটি ঘর ব্যবহার করা যায়। তবে ঘোর বর্ষায় তিনতলার কয়েকটি ঘরের এখান ওখান দিয়েও জল পড়ে। লোকবলের অভাবে সেখানে রান্না করা খাবারের পরিষেবাও পর্যটকদের দেওয়া যায় না। বিভিন্ন জায়গায় নিকাশি পাইপ ফেটে গিয়েছে। ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্তরা কেউ কেউ জানিয়েছেন, গঙ্গাসাগরে বেড়াতে এসে পর্যটকেরা এখানে থাকতেই চাইছেন না। হোটেলটি নতুন করে চালু করার সময়ে জিবিডি-র তরফে বেশ কিছু পরিকাঠামোগত সংস্কার করা হয়েছিল। চারজন কর্মীও নিয়োগ হয়েছিল। কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। মেলার সময় তা-ও কিছু পর্যটক এই হোটেলে দেখা যায়। বাকি সময় খালিই পড়ে থাকে।
জিবিডি-র চেয়ারম্যান তথা সাগরের বিধায়ক বঙ্কিম হাজরা বলেন, ‘‘হোটেলটির আরও সংস্কার প্রয়োজন। তাই আমরা এইচআরবিসিকে দিয়ে একটি সংস্কার প্রকল্প রিপোর্ট তৈরি করেছি। কিন্তু সেই বিশাল অঙ্কের খরচ আমাদের পক্ষে বহন করা অসম্ভব বলে নগরোন্নয়ন দফতরের সাহায্য চাওয়া হয়েছে।’’ সম্প্রতি সাগরে এসেছিলেন পুর ও নগরোন্ননমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তাঁর কাছে সংস্কার প্রকল্পের রিপোর্ট তুলে দেওয়া হয়েছে।
জানা গিয়েছে, হোটেল বাড়িটি সংস্কারের পাশাপাশি চারদিকে দেওয়াল প্রয়োজন। আয় বাড়ানোর জন্য খাবারের বিভাগ চালু করতে আরও কর্মী নিয়োগ করতে হবে। ভাল আলোকসজ্জা এবং হোটেলের উঠোনে ফোয়ারার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন বলে প্রকল্প রিপোর্টে উল্লেখ করেছে এইচআরবিসি। পুরমন্ত্রী ওই হোটেলটি নিয়ে সরাসরি আর্থিক সাহায্যের আশ্বাস না দিলেও বলেন, ‘‘জন্মলগ্ন থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৯২ কোটি টাকা জিবিডিএকে গঙ্গাসাগর এবং বকখালির উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন প্রকল্পে দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতেও পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের সাহায্য পাবে জিবিডিএ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy