Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
আগুন লাগলে বেরোনোর পথ খুঁজে পাওয়া মুশকিল

একাধিক অগ্নিকাণ্ডের সাক্ষী হাবড়া হাসপাতাল

নীচ থেকে উপরে মেডিসিন স্টোরে যাওয়ার র‌্যাম্পের দু’পাশ জুড়ে ফেলে রাখা রয়েছে কাঠের বাক্স, প্লাস্টিক, ভাঙা শয্যা ও নানা আসবাবপত্র। কোনও কারণে আগুন লাগলে ওই পথ দিয়ে দ্রুত রোগীদের বের করে আনা অসম্ভব।

বিপজ্জনক: হাসপাতালের মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে দাহ্য পদার্থ। ছবি: সুজিত দুয়ারি

বিপজ্জনক: হাসপাতালের মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে দাহ্য পদার্থ। ছবি: সুজিত দুয়ারি

সীমান্ত মৈত্র
হাবড়া শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৮ ০২:২৯
Share: Save:

২০১৪ সালের ঘটনাটা স্পষ্ট মনে করতে পারেন অশোকনগরের কয়াডাঙার যুবক। হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে তখন চিকিৎসাধীন তিনি। দুর্বল শরীরে রাতে একটু তাড়াতাড়়িই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। রোগী ও অন্য আয়াদের চিৎকারে ঘুম ভেঙে দেখেন, চার দিক ধোঁয়ায় ভরে গিয়েছে। সকলে হুড়়োহুড়ি করে বাইরে বেরোতে চাইছেন। কিন্তু তাঁর তো স্যালাইন চলছে। দ্রুত হাতে আয়া খুলে দেন স্যালাইনের চ্যানেল। যুবকের কথায়, ‘‘সে বার অল্পের জন্য বেঁচেছিলাম।’’ স্থানীয় সূত্রে পরে জানা যায়, হুড়োহুড়ির মধ্যে অনেক রোগী হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁরা আর ভয়ে ফেরেননি। অন্য হাসপাতালে ভর্তি হন।

এসি মেশিন থেকে আগুন ছড়িয়েছিল সে বার। হাবড়া স্টেট জেনারেলে আগুন লাগার ঘটনা তারপরেও ঘটেছে। কয়েক মাস আগের কথা। বিদ্যুতের লাইন থেকে প্রসূতি বিভাগে আগুন ধরে যায়।

বার বার একই কাণ্ড ঘটলেও কতটা সতর্ক হয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ? কলকাতায় মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের পরে সেই একই পরিস্থিতি ঘুরে দেখা গেল।

নীচ থেকে উপরে মেডিসিন স্টোরে যাওয়ার র‌্যাম্পের দু’পাশ জুড়ে ফেলে রাখা রয়েছে কাঠের বাক্স, প্লাস্টিক, ভাঙা শয্যা ও নানা আসবাবপত্র। কোনও কারণে আগুন লাগলে ওই পথ দিয়ে দ্রুত রোগীদের বের করে আনা অসম্ভব। মিটিং রুমে আছে কাগজের বাক্স, শয্যা ও জাজিম। ইসিজি-সহ কয়েটি ওয়ার্ডে যাওয়ার বারান্দায় বিপজ্জনক ভাবে ফেলে রাখা রয়েছে প্লাস্টিকের পুঁটলি।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, সব থেকে বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে রেকর্ড রুম। সেখানে কাগজের নথিপত্র লাট করে রাখা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক হাসপাতাল কর্মী জানালেন, ওই ঘরে ভেন্টিলেশনের অভাব আছে। যে কোনও সময়ে আগুন লাগার আশঙ্কা আছে। সামান্য একটা ফুলকি থেকেও বড়সড় বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে।

হাসপাতাল সূত্রের খবর, বেশির ভাগ ওয়ার্ডে জরুরি অবস্থায় বেরনোর পথ নেই। প্রতিটি ওয়ার্ডে দু’টি করে ‘ইমারজেন্সি এক্সিট’ থাকার কথা। তা এখানে নেই। ওয়ার্ডে ঢোকার মুখে কোথাও চোখে পড়ল না অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র নেই। আগুন লাগলে প্রাথমিক ভাবে যা কাজে লাগে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, এখন হাসপাতালে ২৩টি অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র আছে। যা চাইল্ড ওয়ার্ডে রাখা আছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, ২০১৪ সালের ঘটনার পরে হাসপাতালে বসানো হয়েছে স্মোকিং অ্যালার্ম। হাসপাতালের কোনও ঘরে আগুন লাগলে বা ধোঁয়া দেখা দিলেই অ্যালাম বেজে উঠবে। কয়েক মাস আগে প্রসূতি বিভাগে আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে অ্যালাম বেজে উঠেছিল। ফলে দ্রুত আগুন নেভানো সম্ভব হয়েছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি।

কিন্তু হাসপাতালে এখনও স্থায়ী ভাবে জল ধরে রাখার ব্যবস্থা তৈরি করা যায়নি। হাসপাতাল চত্বরে জলের ব্যবস্থা যাতে আগুন লাগলে দ্রুত পাইপের মাধ্যমে জল এনে আগুন নেভানো যায়। হাসপাতালের সুপার শঙ্করলাল ঘোষ বলেন, ‘‘জল ধরে রাখার জন্য হাসপাতালে একটি বড় রিজার্ভার তৈরির কাজ চলছে। সেখান থেকে পাইপ লাইন সরাসরি ওয়ার্ডের সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে। প্রাথমিক ভাবে আগুন নেভানোর জন্য হাসপাতালে রয়েছেন প্রশিক্ষিত কর্মীরা। দমকল বিভাগের তরফে তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।’’ তিনি জানান, অন্য অসুবিধাগুলিও সমাধান করা হচ্ছে।

তবে হাসপাতালের এসি মেশিনগুলি সব নতুন। প্রতি মাসে সেগুলি পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করা হচ্ছে বলে দাবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। ওষুধ রাখার স্টোরের ফ্রিজারটিও নতুন। নতুন করে বিদ্যুতের ‘ওয়্যারিং’ করানো হয়েছে।

তবে বড়সড় আগুন লাগলে হাবড়া শহরের যানজট পেরিয়ে দমকলের গাড়ি আসবে সামান্য পথ পেরোতেও কত সময় লাগাতে পারে, সেই আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Habra Hospital Fire Dangerous
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE