প্রতিবাদে মিছিল করেছিলেন গোবরডাঙাবাসী। ফাইল চিত্র
হাসপাতাল চালু না হওয়ার কারণেই গোবরডাঙা থেকে বিজেপি লিড পেল বলে মনে করছে স্থানীয় মানুষ।
এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি, কার্যত বন্ধ থাকা হাসপাতালটি ফের পূর্ণাঙ্গ রূপে চালু করা হোক। কিন্তু আজও তা বাস্তবায়িত হল না। এতে ক্ষিপ্ত গোবরডাঙার মানুষ। সেই ক্ষোভের আঁচ পাওয়া গেল এ বারের লোকসভা ভোটে।
বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত গোবরডাঙা পুর এলাকাটি তৃণমূলের শক্তিশালী ঘাঁটি হিসাবেই পরিচিত। কিন্তু এ বারের লোকসভা ভোটের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে এখানে তৃণমূলের ভরাডুবি হয়েছে। গোবরডাঙা পুরসভার ১৭টি আসনের মধ্যে বিজেপি প্রার্থী শান্তনু ঠাকুর লিড পেয়েছেন ১৫টি আসনে। শুধুমাত্র ৫ এবং ৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে লিড পেয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী মমতা ঠাকুর। বনগাঁ লোকসভা ভোট পরিচালনার জন্য এ বার জেলা তৃণমূলের তরফে মুখ্য কার্যালয় করা হয়েছিল গোবরডাঙাতেই। জেলা নেতৃত্বের আনাগোনা ছিল প্রতি মুহূর্তে। তারপরও পরাজয় ঠেকানো যায়নি।
গত পুরসভা ভোটে তৃণমূল ১৩টি আসনে জয়ী হয়ে পুরসভার ক্ষমতা দখল করেছিল। পরে দু’জন নির্দলের কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ দিলে তাঁদের আসন সংখ্যা হয় ১৫টি। বাকি দু’টি বামেদের।
তৃণমূল নেতাদেরও মনে হচ্ছে, গোবরডাঙা গ্রামীণ হাসপাতালটি পূর্ণাঙ্গরূপে চালু না হওয়া নিয়ে মানুষের ক্ষোভের একটা প্রভাব এ বার ভোট বাক্সে পড়েছে। গোবরডাঙা শহরের এক তৃণমূল নেতার কথায়, ‘‘এ বারের ভোটের প্রচারে হাসপাতালের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। এলাকার উন্নয়ন নিয়ে বহু মানুষ সন্তুষ্ট। তবে তাঁরা হাসপাতালটি চালু না হওয়া নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন।’’
তবে তৃণমূলের কিছু নেতা আবার এ কথা মানতে নারাজ। গোবরডাঙা শহর তৃণমূল সভাপতি শঙ্কর দত্ত বলেন, ‘‘বামেদের ও মতুয়াদের বেশির ভাগ ভোটটা বিজেপিতে চলে যাওয়াতে এমন ফল হয়েছে। পুলওয়ামা কাণ্ডের প্রভাবও ভোটারদের মধ্যে পড়েছিল। বিধানসভা ভোটে বামেরা পেয়েছিল ১২ হাজার ভোট। এ বার তাঁরা মাত্র দু’হাজার ভোট পেয়েছে। এটাই পার্থক্য তৈরি করে দিয়েছে।’’ হাসপাতাল নিয়ে তিনি প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
সিপিএমের তরফেও হাসপাতালের জন্যই তৃণমূল ভোট পায়নি বলে মনে করা হচ্ছে। গোবরডাঙা পুরসভার প্রাক্তন প্রধান সিপিএমের বাপি ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এ বারের ভোটে গেবরডাঙাতে হাসপাতাল চালু না হওয়ার বিষয়টি ভীষণ ভাবে মানুষের মধ্যে প্রভাব ফেলেছিল।’’ প্রশ্ন উঠেছে তা হলে সেই ভোটটা সিপিএম পেল না কেন? বাপি বলেন, ‘‘কেন আমাদের এখানে এমন ফল তা আমরা দলীয় স্তরে পর্যালোচনা করে দেখছি।’’ গোবরডাঙায় ভাল ফল হওয়াতে খুশি বিজেপির জেলা নেতৃত্বও। দলের বারাসত সাংগঠনিক জেলার সহ সভাপতি বিপ্লব হালদার বলেন, ‘‘নিশ্চিত ভাবেই হাসপাতাল চালু না হওয়ায় ক্ষোভে মানুষ আমাদের ভোট দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে আমরা দলের তরফে দাবি করব গোবরডাঙা হাসপাতালটি পূর্ণাঙ্গরূপে চালু করার জন্য। কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলকে আমরা গোবরডাঙায় এনে হাসপাতাল পরিদর্শনের ব্যবস্থা করব।’’
পুরবাসীর সঙ্গে কথা বলেও জানা গেল, অনেকেই ভোট দিতে যাওয়ার আগে হাসপাতাল চালু না হওয়ার বিষয়টি মাথায় রেখেছিলেন। ভোটের ফল প্রকাশের পর এখন অনেককেই সে কথা বলতে শোনা যাচ্ছে।
গোবরডাঙা গ্রামীণ হাসপাতালের ইনডোর বিভাগটি ২০১৪ সালের ৪ নভেম্বর থেকে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অতীতে এখানে রোগী ভর্তির ব্যবস্থা ছিল। ছোটখাটো অস্ত্রোপচারও হত। দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতাল ভবনের যন্ত্রপাতি পরিত্যক্ত অবস্থায় থেকে নষ্ট হচ্ছে। এলাকাবাসীর দাবি, এখন সপ্তাহে প্রায় পাঁচদিন বহির্বিভাগে কয়েক ঘণ্টার জন্য একমাত্র চিকিৎসক রোগী দেখেন। রাতে গোবরডাঙার মানুষের ন্যুনতম চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়ার সুযোগ নেই। কেউ অসুস্থ হলে গাড়ি ভাড়া করে সাড়ে তেরো কিলোমিটার দূরে হাবড়া স্টেট হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। রাতে গাড়ি পেতেও অসুবিধা হয়।
হাসপাতালটি চালুর দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছে গোরবডাঙা পৌর উন্নয়ন পরিষদ। পরিষদের দাবি, ‘‘আমরা চাই দ্রুত হাসপাতালটি চালু করুক সরকার।’’
২০১৭ সালের মে মাসে ব্যারাকপুরে প্রশাসনিক সভাতে গোবরডাঙার পুরপ্রধান সুভাষ দত্ত হাসপাতালটি চালু করতে মুখ্যমন্ত্রীকে বলেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, ওখানে হাসপাতাল হবে না। এরপরই এলাকার মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়েন। শুরু হয় মিছিল, বন্ধ, প্রতিবাদ সভা। দলীয় নির্দেশে পুরপ্রধানকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল। পরে অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি গিয়ে তিনি পদ ফিরে পান। কিন্তু মানুষের ক্ষোভ যে কমেনি, তা লোকসভা ভোটেই প্রামাণিত হল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy