বাঁধ-মেরামত: সুন্দরবনের গোসাবা ব্লকের কুমিরমারিতে সারসা নদীর পাড়ে কাজ চলছে। ছবি: সামসুল হুদা
আমপানের ক্ষত এখনও দগদগে সুন্দরবনের আনাচ-কানাচে। তার মধ্যে একবার ছোবল মেরে গিয়েছে ভরাকটাল। কোথাও বাঁধ ভেঙে, কোথাও ছাপিয়ে প্লাবিত হয়েছিল এলাকা। মহালয়ার এক দিন পরেই ষাঁড়াষাঁড়ি কটাল। সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই কটালে নদীর জলোচ্ছ্বাস ছ’মিটার পর্যন্ত হতে পারে। সমুদ্রের জলেও তীরবর্তি এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ষাঁড়াষাঁড়ি বান সুন্দরবনের বাসিন্দাদের কাছে নতুন কিছু নয়। কিন্তু আশঙ্কা অন্যত্র। আমপানে বহু এলাকায় বাঁধের বিস্তীর্ণ অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তড়িঘড়ি মেরামত হয়েছে বেশ কিছু বাঁধ। কিছু কাজ এখনও বাকি। এই অবস্থায় দুই ২৪ পরগনার সুন্দরবন এলাকায় বেশ কিছু পদক্ষেপ করছে প্রশাসন। কয়েকটি ব্লকে বাতিল করা হয়েছে পঞ্চায়েত কর্মীদের ছুটিও। তৈরি রাখা হয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে। নদীবাঁধ মেরামতে এ বার গুরুত্ব পাচ্ছে ১০০ দিনের কাজ।
এক দিকে কাকদ্বীপ, গোসাবা, সাগর— অন্য দিকে সন্দেশখালি, হিঙ্গলগঞ্জ, হাসনাবাদ-সহ সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকার নদীবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছিল এলাকা। ঘর-বাড়ির পাশাপাশি ভেসেছিল খেত-খামারও। ষাঁড়াষাঁড়ি বান যত এগিয়ে আসছে, আশঙ্কার মেঘ তত ঘন হচ্ছে চাষিদের মনে। গোসাবা ব্লকের চাষি পরিতোষ মণ্ডল বলেন, “কোনও রকমে বর্ষার চাষটা করেছি। ফের বাঁধ ভাঙলে পথে বসব। সব যাবে। আমরা খাব কী?” সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, আমপানে যেখানে যেখানে বাঁধ ভেঙেছিল, সর্বত্রই কাজ চলছে। তবে গোসাবা ব্লকের রাঙাবেলিয়া, কুমিরমারি, পাখিরালা, বাসন্তী ব্লকের নফরগঞ্জ, বিরিঞ্চিবাড়ি, সোনাখালি, সজনেতলা এলাকায় নদীবাঁধের বেশ কিছুটা অংশ এখনও অশক্ত।
এ বিষয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনা সেচ দফতরের এগজ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার কিংশুক মণ্ডল বলেন, “যে সব জায়গায় বাঁধের সমস্যা বেশি, কাজের ক্ষেত্রে সেই জায়গাগুলিই অগ্রাধিকার পাচ্ছে। পরিস্থিতির উপরে নজর রেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’’ জেলা পরিষদের সেচ বিভাগের কর্মাধ্যক্ষ শাহজাহান মোল্লার কথায়, “সাগর, কাকদ্বীপ, গোসাবা, বাসন্তী-সহ বেশ কিছু এলাকায় নদীবাঁধের সমস্যা রয়েছে। পঞ্চায়েতগুলিকে বলা হয়েছে, পরিস্থিতির উপরে নজর রাখতে। প্রয়োজনে নদীতীরের বাসিন্দাদের সরানো হতে পারে।”
আমপান ও পিঠোপিঠি ভরা কটালে কাকদ্বীপ মহকুমায় সাগর, নামখানা, পাথরপ্রতিমা ও কাকদ্বীপ এলাকায় নদী ও সমূদ্রবাঁধ ভেঙে এলাকা প্লাবিত হয়েছিল। ভরাকটালের পরে ভাঙা এবং অশক্ত বাঁদ মেরামতির কাজে হাত দিয়েছিল সেচ দফতর। সাগর পঞ্চায়েতে সমিতির সভাপতি রাজেন্দ্রনাথ খাঁড়া বলেন, “বাঁধ তৈরি এবং মেরামতির কাজ প্রায় শেষ। আশা করি সামনের কটালের জল আটকানো যাবে।” পাথরপ্রতিমা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শেখ রজ্জাক জানান, সেখানে এখনও মেরামতির কাজ চলছে। কাকদ্বীপ মহকুমার সেচ দফতরের এগজ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার কল্যাণ দে বলেন, ‘‘ভাঙা বাঁধগুলি মেরামতির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আবহাওয়া ভাল থাকলে এলাকা প্লাবিত হবে না।”
ষাঁড়াষাঁড়ি কটালের জন্য সন্দেশখালি ১ ব্লক অফিস ও বিভিন্ন পঞ্চায়েতের কর্মীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত ব্লক অফিসে কন্ট্রোল রুম খোলা থাকবে। বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে তৈরি রাখা হয়েছে। পশ্চিম ভোলাখালি এবং শেয়ারা কালীনগর এফপি স্কুলের পাশে ডাঁসা নদীর বাঁধের প্রায় ৬০ ফুট মত অংশের ভাল নয়। সন্দেশখালি ১ বিডিও সুপ্রতিম আচার্য বলেন, “মেরমত করলেও ওই অংশ বারবার ধসে যাচ্ছে। সেচ দফতরকে জানানো হয়েছে। ওই দফতরকে পুরো ব্লকের বিপজ্জনক নদীবাঁধের তালিকা দেওয়া হয়েছে।” হিঙ্গলগঞ্জের রমাপুর, পুকুরিয়া, চাড়ালখালি, কেদারচক এলাকায় নদী-বাঁধের কাজ চলছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy