Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বিপজ্জনক ভাবে রান্নার গ্যাস অটোয়

বিশেষ কৌশলে রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার থেকে গ্যাস বের করে ভরা হয় অটোয়। যা বিপজ্জনক এবং বেআইনিও বটে। গ্যাস ভরার সময়ে বিস্ফোরণের আশঙ্কা থাকে। চলন্ত গাড়িতেও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে পরিবহণ দফতরের কর্তাদের অনুমান।

বেআইনি: এ ভাবেই চলে কারবার। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

বেআইনি: এ ভাবেই চলে কারবার। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

সীমান্ত মৈত্র
হাবড়া শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৮ ০২:২৪
Share: Save:

বিশেষ কৌশলে রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার থেকে গ্যাস বের করে ভরা হয় অটোয়। যা বিপজ্জনক এবং বেআইনিও বটে। গ্যাস ভরার সময়ে বিস্ফোরণের আশঙ্কা থাকে। চলন্ত গাড়িতেও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে পরিবহণ দফতরের কর্তাদের অনুমান। কিন্তু তারপরেও হুঁশ নেই চালকদের। দিনের পর দিন বহু অটো রান্নার গ্যাস ভরেই চলছে। পুলিশ মাঝে মধ্যে ধরপাকড় করে। কিন্তু পরিস্থিতি মোটের উপর, যে কে সেই। বনগাঁ, বাগদা, গোপালনগর, গাইঘাটা, হাবড়া, গুমা, বিড়া, অশোকনগর, দত্তপুকুর-সহ উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় রান্নার গ্যাসে চলছে অটো ও ছোট গাড়ি।

উত্তর ২৪ পরগনা জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ সংস্থার আধিকারিক সিদ্ধার্থ রায় বলেন, ‘‘রান্নার গ্যাসে অটো বা ছোট গাড়ি চালানো সম্পূর্ণ বেআইনি। এই কাজ খুবই বিপজ্জনক। যে কোনও সময়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে।’’ সম্প্রতি পুলিশ ও জেলা এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চ অভিযান চালিয়ে বনগাঁ ও হাবড়া এলাকা থেকে প্রচুর রান্নার গ্যাস ভর্তি সিলিন্ডার আটক করেছে। ওই সব গ্যাস সিলিন্ডার বেআইনি ভাবে বাড়িতে ও সংলগ্ন গোডাউনে মজুত করা হয়েছিল। কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

বনগাঁ থানার পুলিশ বেআইনি ভাবে রান্নার গ্যাস মজুত করে কারবার চালানোর অভিযোগে দিন কয়েক আগে রামকৃষ্ণপল্লি এলাকা থেকে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে। তার বাড়ি থেকে পুলিশ ৪১টি রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার উদ্ধার করে। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, বাড়িতে মজুত করা রান্নার গ্যাস উত্তম মূলত অটো চালকদের কাছে বিক্রি করে। অনেক অটো চালক তার বাড়িতে গিয়ে অটোয় রান্নার গ্যাস ভরে নিয়ে আসতেন।

ডিইবি (ডিস্ট্রিক্ট এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চ) বনগাঁর মনিগ্রাম এলাকার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ৬৯টি রান্নার গ্যাস সিলিন্ডার আটক করেছে। হাবড়া থানার পুলিশও স্থানীয় বেড়গুম এলাকায় একটি বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে কয়েক মাস আগে এক মহিলাকে গ্রেফতার করে। উদ্ধার হয় গ্যাস সিলিন্ডার।

বাসিন্দাদের অভিযোগ, এত কিছুর পরেও বেআইনি ভাবে রান্নার গ্যাস বিক্রি হচ্ছে। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘রান্নার গ্যাস সিলিন্ডার মজুত করে কারবার চালানোর অভিযোগ পেলেই ধরপাকড় করা হয়। তল্লাশি আরও বাড়ানো হবে।’’

কিন্তু কেন অটো চালকেরা এই গ্যাস ব্যবহার করছেন?

অটো চালকেরা জানান, মূল কারণ হল, এলপিজি গ্যাসের পাম্পের অভাব। বনগাঁ থেকে দত্তপুকুর পর্যন্ত এলাকায় হাতে গোনা মাত্র কয়েকটিমাত্র পাম্প রয়েছে। ফলে ইচ্ছে থাকলেও অটো চালকেরা এলপিজি গ্যাস অটোতে ভরতে পারেন না।

কয়েকজন অটো চালকেরা জানান, ১ কেজি এলপিজি গ্যাসের দাম ৪৩ টাকা। ১ কেজি এলপিজি গ্যাস ভরলে বাস্তবে অটোর মধ্যে গ্যাস ঢোকে ৮০০ গ্রাম। ১৫- ২০ কিলোমিটার পথ যাওয়া যায় তাতে।

কিন্তু ১ কেজি রান্নার গ্যাসে যাতায়াত করা যায় ২৬ কিলোমিটার। দাম পড়ে ৬৭ টাকা। হাবড়ার এক অটো চালক বলেন, ‘‘রান্নার গ্যাসে অটো চালালে ইঞ্জিনের ক্ষতি হয়। কিন্তু উপায় না থাকায় রান্নার গ্যাস ভরতেই হয়।’’ চালকদের দাবি, দ্রুত আরও বেশি করে এলপিজি গ্যাসের পাম্প দরকার।

পুলিশ জানিয়েছে, গ্রামের বহু মানুষ রয়েছেন, যাঁদের অনেকের রান্নার গ্যাসের সংযোগ রয়েছে। কিন্তু ব্যবহার করেন না। আবার অনেকে পরিবার আছে, যাঁদের চার মাসে একটি গ্যাস সিলিন্ডার লাগে। কারবারিরা ওই সব মানুষদের কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে গ্যাস সিলিন্ডার সংগ্রহ করে বিক্রি করে।

সিদ্ধার্থ বলেন, ‘‘এলপিজি গ্যাসের পাম্প বাড়ানোর জন্য আমরা পেট্রোল পাম্প মালিকদের অনুরোধ করে থাকি। মানুষকে সচেতন করি তাঁরা যেন রান্নার গ্যাসের গাড়ি চলা গাড়িতে না ওঠেন। আমরা কড়া পদক্ষেপ করছি।’’

পাম্প মালিকেরা জানান, লাভ বেশি থাকে না বলে তাঁরা এলপিজি পাম্প করছেন না।

এই পরিস্থিতিতে রানন্নার গ্যাসে গাড়ি চালানো পুরোপুরি বন্ধ করা যাবে কী ভাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে সব মহলেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Auto CNG LPG Auto Rickshaw
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE