মাঠ-দাপিয়ে: গাঁড়াপোতায়। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
দূর থেকে শোনা যাচ্ছে ঘোষকের উত্তেজিত গলা। ‘‘পায়ে বল নিয়ে এগোচ্ছে গোবরাপুর। বাঁ দিক থেকে চমৎকার শটে পেনাল্টি বক্সের দিকে বল ঠেলে দিল তারা। এবং অসাধারণ শট। গোওওওল...।’’
সমর্থকদের চিৎকারে কান পাতা দায়। বিমর্ষ কুন্দিপুর।
শেষমেশ ১-০ গোলে ম্যাচ জিতেছে গোবরাপুর।
ঠিক যেন ‘ধন্যি মেয়ে’ ছবির হাড়ভাঙা গ্রাম আর কলকাতা টিমের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। গ্রামের লোকের তুমুল উৎসাহ যাকে ঘিরে। শেষমেশ শিল্ড যাবে কার ঘরে, ক’দিন ধরে চর্চা চলছে মুখে মুখে।
গ্রাম-মফস্সলের মানুষ যখন ফুটবল টুর্নামেন্ট দেখে অভ্যস্ত, সেখানে বনগাঁর গাঁড়াপোতায় শুরু হয়েছে ‘ফুটবল মেলা।’ চায়ের দোকানে, বাড়ির দালানে, এমনকী হেঁসেলেও এখন আলোচনা ফুটবল নিয়ে।
কারণ একটাই, আশেপাশের ৮টি গ্রামের ছেলেরাই যোগ দিয়েছে প্রতিযোগিতায়। সকলেই প্রায় চেনে সকলকে। তাই আলোচনাও বাড়তি মাত্রা পেয়েছে। ‘‘পিন্টুর বাঁ পায়ে কোনও শট নেই’’— এ পাড়ার বিশ্বাসদার মন্তব্য শুনে ঝাঁঝিয়ে উঠছেন ও পাড়ার ঘোষাল। বলছেন, ‘‘আর তোমাদের খোকন তো হেড দিতেই শিখল না এখনও।’’
লেগে যা লেগে যা...নারদ নারদ। বিশ্বকাপ ফুটবলের বাজারে গ্রামের হাওয়া আরও গরম।
গাঁড়াপোতা পঞ্চায়েতের আটটি গ্রাম খেলায় যোগ দিয়েছে। কোনও ক্লাবের নামে খেলা নয়। টিম তৈরি হয়েছে গ্রামের নামেই। গাঁড়াপোতা, কেউটিপাড়া, ভরতপুর, পালপাড়া, চাঁদা, মুড়িঘাটা, গোবরাপুর এবং কুন্দিপুর খেলছে এ বারের ফুটবল মেলায়।
গাঁড়াপোতা স্পোর্টস গ্রাউন্ড সংস্থার পরিচালনায় পাঁচ বছর ধরে এই ফুটবল মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। শনিবার বিকেলে স্থানীয় গাঁড়াপোতা উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে শুরু হয়েছে এ বারের মেলা। উদ্বোধন করেন বাগদার বিধায়ক দুলাল বর। প্রথম দিনই হাজার দশেক মহিলা-পুরুষ খেলা দেখতে মাঠে ভিড় করেছিলেন। এ বারের মেলা চলবে দেড় মাস ধরে। প্রতি সপ্তাহের শনি-রবিবার খেলা হবে। এ বার ঠিক হয়েছে, প্রতি দল দু’জন করে বহিরাগত খেলোয়াড় নামাতে পারবে। বিদেশি খেলোয়াড়ও দেখা গেল। প্রথম ম্যাচে গোবরাপুরের হয়ে একমাত্র গোলটিও করেছেন নাইজেরিয়ার খেলোয়াড়।
খেলার দিনগুলিতে মানুষ দুপুরের মধ্যেই কাজকর্ম সেরে ফেলছেন। মহিলারা রান্না খাওয়ার কাজ করছেন দ্রুত। খেলা শুরুর ঘণ্টাখানেক আগে থেকেই মানুষ মাঠের দিকে চলে যাচ্ছেন। গল্প, আড্ডা, খাওয়া-দাওয়া সবই চলছে। এক মহিলার কথায়, ‘‘বাড়ির বাইরে বেরিয়ে খুব বেশি খেলা দেখার সুযোগ হয় না। তাই বাড়ির কাছে ফুটবল মেলায় আসি। খেলা দেখার পাশাপাশি দেড় মাস ধরে খুব আনন্দে কাটে। আত্মীয়-স্বজনেরাও খেলা দেখতে বাইরে থেকে আসেন।’’
বাসিন্দারা জানালেন, ফুটবল মেলা এখন বার্ষিক উৎসবে পরিণত হয়েছে। অতীতে ফুটবল লিগ হত। মাঝে বহু দিন বন্ধ ছিল। কয়েকজন যুবকের উদ্যোগে ফুটবল মেলার আয়োজন শুরু হয়েছে। ওই যুবকেরা কেউ পড়ুয়া, কেউ চাকরি করছেন। নিজেরা টাকা দিয়ে এবং কয়েকজনের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে মেলার আয়োজন করেন তাঁরা। পঞ্চায়েতের তরফেও সাহায্য করা হচ্ছে।
উদ্যোক্তাদের কথায়, ‘‘এলাকার অনেক যুবক মদ-গাঁজার নেশায় আসক্ত ছিল। ফুটবল খেলার আয়োজনের মাধ্যমে সকলকে মাঠমুখী করতে চেয়েছিলাম।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy