গ্রেফতার: আল্লারাখা মণ্ডল। — নিজস্ব চিত্র
সটান থানায় এসে কর্তব্যরত আধিকারিককে লোকটি বলেছিল, ‘আমি স্ত্রীকে খুন করেছি।’ হকচকিয়ে যান পুলিশের ওই কর্তা। প্রথমে মনে করেছিলেন, ওই যুবকের মানসিক সমস্যা রয়েছে। কিন্তু তার পোশাকে রক্তের দাগ দেখে সন্দেহ হয় থানার অন্য পুলিশকর্মীদের। জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা জানতে পারেন, ছেলেমেয়ের সামনেই বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে স্ত্রীকে খুন করেছে ওই যুবক।
শুক্রবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে দেগঙ্গার বাজিতপুরে। পুলিশ জানায়, মৃতার নাম শাহনিমা বিবি (৪০)। তাঁকে খুনের অভিযোগে স্বামী আল্লারাখা মণ্ডলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পেশায় দর্জি আল্লারাখার দুই মেয়ে, এক ছেলে। অভিযোগ, ছোটখাটো নানা বিষয়ে স্ত্রী শাহনিমাকে সন্দেহ করত ওই যুবক। তা থেকেই গোলমালের শুরু। মাসখানেক আগে বাজিতপুরের বাড়ি ছেড়ে কাঁটাপুকুরের বাড়িতে চলে আসে আল্লারাখা। তাদের মেয়ে আফরোজা খাতুন এ দিন বলে, ‘‘দুপুরে জেঠুর বাড়ি গিয়েছিল মা। মাকে দেখতে পেয়েই টানতে-টানতে নিয়ে যায় বাবা। তার পরে বাঁশ দিয়ে পেটাতে থাকে।’’ মেয়েটির কথায়, ‘‘বাবার পা ধরে কাঁদছিল মা। কিন্তু বাবা কথা শোনেনি। বাঁশ দিয়ে মাথায়, ঘাড়ে মারতে থাকে।’’ রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে প়ড়েন শাহনিমা। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর।
এই ঘটনার খবর জানাজানি হতেই ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা তাড়া করেন আল্লারাখাকে। ভয়ে পালিয়ে যায় সে। পরে থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করে। পুলিশকে ওই যুবক বলেছে, ‘‘বৌ ঠিক মতো খেতে দিত না। কথা শুনত না। তাই সন্দেহ করতাম। রাগের মাথায় পিটিয়ে খুন করেছি।’’ খবর পেয়ে আসেন দেগঙ্গা থানার ওসি লিটন রক্ষিত। ঘটনাস্থল থেকে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। উদ্ধার হয় রক্তমাখা বাঁশ।
স্থানীয় বাসিন্দা আবু তাহের বলেন, ‘‘স্ত্রীকে সন্দেহ করত আল্লারাখা। সালিশি সভায় একাধিক বার ওকে সাবধান করা হয়েছে। তা-ও শোধরায়নি।’’ আফরোজা বলে, ‘‘মাকে যখন-তখন মারধর করত বাবা। আজ সব শেষ করে দিল।’’ আল্লারাখার চরম শাস্তির দাবি জানিয়েছে ছেলেমেয়েরাও। স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য দীপঙ্কর দাস বলেন, ‘‘ওই যুবককে বহু বার বুঝিয়ে সালিশি সভায় অশান্তি মেটানোর চেষ্টা করা হয়েছে। তার পরেও যে ভাবে ও স্ত্রীকে খুন করেছে, তার উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy