দম্পতি: মইনুদ্দিন ও আফসানা। —নিজস্ব চিত্র।
প্ল্যাটফর্মের মধ্যে তুমুল বচসা চলছে এক যুবক-যুবতীর। যুবতীর আপ ট্রেনে চড়ার কথা। কিন্তু বাধা দিচ্ছেন যুবক। তাঁরা সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী। স্বামী চান স্ত্রীকে বাড়ি ফেরাতে। স্ত্রী রাজি নন। স্ত্রীকে রাজি করাতে আত্মহত্যার হুমকি দেন স্বামী। তাতেও নারাজ স্ত্রী। শেষে তিনি স্ত্রীকেও আত্মহত্যার জন্য চাপ দিতে থাকেন। বচসার মধ্যেই স্ত্রীকে টেনে রেললাইনের মাঝখানে নিয়ে যান মইনুদ্দিন আনসারি (৩২)। স্ত্রী পালানোর চেষ্টা করতেই আচমকা তাঁকে টেনে নিয়ে চলন্ত ডাউন নৈহাটি লোকালের সামনে ঝাঁপ দেন মইনুদ্দিন। বিকেলে কলকাতার একটি হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর। গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁর স্ত্রী আফসানা বিবিও ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সোমবার সকালে এই ঘটনা ঘটেছে টিটাগড় স্টেশনে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, স্বামীর অত্যাচারেই মাসখানেক আগে বাড়ি ছেড়েছিলেন আফসানা। মইনুদ্দিনের বাড়ি টিটাগড়ের রুইয়া এলাকায়। কাছাকাছি চেকপোস্ট এলাকায় বাপের বাড়ি আফসানার। আফসানার আগে এক বার বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু সে বিয়ে টেকেনি। বছর আড়াই আগে তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় মইনুদ্দিনের। মাস ছয়েকের মধ্যে বিয়ে। আফসানার ন’মাসের একটি পুত্রসন্তান রয়েছে। রয়েছে আগের পক্ষের একটি মেয়েও।
মইনুদ্দিন রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, বিয়ের পর থেকেই মইনুদ্দিনের সঙ্গে আফসানার ঝামেলা শুরু হয়। আফসানার বাড়ির লোকেদের অভিযোগ, মইনুদ্দিন মত্ত অবস্থায় বাড়ি ফিরে আফসানাকে মারধর করতেন। বেশির ভাগ দিনই কাজে যেতেন না। টাকার জন্যও আফসানার গায়ে প্রায়ই হাত তুলতেন তিনি। সংসার চালাতে সম্প্রতি আফসানা সোদপুরে একটি বাড়িতে পরিচারিকার কাজ নেন। তাতেও আপত্তি জানান মইনুদ্দিন। তার পরেই তাঁদের সমস্যা আরও জটিল হয়। মাসখানেক আগে আফসানা বাপের বাড়ি চলে যান। রেল পুলিশ জানিয়েছে, রোজ সকালে টিটাগড় স্টেশন থেকে ট্রেন ধরতেন আফসানা। প্রায় দিনই সেখানে গিয়ে ঝামেলা করতেন মইনুদ্দিন। দিন কয়েক আগে স্ত্রীকে আবার মারধর করেন তিনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল ১০টা নাগাদ টিটাগড় স্টেশনে ট্রেন ধরতে এসেছিলেন আফসানা। মইনুদ্দিন সেখানে এসে স্ত্রীকে বাড়ি ফিরতে বলেন। আফসানা রাজি না হওয়ায় শুরু হয় বচসা। কথা বলতে বলতে তাঁরা দু’নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে নেমে ১০ নম্বর রেলগেটের দিকে চলে যান। আফসানা বাড়ি না ফিরলে ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দেবেন বলে হুমকিও দেন মইনুদ্দিন। তাতেও সাড়া দেননি আফসানা। তখন তিনি বলেন, ‘‘আমি জান দেব, আর তোকেও আমার সঙ্গে মরতে হবে।’’
এই কথা শুনে পালিয়ে আসার চেষ্টা করেন আফসানা। সেই সময়ে স্টেশনে ঢুকছিল ডাউন নৈহাটি লোকাল। আফসানাকে টেনে নিয়ে সেই ট্রেনের সামনেই ঝাঁপ দেন মইনুদ্দিন। তাঁর পায়ের উপরের অংশ থেকে দেহ দু’ভাগ হয়ে যায়। আফসানার মাথায় চোট লাগে। সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের ব্যারাকপুরের বি এন বসু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে পাঠানো হয় কলকাতার এক হাসপাতালে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy