Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
ফিরল সেই গুঁতোগুঁতি, পা মাড়িয়ে দেওয়া, কনুইয়ের
Indian Railways

এত নিয়ম করে লাভ কী হল, প্রশ্ন তুলছে ভিড়

কামরার দরজায় যাত্রীদের হুড়োহুড়ি চোখে পড়েছে এ দিন। কোনও কোনও স্টেশনে কিছু দূরে কয়েকজন রেল পুলিশকে দেখা গিয়েছে। কিন্তু শেষ বেলায় সেই পুলিশ কর্মীদেরই ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ছুটে ট্রেনে উঠেছেন অনেকে। 

ঝুলোঝুলি: পরিচিত ছবি ট্রেনের। হাবড়ায়। ছবি: সুজিত দুয়ারি

ঝুলোঝুলি: পরিচিত ছবি ট্রেনের। হাবড়ায়। ছবি: সুজিত দুয়ারি

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২০ ০৭:০৪
Share: Save:

রেলের যাবতীয় তোড়জোড়, সুরক্ষাবিধি জলাঞ্জলি দিয়ে লোকাল ট্রেন ফিরছে আগের চেহারাতেই। যাত্রীদের মধ্যে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, এমনই যদি হওয়ার ছিল, তবে খামোখা লোকাল ট্রেন এত দিন বন্ধ করে মানুষকে মুশকিলে ফেলে লাভটা কী হল। রেল-রাজ্যের কাণ্ডজ্ঞান নিয়ে শুরু হয়েছে নিত্যযাত্রীদের রসিকতা। ট্রেনের সংখ্যা না বাড়িয়ে ভিড় নিয়ন্ত্রণ করার মতো অবাস্তব পরিকল্পনার জন্য অনেকের ক্ষোভও আছে।

বেলাগাম ভিড়ে প্রথম দিনেই ভেঙে পড়েছিল সব ব্যবস্থা। দ্বিতীয় দিন ভিড় কমার কোনও সম্ভাবনা ছিল না। আশঙ্কা ছিল, ভিড় কত বাড়তে পারে তা নিয়ে। খুব বেশি না বাড়লেও শিয়ালদহ মেন, বনগাঁ, ক্যানিং এবং হাসনাবাদ লোকালে বৃহস্পতিবার ভিড় সামান্য বেড়েছে। ফলে শুরুর স্টেশনগুলির অতি সতর্কতা শেষ পর্যন্ত কোনও কাজে আসেনি। এ দিন কোনও কোনও ট্রেনে দেখা মিলেছে হকারদেরও। কাউকে জোর করে নামিয়ে দিতে দেখা যায়নি।

ভিড় ঠেকাতে দ্বিতীয় দিনে নতুন কোনও পদক্ষেপও নজরে আসেনি। ফলে যে সংক্রমণের আশঙ্কায় এত দিন বন্ধ ছিল লোকাল ট্রেন, তা কতখানি মানা হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বেলাগাম ভিড় হলেও নাচার যাত্রীদের বক্তব্য, “দূরত্ববিধি তো আমরাও মানতে চাই। কিন্তু মানব কী করে?”

৮টা ৮ মিনিটের বনগাঁ লোকাল বনগাঁ স্টেশন ছেড়ে বেরোনোর সময়ে এক আসনে দুই যাত্রী ছিলেন। মাঝের দাগ দেওয়া জায়গা ফাঁকা ছিল। সেই ট্রেনের ভিড়ের ছবি বদলে গেল হাবড়া স্টেশনে। এক আসনে চার যাত্রীই শুধু নয়, দুই আসনের মাঝের প্যাসেজেও গাদাগাদি ভিড়ের পুরনো দৃশ্য ফিরে এসেছে। যাত্রীদের ঘেঁষাঘেষিতে দূরত্ববিধি তখন দূর গ্রহের শব্দ। দূরত্ববিধি না মানা গেলেও লোকাল চালু হওয়ায় খুশি যাত্রীরা। কারণ, অনেক কম খরচে, কম সময়ে তাঁরা পৌঁছতে পারছেন কর্মস্থলে।

অন্যান্য স্টেশনে কিছু দোকানপাট খোলা হলেও বনগাঁ স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে অবশ্য কোনও দোকান খোলেনি।

শিয়ালদহ মেন লাইনে ভিড় বাড়লেও নৈহাটি এবং ব্যারাকপুর থেকে ছাড়া ট্রেনগুলিতে ভিড় তেমন ছিল না। পরের স্টেশনগুলিতে ভিড় বেড়েছে ক্রমশ। নৈহাটি, ব্যান্ডেল শাখার ট্রেনগুলিতেও তেমন ভিড় ছিল না। যাত্রী কম ছিল হাসনাবাদ স্টেশনেও।

কামরার দরজায় যাত্রীদের হুড়োহুড়ি চোখে পড়েছে এ দিন। কোনও কোনও স্টেশনে কিছু দূরে কয়েকজন রেল পুলিশকে দেখা গিয়েছে। কিন্তু শেষ বেলায় সেই পুলিশ কর্মীদেরই ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ছুটে ট্রেনে উঠেছেন অনেকে।

শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার ক্যানিং লাইনেও এ দিন ভিড় ছিল বুধবারের থেকে কিছুটা বেশি। বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই প্রচুর মানুষের ভিড় জমে যায়। স্টেশনে পুলিশের নজরদারি ছিল বেশ ভাল। তবে ট্রেনের কামরায় ভিড় বাড়তে নজরদারিও উধাও হয়েছে। স্টেশনে দোকান খুলতে না দেখা গেলেও, জনা কয়েক হকারকে কামরায় দেখা গিয়েছে। এ দিন যাত্রী বেড়েছে ডায়মন্ড হারবার শাখাতেও। স্টেশনে থার্মাল চেকিংয়ের ব্যবস্থা থাকলেও ঢোকা এবং বেরোনোর পথে যাত্রীদের হুড়োহুড়ি হয়েছে। প্ল্যাটফর্মে বেশ কিছু দোকান খোলা ছিল।

সব মিলিয়ে সকালের দিকে যাত্রীদের থার্মাল স্ক্রিনিংয়ের ছবির সঙ্গে দিনভর ঠাসা ভিড়ের ছবিটা ছিল নেহাতই বেমানান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal Lockdown Indian Railways
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE