Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

পাচার করা কয়েন দিয়েই বুলেট-ব্লেড

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক মাস ধরে বসিরহাট মহকুমা, বিশেষ করে সীমান্ত এলাকার বাজার-অঞ্চলে এমন রটনা শুরু হয়েছে। প্রচার এমন সুকৌশলে হয়েছে যে, অধিকাংশ ব্যবসায়ীই ১ বা ২ টাকার কয়েন নিতে রাজি হচ্ছেন না।

এই কয়েন দিয়ে তৈরি হচ্ছে ব্লেড। নিজস্ব চিত্র

এই কয়েন দিয়ে তৈরি হচ্ছে ব্লেড। নিজস্ব চিত্র

নির্মল বসু
বসিরহাট শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৮ ০১:২৫
Share: Save:

বুলেট আর ব্লেড তৈরির উদ্দেশ্যে ভিনদেশে পাচার হচ্ছে ভারতীয় কয়েন! পাচারের কাজটি করছে একটি চক্র। যে চক্রটি মূলত সীমান্ত এলাকার বাজারগুলিতে ১ এবং ২ টাকার কয়েন চলবে না, এই মর্মে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আর পরে তা বাংলাদেশে পাচার করে অঢেল মুনাফা লুটছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক মাস ধরে বসিরহাট মহকুমা, বিশেষ করে সীমান্ত এলাকার বাজার-অঞ্চলে এমন রটনা শুরু হয়েছে। প্রচার এমন সুকৌশলে হয়েছে যে, অধিকাংশ ব্যবসায়ীই ১ বা ২ টাকার কয়েন নিতে রাজি হচ্ছেন না। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, যে পুলিশ কয়েন না নেওয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে প্রচার করছে, সেই পুলিশও অনেক সময় জরিমানা বাবদ খুচরো নিতে অস্বীকার করছে! এই সব কারণে এক শ্রেণির মানুষের কাছে হাজার হাজার টাকার কয়েন জমে যাচ্ছে। আর, ঠিক এমন সুযোগের অপেক্ষাতেই থাকে ওই চক্রটি। তারা সময় নষ্ট না করে বেরিয়ে পড়েছে ওই সব ‘বাতিল’ কয়েন কিনে নিতে।

এক টাকার একটি ছোট কয়েনের দাম ৬০ পয়সা। নতুন বড় ১ টাকার কয়েনের দাম ১ টাকা ২০ পয়সা এবং পুরনো বড় ২ টাকার কয়েন কেনা হচ্ছে ৩ টাকা দিয়ে। শহরের যে অঞ্চলে এখনও এক টাকার ছোট কয়েন অপাংক্তেয় হয়নি সেখানে তারা সেগুলি বেচে দিচ্ছে। ছোট কয়েনের প্রতি একশো টাকায় ৪০ টাকা আয় হচ্ছে তাদের। ছোট কয়েনের ক্ষেত্রে লাভ তো সরাসরি বোঝা যাচ্ছে! কিন্তু নতুন বড় ১ টাকার কয়েন এবং পুরনো বড় ২ টাকার কয়েন কেন বাড়তি টাকায় কিনছে তারা? প্রশ্ন শুনে অবশ্য প্রথমটায় কিছু বলতে অস্বীকার করে চক্রের সদস্যেরা। পরে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজনের বক্তব্য, বড় ১ ও ২ টাকার কয়েনে বিভিন্ন ধাতুর সঙ্গে পিতলও মেশানো থাকে। ওই সব কয়েন গলিয়ে যে পিতল মেলে তা থেকে ব্লেড এবং বুলেট তৈরি করা যায়।

১ ও ২ টাকার কয়েন বাড়তি মূল্য দিয়ে কিনে বিদেশে পাচার করতে পারলে সবরকম খরচপত্র বাদ দিয়েও কয়েন প্রতি ৫-৭ টাকা লাভ থাকে হাতে। ওই চক্রের এক সদস্য জানায়, একটি বড় কয়েন থেকে তৈরি হয় ১০-১২টি ব্লেড। একটি ব্লেডের দাম কম করে ২ টাকা করেও হলে ১২টি ব্লেডের জন্য পাওয়া যায় ২৪ টাকা! ব্লেডের হিসাব খোলসা করলেও বুলেটের হিসাব দিতে গিয়ে অবশ্য চুপ করে যায় ব্যক্তিটি।

স্বরূপনগরের এক পুলিশকর্তা এ ঘটনায় অন্য সংযোজনও করেন। তাঁর কথায়, কেবল কয়েনই নয়, ইদানীং পিতলের জিনিসপত্রও পাচার করা হচ্ছে একই উদ্দেশ্যে। সে জন্যও বড় চক্র গড়ে উঠেছে সংশ্লিষ্ট থানার সীমান্তবর্তী গ্রামগুলিতে।

সম্প্রতি বাদুড়িয়ায় গিয়ে দেখা গেল, সেখানে কয়েন কেনার জন্য ক্রেতা ঘুরছে বাজারে। হাড়োয়ার কিছু লোক ‘বাতিল’ কয়েন কিনতে আসায় মানুষও বস্তা বস্তা কয়েন তাদের বেচে দিচ্ছে। স্বাভাবিক ভাবেই কয়েন-ক্রেতারা কথা বলতে চাইল না। তবে, বাদল মণ্ডল, খালেক গাজির মতো কয়েন-বেচা দোকানিরা জানান, ‘‘বেশ কিছু দিন ধরে কেউ খুচরো নিতে না চাওয়ায় আমাদের মতো সাধারণ ব্যবসায়ীদের ঘরে লাখ লাখ টাকার ১ ও ২ টাকার কয়েন জমে যাচ্ছে। আর্থিক ক্ষতি হবে জেনেও তাই নিরুপায় হয়েই আমরা জমে যাওয়া ওই সব কয়েন ছেড়ে দিচ্ছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE