Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

ভোগাচ্ছে ডেঙ্গি আতঙ্ক শিল্পাঞ্চলে

বর্ষার মুখে শুরু হওয়া ডেঙ্গির দাপট এখনও অব্যাহত। শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন শহরের বহু মানুষ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত বলে বিভিন্ন হাসপাতাল সূত্রেই জানা গিয়েছে। খবর। শনিবার রাতে কাঁচরাপাড়ায় ডেঙ্গি আক্রান্ত এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে। ওই এলাকার আরও অনেকে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত।

আবর্জনা: শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায়। নিজস্ব চিত্র

আবর্জনা: শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায়। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৮ ০৪:০৭
Share: Save:

হাসপাতালের শয্যা সাড়ে তিনশো। রোগী ভর্তি প্রায় সাড়ে চারশো। তার মধ্যে প্রায় দু’শো জন জ্বরের রোগী। ব্যারাকপুরের বিএন বসু হাসপাতালের ছবিটা যদি এমন হয়, তা হলে কল্যাণীর জেএনএম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ছবিটাও আলাদা কিছু নয়। সেখানেও ঠাঁই নেই ঠাঁই নেই রব। অধিকাংশই জ্বরের রোগী। নদিয়া তো বটেই জ্বরের রোগীদের অধিকাংশই ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের শহরগুলির। দু’টি হাসপাতালেই জ্বরের বেশ কিছু রোগীর রক্তে মিলছে ডেঙ্গির জীবাণু।

বর্ষার মুখে শুরু হওয়া ডেঙ্গির দাপট এখনও অব্যাহত। শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন শহরের বহু মানুষ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত বলে বিভিন্ন হাসপাতাল সূত্রেই জানা গিয়েছে। খবর। শনিবার রাতে কাঁচরাপাড়ায় ডেঙ্গি আক্রান্ত এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে। ওই এলাকার আরও অনেকে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত।

শুধু কাঁচরাপাড়া-ই বা কেন? শিল্পাঞ্চলের বেশ কয়েকটি পুরসভাতে ডেঙ্গি ঠেকানো যাচ্ছে না। জ্বরের রোগীতে উপচে পড়ছে হাসপাতালগুলি। একদিকে ব্যারাকপুরের বি এন বসু হাসপাতাল অন্যদিকে নদিয়ার কল্যাণীর জেএনএম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ফি-রোজ জ্বরের রোগীদের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলছে।

শুধু পুর এলাকাই নয়, গ্রামীণ এলাকাতেও ডেঙ্গির দাপটে নাজেহাল মানুষ। ভাটপাড়া এবং কাঁচরাপাড়া পুর এবং গ্রামীণ এলাকাতে ডেঙ্গি রোগীর সংখ্যা বেশি। গারুলিয়া পুরসভাতেও দিন দিন ডেঙ্গি রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গত কয়েক মাসে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে কয়েকজনের মৃত্যুও হয়েছে। গত বছর উত্তর ২৪ পরগনার কয়েকটি জায়গায় ডেঙ্গি মহামারির আকার নিয়েছিল। এ বারও পুর এলাকায় ডেঙ্গি রোগীর সংখ্যা যে হারে বাড়ছে, তাতে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন এলাকার বাসিন্দারা। বর্ষা শেষ হলেও ডেঙ্গির দাপট বেড়ে চলায় আতঙ্ক বাড়ছে এলাকায় এলাকায়। ডেঙ্গি রোগীর সংখ্যা মূলত বাড়ছে গারুলিয়া, জগদ্দল, শ্যামনগর, কাঁকিনাড়া, হালিশহর, নৈহাটি, কাঁচরাপাড়া শহরে। পুরসভার নিজস্ব বা এলাকার স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে তো ডেঙ্গি রোগীদের ভর্তি করা হচ্ছেই। কল্যাণীর জেএনএম মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, ভাটপাড়া, জগদ্দল, হালিশহর, নৈহাটির প্রচুর জ্বরের রোগী সেখানে ভর্তি হচ্ছে। গত এক সপ্তাহে সেখানে এই এলাকাগুলির অন্তত ২০ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে।

অন্য দিকে ব্যারাকপুর বি এন বসু হাসপাতালেও ভাটপাড়া, জগদ্দল, গারুলিয়ার প্রচুর ডেঙ্গি রোগী ভর্তি হচ্ছে। হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, সেখানে প্রতিদিন শতাধিক রোগীর রক্ত পরীক্ষা হচ্ছে। রোজ অন্তত ১৫-২০ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলছে।

ভাটপাড়া পুরসভার কাঁকিনাড়া এবং জগদ্দল এলাকায় বহু বাড়িতেই কেউ না কেউ জ্বরে আক্রান্ত। অনেকেই দীর্ঘদিন বাড়িতে বা এলাকার চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা করাচ্ছেন। শেষবেলায় হাসপাতালে ছুটছেন জ্বরে আক্রান্তেরা। স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা করানোটা অনেক ক্ষেত্রে রোগীদের পক্ষে ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে মনে করছেন এলাকার বাসিন্দারা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরসভার পক্ষ থেকে বারবার সচেতনতার প্রচার চালানো হলেও ভাটপাড়া, কাঁকিনাড়া, জগদ্দলের বহু মানুষের হুঁশ ফেরেনি বলে অভিযোগ। প্রায় প্রতিটি বাড়িতে চৌবাচ্চা বা পাত্রে জল জমিয়ে রাখা হচ্ছে। ভাটপাড়ার পুরপ্রধান তথা বিধায়ক অর্জুন সিংহ জানান, পুরকর্মীদের বাড়ি বাড়ি পাঠিয়ে দেখা গিয়েছে, সেখানে চৌবাচ্চায় জল ধরে রাখা হয়। দিনের পর দিন তা পরিষ্কার করা হয় না। তিনি বলেন, ‘‘সেই চৌবাচ্চা শেষ পর্যন্ত আমরা ভেঙে দিতে বাধ্য হয়েছি। সাধারণ মানুষ সচেতন না হলে পুরসভার পক্ষে ডেঙ্গি মোকাবিলা সম্ভব নয়।’’

গারুলিয়ার অবস্থাও দিনদিন খারাপ হচ্ছে বলে অভিযোগ। ইতিমধ্যে এই পুরসভার চার ও পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডে জ্বরে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে এক জনের মৃত্যু যে ডেঙ্গিতে হয়েছে, তা সরকারি সূত্রেই স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। এই পুর এলাকার বেশ কয়েকটি এলাকায় নতুন করে জ্বর ছড়াচ্ছে। নৈহাটিতেও ডেঙ্গি ছড়াচ্ছে বলে অভিযোগ। কল্যাণীর জেএনএম হাসপাতালে নৈহাটির বেশ কয়েকজন রোগী এই মূহূর্তে চিকিৎসাধীন। এর আগেও বেশ কয়েকজনের চিকিৎসা হয়েছে।

নৈহাটির পুরপ্রধান অশোক চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমাদের পুরসভার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ডেঙ্গির রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা হচ্ছে। ডেঙ্গি এখনও উদ্বেগজনক নয় এখানে। অনেকে আমাদের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে না এসে অন্য হাসপাতালে যাচ্ছেন, সেই তথ্য আমাদের কাছে থাকছে না। তবে আমরা সাধ্যমতো লড়ছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mosquito Dengue Industrial area
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE