Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

দুধে রাসায়নিক মিশিয়ে সরবরাহ হত মিষ্টির দোকানে

পুলিশ জানিয়েছে, দমদমের দিকের কোনও একটা খাটাল থেকে দুধ নিত এই দলটি। তারপর তা নিয়ে চলে আসত জয়নগরের দিকে।

এই ভ্যানেই নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল দুধ। ছবি: সুমন সাহা

এই ভ্যানেই নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল দুধ। ছবি: সুমন সাহা

সমীরণ দাস
জয়নগর শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৯ ০০:৩৩
Share: Save:

খাটাল থেকে নেওয়া হত দুধ। সেই দুধে মেশানো হত জল এবং বিশেষ পাউডার। এরপর সরবরাহ করা হত বেশির ভাগ মিষ্টির দোকানে।

দুধে ভেজাল মেশানোর অভিযোগে দিন কয়েক আগে জয়নগরের চাতরা মোড় থেকে চার দুধ ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সোনারপুর এলাকার বাসিন্দা ওই চার জন বাইরে থেকে দুধ এনে সরবরাহ করত বলে জানিয়েছে পুলিশ। এই ঘটনায় আশঙ্কা ছড়িয়েছে এলাকায়। দুধের মতো শিশুখাদ্যে ভেজাল মেশানোর খবরে উদ্বিগ্ন এলাকাবাসী।

পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, ধৃত ব্যবসায়ীরা মূলত মিষ্টির দোকানেই দুধ ও ছানা সরবরাহ করত। জয়নগরের ঢোসাহাট এলাকার একাধিক মিষ্টির দোকানের সঙ্গে এদের লেনদেন চলত। বিভিন্ন মিষ্টির দোকান থেকে জানা গিয়েছে, প্রায় বছর খানেক ধরেই ওই এলাকায় দুধ ও ছানা সরবরাহ করছিল দলটা। কী ভাবে কাজ চালাত বেআইনি কারবারিরা। পুলিশ জানিয়েছে, দমদমের দিকের কোনও একটা খাটাল থেকে দুধ নিত এই দলটি। তারপর তা নিয়ে চলে আসত জয়নগরের দিকে। প্রাথমিক ভাবে খাটাল থেকে নেওয়া দুধে জল এবং বিশেষ পাউডার মিশিয়ে তা বাড়িয়ে নেওয়া হত অনেকটাই। এ ভাবে কখনও দ্বিগুণ, তিনগুণও করে নেওয়া হত দুধের পরিমাণ। তারপর শুরু হত দুধ থেকে ছানা তৈরির কাজ। সেখানেও একধরনের রাসায়নিক পাউডার ব্যবহার করা হত বলেই জানিয়েছে পুলিশ।

তদন্তকারীরা জানান, স্বাভাবিকের থেকে দ্রুত ছানা কাটানোর জন্যই এই রাসায়নিকের ব্যবহার হত। নিজেদের একটা গাড়ি ছিল দলটার। সামনে মিল্ক ভ্যান লেখা সেই গাড়িতে আসতে আসতেই সারা হত গোটা কাজটা। রাসায়নিক মেশানোর জন্য কোনও নির্জন জায়গা দেখে দাঁড় করানো হত গাড়ি। গত মঙ্গলবার চরণ থেকে ঢোসাহাট যাওয়ার রাস্তায় চাতরা মোড়ের কাছে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে এই কাজটাই করছিল ধৃত চারজন। তখনই তাদের গ্রেফতার করে পুলিশ।

বিষয়টি নিয়ে কতটা ওয়াকিবহাল ছিলেন দোকান মালিকরা। একটি মিষ্টির দোকানের মালিক বলেন, ‘‘দুধে জল অনেকেই মেশান। তাতে পুষ্টি গুণের হেরফের হলেও মিষ্টির স্বাদে তফাৎ হয় না। কিন্তু এরা যে এই ভাবে রাসায়নিক পদার্থ মিশিয়ে ছানা কাটান এটা জানা ছিল না।’’ আরও এক দোকানির কথায়, ‘‘দুধে খারাপ কিছু মেশালে ছানা তৈরির কথা নয়। জানি না এরা কী মেশাত।’’

কী মেশানো হত তার খোঁজ করছে পুলিশও। সেদিন ধৃতদের কাছ থেকে বেশ কয়েক প্যাকেট এবং কৌটো ভর্তি পাউডার জাতীয় রাসায়নিক উদ্ধার হয়েছে। সেগুলিতে ক্ষতিকর কিছু আছে কিনা তা পরীক্ষা করতে ইতিমধ্যে রসায়নাগারেও পাঠানো হয়েছে। এক পুলিশ আধিকারিকের কথায়, ‘‘রাসায়নিক যখন, তার একটা ক্ষতিকর দিক রয়েছে। কিন্তু সেটা কতখানি ক্ষতিকর সেটাই পরীক্ষা করে দেখা দরকার।’’

তাহলে কী ওই দুধে তৈরি হওয়া মিষ্টিও নিরাপদ নয়?

জয়নগরের একটি নামী মিষ্টির দোকানের মালিক বলেন, ‘‘এলাকারই নির্দিষ্ট ডেয়ারি থেকে আমাদের দুধ আসে। বছরের পর বছর সেখান থেকেই দুধ নিচ্ছি। ভেজালের সম্ভবনাই নেই। মূলত ছোট দোকানদাররাই এ ভাবে বাইরের লোকের থেকে দুধ নিয়ে ব্যবসা করে। ফলে যাচাই করে নেওয়ার সুযোগটা থাকে না।’’

অনেক ক্ষেত্রে দেকানদাররা কিছুটা কম দামে মাল পেতে জেনেশুনে এই ধরনের কারবারিদের প্রশ্রয় দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ তাঁর।

এই ঘটনার পর প্রশ্ন উঠছে, বাড়িতে বাড়িতে খাওয়ার জন্য যে দুধ পৌঁছচ্ছে তা কতটা নিরাপদ। স্থানীয় এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘বাড়িতে বাচ্চার জন্য নিয়মিতই দুধ কিনতে হয়। তাতে যদি এ ভাবে ভেজাল মেশানো হয়, সেটা তো মারাত্মক ব্যপার।’’

পুলিশের ওই আধিকারিক বলেন, ‘‘নজরদারি চলছে। খাওয়ার দুধে এখনও পর্যন্ত কোনও সমস্যা ধরা পড়েনি। বাইরে থেকে এলাকায় যত দুধ সরবরাহ হয়, সবই পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। এলাকায় যাঁরা দুধের ব্যবসা করেন, তাঁদের উপরও নজর রাখা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Milk Jaynagar Chemical
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE