Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

মন্ত্রীর কাছে গিয়ে ছোট্ট মেয়েটি বলল, ‘বাবা অসুস্থ, তুমি কিছু করো’

রবিবার সকালে হাবড়া পুরসভার অ্যাম্বুল্যান্স করে চিন্ময় সিকদার নামে অসুস্থ ওই যুবককে বারাসত জেলা হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তির ব্যবস্থা করিয়ে দেন জ্যোতিপ্রিয়। হাসপাতাল সুপারের সঙ্গে ফোনেও ওই যুবকের বিষয়ে কথা বলেন তিনি।   

জনসংযোগ: হাবড়ায়। নিজস্ব চিত্র

জনসংযোগ: হাবড়ায়। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
হাবড়া শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৯ ০৭:১২
Share: Save:

রাস্তার পাশে চেয়ার টেবিল পেতে বাসিন্দাদের সমস্যার কথা শুনছেন। একের পর এক মানুষ আসছেন সমস্যা নিয়ে। খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের কাছে এল এক ছোট্ট মেয়ে। মন্ত্রীকে বলল, ‘‘আমার বাবা অসুস্থ। তুমি কিছু করো।’’ সঙ্গে সঙ্গেই মেয়েটির হাত ধরে হেঁটে মন্ত্রী পৌঁছলেন তাদের বাড়িতে। শ্বাসকষ্টে ভুগছেন মেয়েটির বাবা। তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করলেন মন্ত্রী। তাঁদের পরিবারের হাতে কিছু টাকাও তুলে দেন তিনি।

রবিবার সকালে হাবড়া পুরসভার অ্যাম্বুল্যান্স করে চিন্ময় সিকদার নামে অসুস্থ ওই যুবককে বারাসত জেলা হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তির ব্যবস্থা করিয়ে দেন জ্যোতিপ্রিয়। হাসপাতাল সুপারের সঙ্গে ফোনেও ওই যুবকের বিষয়ে কথা বলেন তিনি।

শনিবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত জ্যোতিপ্রিয় সোনাকেনিয়া আবাদ মাকালতলা এলাকায় এ ভাবে জনসংযোগের কাজ করলেন। কখনও চায়ের দোকানে গেলেন। কখনও চেয়ার টেবিল পেতে বসে বাসিন্দাদের অভাব অভিযোগের কথা শুনলেন। সোনাকেনিয়া নবপল্লি বিদ্যাবীথি স্কুলের শিক্ষকদের সঙ্গেও বৈঠক করেন তিনি। শিক্ষকেরা তাঁকে জানালেন স্কুলে ৭ জন শিক্ষক কম আছে। সাইকেল রাখার ছাউনিও প্রয়োজন। মন্ত্রী শিক্ষকদের আশ্বাস দেন।

এ দিন হাতের কাছে মন্ত্রীকে পেয়ে গ্রামবাসীও মন খুলে তাঁদের সমস্যার কথা জানান। কেউ দাবি করলেন এলাকার শ্মশানের পরিকাঠামোর উন্নতির, কেউ আবার রাস্তা সংস্কারের কথা বলেন। গ্রামে মন্ত্রী এসেছেন। জানতে পেরেই বহু মানুষ তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসেন। জ্যোতিপ্রিয় বলেন, ‘‘মানুষের চাহিদা সামান্য— রাস্তা বিধবাভাতা, বার্ধক্যভাতা, জাতিগত শংসাপত্র পেতে দেরি হওয়া ইত্যাদি। এ সব নিয়েই এ দিন সবার সঙ্গে কথা হয়েছে।’’

জনসংযোগ করতে রাত সাড়ে ১১টা বেজে গিয়েছিল। এমনিতেই এ সব গ্রামের মানুষের রাত ৯-১০ টার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ার অভ্যাস। এ দিন গ্রামে মন্ত্রী থাকায় অনেকেই রাতে দেরিতে শুতে গিয়েছেন। এলাকায় পুলিশের গাড়িও ছিল। গ্রামের মানুষের কাছে শনিবার ছিল অন্যরকম রাত। গ্রামের এক কর্মীর বাড়িতে রাতে মন্ত্রী থেকেছেন। সেখানেও রাতে ভিড় হয়েছিল। গ্রামের অনেকেই তাঁর সঙ্গে সেখানে গিয়ে দেখা করেন।

রাত ১২টা নাগাদ মন্ত্রী বাড়ির বারান্দায় মাদুরে খেতে বসেন। কলা পাতায় ভাত, ডাল আলু ও ডিম সিদ্ধ দিয়ে রাতের খাবার সারলেন তিনি। মন্ত্রীর সঙ্গেই কলা পাতায় খেলেন হাবড়া পুরসভার প্রাক্তন পুরপ্রধান নীলিমেশ দাস ও হাবড়া শহর তৃণমূল সভাপতি সীতাংশু দাস। খাওয়া শেষে মন্ত্রী ঢুকলেন ঘরে। খাটে গা এলিয়ে দিলেন। লেকজন তখনও সমস্যার কথা বলে চলেছেন। বিকাশ মিস্ত্রি নামে এক যুবক জানান, দু’টি চিটফান্ডে টাকা রেখে তিনি সব হারিয়েছেন। মন্ত্রী জানান বিষয়টি তিনি স্বরাষ্ট্র দফতরে জানাবেন। রাত ১টা। শরীরে ইনজেকশন ফুটিয়ে ইনসুলিন নিচ্ছিলেন, এমন সময় নীলিমেশ মন্ত্রীকে জানান, শনিবার রাতেই জ্বর-ডেঙ্গিতে ফের দু’জন মারা গিয়েছেন। মন্ত্রীর কপালে চিন্তার ভাঁজ আরও বাড়ল। রাত ২ টোর সময়ও ফোনে প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে জ্বরের বিষয়ে আলোচনা করছেন জ্যোতিপ্রিয়। ফোন রেখে মন্ত্রীর আশ্বাস, ‘‘আশা করছি দিন দশেকের মধ্যে ডেঙ্গির প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে।’’ কিন্তু মন্ত্রী চিন্তিত। কেন প্রত্যেকবার হাবড়াতেই ডেঙ্গি থাবা বসাচ্ছে।

আড়াইটে নাগাদ জ্যোতিপ্রিয় ঘুমোলেন। ভোর ৫টার সময় উঠে গ্রামের পথেই হাঁটতে বেরোলেন মন্ত্রী। পথ চলতি মানুষ, মাঠে যাওয়া চাষিদের সঙ্গে কথা বললেন ডেকে ডেকে। যা দেখে গ্রামের মানুষের ফিসফিসানি, ‘‘রোজই যদি মন্ত্রীকে হাতের কাছে এ ভাবে পেতাম, তাহলে আর কোনও সমস্যা হত না।’’

তবে এ সব শুনে বিরোধীরা অবশ্য কটাক্ষ করতে ছাড়ছেন না। তাঁদের কথায়, ‘‘লোকসভা ভোটে তৃণমূল মরে গিয়েছি। এখন কোরামিন দিয়ে বাঁচানোর চেষ্টা চলছে। এতে কোনও লাভ নেই। মানুষ তাঁদের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jyotipriyo Mullick TMC Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE