কাকদ্বীপ মাছের বাজার। —নিজস্ব চিত্র।
এলাকার ৯০ শতাংশ মানুষই মৎস্যজীবী। কিন্তু এখনও হাল ফিরল না কাকদ্বীপের বীরেন্দ্র আড়তদার মাছ-বাজারের।
মাছ কিনতে গিয়ে ক্রেতারা নাকাল হচ্ছেন। বিক্রেতাদেরও গলদঘর্ম হতে হচ্ছে বছরভর। বাজার চত্বরে কোনও শৌচাগার নেই। পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই। গড়ে ওঠেনি মাছ সংরক্ষণের ব্যবস্থা। রয়েছে আরও নানা সমস্যা। এমনকী, মাছের ট্রাকে যানজট বাজার চত্বর ছাড়িয়ে ছড়িয়ে যায় রাস্তাতেও।
এ ভাবেই দিনের পর দিন চলছে ওই মাছ-বাজার।
শহরের ১১৭ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে বাজারটি চলছে প্রায় ৩০ বছর। অন্তত ৩০টি ছোট-বড় আড়ত রয়েছে। কাকদ্বীপ ছাড়াও পাথরপ্রতিমা, নামখানার বহু মৎস্যজীবী ওই বাজারে পাইকারি দরে মাছ বিক্রি করতে আসেন। বাজার চলে ভোর ৪টে থেকে ৮টা পর্যন্ত। তবে, ইলিশের মরসুম এলে দুপুর গড়িয়ে যায়। এমনই একটি ব্যস্ত বাজারের পরিকাঠামো এখনও সে ভাবে গড়ে ওঠেনি। কোনও ছাউনি না থাকায় রোদ-বৃষ্টিতে ক্রেতা-বিক্রেতাদের খোলা আকাশের নীচেই কাটাতে হয়। সেই পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থাও। এমনকী পাশের কাকদ্বীপ মৎস্যবন্দরটিকেও যথাযথ ভাবে গড়ে তোলার জন্য কিন্তু বন্দর কর্তৃপক্ষ কোনও ব্যবস্থাই নেয় না বলে অভিযোগও রয়েছে। যদিও সেই অভিযোগ বন্দর কর্তৃপক্ষ মানেননি।
ইলিশের মরসুমে প্রচুর মাছ নিয়ে এসেও সমস্যায় পড়তে হয় ব্যবসায়ীদের। তাঁদের অভিযোগ, আড়তটি ছোট হওয়ায় মাছ ঠিকমতো সংরক্ষণ করা যায় না। অনেক সময় রাস্তাতে মাছ ফেলে নিলাম করা হয়। তার জেরে মাছ নষ্টও হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হন মৎস্যজীবীরা। পাইকারি বাজারে নেই কোনও নিকাশি-নালার ব্যবস্থা। ফলে, মাছ রাখার বরফ গলা জল ওই চত্বরে জমে যায়। দুর্গন্ধে বেশি ক্ষণ কাটানো দায় হয়। মাছেরও ক্ষতি হয়। রাতভর নামখানা ও পাথরপ্রতিমা এলাকা থেকে গাড়িতে মাছ আসে বাজারে। কিন্তু গাড়ি রাখার জায়গা নেই। গাড়িগুলিকে জাতীয় সড়কের পাশে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। এটিও এই বাজারের একটি বড় সমস্যা। যার জেরে ইলিশের মরসুমে এলাকায় যানজটে আটকে বহু দূরপাল্লার বাস। স্কুল-কলেজের পড়ুয়া-সহ অফিস যাত্রীদের সমস্যায় পড়তে হয়।
মৎস্যজীবীদের অভিযোগ, আড়তে মাছ বিক্রি করতে গেলে অনেক সময়েই নানা ভাবে কর চাপিয়ে হেনস্থা করা হয়। ৪০ কেজি মাছ বিক্রি হলে আড়তদারকে তিনটি মাছ দিতে হয়। তবে, এমন অভিযোগ আড়তদাররা মানেননি। বাজারের সম্পাদক দুলাল দাস বলেন, ‘‘সরকারি জমির উপর আড়তগুলি রয়েছে। কখন ভেঙে দিতে হবে ঠিক নেই। পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য আট-দশ লক্ষ টাকা লাগবে। সেই ক্ষমতা আমাদের নেই। পঞ্চায়েতকে বলেছি। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা হয়নি।’’
বাজারে মৎস্যজীবীদের হয়রানি থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য মুড়িগঙ্গা নদীর ধারে তৈরি হয়েছিল মৎস্যবন্দর। কিন্তু সেখানে দোকান এতই ছোট যে নিলামের জায়গা না থাকায় বাজারেই তাঁদের যেতে হয় বলে বিক্রেতারা জানান। মৎস্যজীবীদের অভিযোগ, মৎস্যবন্দরের পাইকারি বাজারটি বড় করার জন্য একাধিকবার বন্দর কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাঁদের দাবি, পাইকারি বাজারটি ঠিক হলে অনেক সুবিধা মিলবে। মুড়িগঙ্গা লাগোয় বন্দরটিতে সরাসরি ট্রলার ঢুকে যেতে পারবে। এ ছাড়া মাছের বরফ সহজেই পাওয়া যাবে। মৎস্যজীবীদের অন্যতম সংগঠন, ‘পশ্চিমবঙ্গ ইউনাইটেড অ্যাসোশিয়েশন’-এর সহ-সম্পাদক বিজন মাইতি বলেন, ‘‘পুরনো ওই বাজারে মাছ বিক্রি করতে গিয়ে নানা সমস্যা হচ্ছে। মৎস্যবন্দরের বাজারটির পরিকাঠামো ঠিক করার জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’’
মৎস্যবন্দরের ইনচার্জ অসীম ধারা অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন, বন্দরের বাজারের ছোট দোকানগুলি বড় করার ব্যবস্থা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy