ভোট বড় বালাই!
কামারহাটি পুরভোটের দিন ঘোষণার কয়েক দিন আগে তড়িঘড়ি করে দক্ষিণেশ্বর স্কাইওয়াক প্রকল্পের শিলান্যাস করেছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে সেই কাজ শুরু করতে গিয়ে মন্দিরে ঢোকার রাস্তার দু’ধারের দোকানদারদের বাধার মুখে পড়তে হয়েছিল কেএমডিএ আধিকারিকদের। কিন্তু সরকারি প্রকল্পের সেই কাজ শুরু করার জন্য প্রশাসনকে কোনও কড়া মনোভাব নিতে দেখা যায়নি। উল্টে ভোটের পরে আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করা হবে বলেই সম্প্রতি ব্যবসায়ীদের চিঠি দিলেন স্থানীয় তৃণমূল পুর-কর্তৃপক্ষ।
বিরোধীরা অবশ্য বলছেন অন্য কথা। তাঁদের অভিযোগ, নিজেদের ভোট ব্যাঙ্ক বজায় রাখতেই দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের সামনের রাস্তার দু’ধারে ব্যবসায়ীদের এখনই চটাতে রাজি নয় তৃণমূল। তাই এই চিঠি। বিরোধীদের এই অভিযোগ মানতে রাজি নন স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা কামারহাটির বিদায়ী পুরবোর্ডের চেয়ারম্যান গোপাল সাহা। তিনি বলেন, ‘‘কুৎসা রটানো বিরোধীদের কাজ। ভোটের আগে সবাই ব্যস্ত রয়েছেন।
তাই বলা হয়েছে ভোট মিটলে আলোচনা করা হবে। এর মধ্যে ভোট ব্যাঙ্কের কি আছে?’’
শুধু মন্দিরই নয় ওই এলাকায় ঢোকা-বেরনোর জন্য রানি রাসমণি রোডই একমাত্র রাস্তা। সংকীর্ণ এই রাস্তার দু’ধারে প্রসাদ, সাজসজ্জার জিনিস, আচার, হোটেল-সহ হরেক দোকান রয়েছে। প্রতিনিয়ত সেই সব দোকানের ক্রেতাদের ভিড়ের সঙ্গে মন্দিরে আসা যানবাহনের জটে রানি রাসমণি রোডে চলাফেরা করাই দায় হয়ে ওঠে। দীর্ঘ দিন ধরেই সমস্যা সমাধানের জন্য প্রশাসনের কাছে আর্জি জানাচ্ছিলেন দক্ষিণেশ্বর মন্দির কর্তৃপক্ষ। সেই মতো রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নেয় রানি রাসমণি রোডে যানজট সমস্যা মেটানোর জন্য একটি স্কাই ওয়াক তৈরি করা হবে। গত ১৭ মার্চ সেই প্রকল্পের শিলান্যাস করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে ওই রাস্তার কাজ শুরুর জন্য ফলক লাগাতে গিয়ে কেএমডিএ-র আধিকারিকদের আটকান দোকানদাররা। তাঁরা দাবি করেন, নিচেই সব দোকান রাখতে হবে। দু’দিন দোকান বন্ধ করে আন্দোলনও করেন দোকানদারেরা। তবে প্রথমে কেএমডিএ-র তরফেও বলা হয়েছিল, ব্যবসায়ীরা কয়েক দিন সময় চেয়েছেন। এর পরেও সমস্যা করলে কড়া হাতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কিন্তু কামারহাটি পুরভোটের কথা মাথায় রেখে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম অবশ্য প্রথম থেকেই দোকানদারেদের বিরুদ্ধে হাঁটতে চাননি। দোকানদারেদের আন্দোলনের কথা শুনলেও তিনি জানিয়েছিলেন, ভোট মিটলে সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা মেটানো হবে। মন্ত্রীর সেই দেখানো পথেই অবশ্য হাঁটছেন কামারহাটির চেয়ারম্যান গোপালবাবুও। তিনিও ভোটের আগে কোনও বিবাদের মধ্যে যেতে চাননি। তাই আন্দোলন শুরু হতেই তিনি চিঠি পাঠিয়ে দোকানদারেদের ক্ষোভ সাময়িক ভাবে প্রশমিত করেছেন বলেই স্থানীয় রাজনৈতিক সূত্রের খবর।
কামারহাটির প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক তথা উত্তর ২৪ পরগণা জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য মানস মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ভোটের আগে দোকানদারেদের চটাতে চাইছেন না তৃণমূল নেতারা। তাই এখন মিথ্যা কথায় তাঁদের ভুলিয়ে রাখা হচ্ছে।’’ আবার বিজেপির উত্তর কলকাতা শহরতলি জেলা সভাপতি গোপাল সরকার বলেন, ‘‘আগে দোকানদারদের পুনর্বাসন ব্যবস্থা না করেই মুখ্যমন্ত্রী এই নতুন ধোঁকা দিলেন। ভোটের আগে তাই তড়িঘড়ি করে স্কাইওয়াকের শিলান্যাস করে দিয়েছেন।’’
তবে বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি করতে রাজি নন দোকানদারেরা। রানি রাসমণি রোড দোকানদার সমিতির সভাপতি কালীপদ বর্মণ বলেন, ‘‘আমরা উন্নয়নে বাধা দিইনি। তাই রাজনীতিও করতে চাই না। শুধু নিজেদের দাবিটুকু বলেছি। এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy