Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Cyclone Amphan

জনপ্রতিনিধির ছেলের নামে টাকা, ফেরালেন নেতা

ইতিমধ্যে শাসক এবং বিরোধী দলের একাধিক নেতানেত্রীর পাকা বাড়ি থাকা সত্ত্বেও সরকারি টাকা নেওয়ার জন্য তালিকায় নাম তুলতে দেখা যায়।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বসিরহাট শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২০ ০৫:৩৯
Share: Save:

বাড়ি অক্ষত থাকলেও ঘরভাঙার ক্ষতিপূরণের টাকা নেওয়ার তালিকায় নাম তোলার অভিযোগ উঠল হিঙ্গলগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ তথা ব্লক তৃণমূলের সভাপতি সহিদুল্লাহ গাজির পরিবারের ৫ সদস্য এবং পঞ্চায়েত সমিতির আর এক কর্মাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। কেউ কেউ টাকা পেয়েও গিয়েছেন। আবার কয়েকজন টাকা ফিরিয়ে দিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন। টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার ঘটনায় দলের নেতাদের ‘সততা’ প্রমাণ হয় বলেই মনে করছেন উপর মহলের নেতারা। যদিও বিরোধীদের মতে, দুর্নীতি ধরা পড়ে যাওয়ায় ওঁরা টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হচ্ছেন। ওঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা কেন নেওয়া হবে না, সে প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা। তাদের দাবি, সর্ষের মধ্যে ভূতের বাসা যে কত গভীরে, ব্লক সভাপতির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ থেকেই তা স্পষ্ট। যদিও এর পিছনে ‘চক্রান্ত’ দেখতে পাচ্ছেন সহিদুল্লাহ।

ইতিমধ্যে শাসক এবং বিরোধী দলের একাধিক নেতানেত্রীর পাকা বাড়ি থাকা সত্ত্বেও সরকারি টাকা নেওয়ার জন্য তালিকায় নাম তুলতে দেখা যায়। অনেকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকেও যায়। তা নিয়ে রাজ্যের নানা প্রান্তে ক্ষোভ-বিক্ষোভ লেগেই আছে।

হিঙ্গলগঞ্জের ঘটনায় পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অর্চনা মৃধা বলেন, ‘‘আগে বিডিও এবং আমি তালিকা খতিয়ে দেখব। তাতে যদি কেউ অনৈতিক ভাবে তালিকায় নাম তুলেছেন বা টাকা পেয়েছেন বলে জানা যায়, তা হলে তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ বিডিও সৌম ঘোষ বলেন, ‘‘অনৈতিক ভাবে টাকা নেওয়ায় ১০ জন টাকা ফেরত দিয়েছেন। ইতিমধ্যে ১২ হাজার গরিব মানুষ সরকারি সাহায্য পেয়েছেন। আরও ২৬ হাজার নামের তালিকা সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠানো হয়েছে।’’

হিঙ্গলগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য তথা ব্লকের তৃণমূলের সভাপতি সহিদুল্লাহ গাজি বলেন, ‘‘আমার নাম তালিকায় নেই। বুথ কমিটির পক্ষে ঘরভাঙার তালিকা করা হয়। আমাকে বদনাম করতে পরিকল্পনা করে কেউ ছেলের নামে ভুয়ো নথি জোগাড় করে তালিকায় তুলে দিয়েছে। আমরা ওই টাকা চাই না বলে ব্লককে জানিয়ে দিয়েছি।’’ সহিদুল্লার কথায়, ‘‘বোন এবং ভাগ্নের ঘর ভাঙায় তাদের নাম তালিকায় তোলা হয়েছে। সেটা অন্যায় নয়। তবে ভাই ও তার স্ত্রীর নামে আসা ঘরভাঙার টাকা তারা ইতিমধ্যে ফেরত দিয়ে দিয়েছে।’’

এ বিষয়ে বিজেপির সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তারক ঘোষ বলেন, ‘‘পাকা ঘর থাকা সত্ত্বেও তৃণমূলের লোকেরা নিজেদের পরিবারের একাধিক সদস্যের নামে যে টাকা তুলে নিচ্ছে। ওদের দলের ব্লক সভাপতির ঘটনায় তা আরও স্পষ্ট হল। যেখানে মানুষ প্রতিবাদের সুযোগ পাচ্ছে, সেখানেই তৃণমূলের দুর্নীতি ধরা পড়ছে।’’ সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য শ্রীদীপ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘তৃণমূল যে চূড়ান্ত দুর্নীতি করেছে, এটা তারই একটা উদাহরণ। কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। অপরাধীদের শাস্তির জন্য আমরা আন্দোলন করব।’’

দলীয় নেতৃত্বের পরিবারের এমন ঘটনায় রীতিমতো অস্বস্তিতে পড়েছে তৃণমূল। জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ তথা তৃণমূল নেতা ফিরোজ কামাল গাজি বলেন, ‘‘গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকায় বুথস্তরের সব খবর সহিদুল্লা গাজির পক্ষে রাখা সম্ভব নয়। কেউ ওঁকে ফাঁসিয়ে দিতে পারে। উনি জানতে পারার সঙ্গে সঙ্গে টাকা ফেরত দিয়েছেন। এতে ওঁর সততা এবং স্বচ্ছতাই প্রমাণ হয়।’’

তিনি বলেন, ‘‘ক্ষতিপূরণের টাকা নিয়ে যে-ই দুর্নীতি করুক না কেন, তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনও কাজ না করে বিরোধীরা এখন ঘোলাজলে মাছ ধরার চেষ্টা করছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cyclone Amphan Cyclone
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE