তালা: সপ্তাহে একদিন খোলা হয় এই গ্রন্থাগার। নিজস্ব চিত্র
দীর্ঘ দিন ধরে কর্মী নিয়োগ করা হয়নি। সে জন্য একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে পাঠাগার। আবার কোথায় কোনও রকমে চলছে গ্রন্থাগারগুলি।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার বেশ কিছু পাঠাগারেরই এই অবস্থা। দিন কয়েক আগে কুলপির করঞ্জলি উন্নতি বিধায়িনী পাঠাগারে গিয়ে দেখা গেল গেটে তালা ঝুলছে। বাসিন্দারা জানান, বছরখানেক আগে গ্রন্থাগারিক অবসর নিয়েছেন। তারপর থেকে পাঠাগার বন্ধ। অনেক বছর পরে এখন সপ্তাহে এক দিন করে ওই পাঠাগার খোলা হয়। পাশেই করঞ্জলি গার্লস স্কুল। পাঠাগারটি পুরোপুরি খোলা হলে ছাত্রীরা উপকৃত হবে।
এ কথা মেনে নিয়েছেন ওই পাঠাগারের গ্রন্থাগারিক শঙ্কর সর্দার। তিনি বলেন, ‘‘কুলপি, দুর্গানগর ও সবুজ সঙ্ঘের পাঠাগারটি চালাতে হয় আমাকে। সেখানেও পড়ুয়াদের ভিড় যথেষ্ট। সেগুলি সামলে সপ্তাহে একদিন আসি এখানে।’’
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় ডায়মন্ড হারবার, বারুইপুর, কাকদ্বীপ ও আলিপুর এই চার মহকুমায় গ্রামীণ ও টাউন মিলিয়ে ১৫৬টি পাঠাগার রয়েছে। এর মধ্যে কর্মী ও পরিকাঠামোর অভাবে তালা বন্ধ পাঠাগারের সংখ্যা ২৪টি। কর্মীদের একাংশের বক্তব্য, ‘‘কর্মী অবসর নিচ্ছেন। কিন্তু নতুন করে নিয়োগ হচ্ছে না। আর বছরখানেকের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ কর্মী অবসর নেবেন। তাতে অধিকাংশ পাঠাগার বন্ধ হয়ে যাবে।’’
বহু বছর আগে গ্রামের গরিব পরিবারের ছেলে-মেয়েরা বইয়ের অভাবে পড়াশোনা ঠিকমতো করতে পারত না। সে সময়ে গ্রামেরই যুবকেরা মিলে কোনও ক্লাব ঘরে বা কারও বৈঠকখানায় নিজেদের চাঁদার টাকায় বই কিনে পড়াশোনার ব্যবস্থা করেছিল। ১৯৮০-৮১ সালে সেগুলিই সরকারি পাঠাগার হয়। পাঠাগারে ছাত্রছাত্রীদের পাঠ্য পুস্তকের পাশাপাশি গল্পের বই, চাকরির পরীক্ষার বই এমনকী, দেশ-বিদেশের নানা খবরের ম্যাগাজিন, খবরের কাগজ, বিনোদনমূলক নানা বই পড়ার সুযোগ মিলত। তাতে দুঃস্থ ছাত্রছাত্রীদের সুবিধাই হত।
জেলা জুড়ে পাঠাগারের বেহাল পরিকাঠামোর জন্য বাসিন্দারা দায়ী করেছেন কর্তৃপক্ষকে। তাঁদের অভিযোগ, আগে গ্রামে বা শহরে খেলাধূলা করার মাঠ ছিল। এখন সে সব হারিয়ে যাচ্ছে। ছেলেমেয়েরা পাঠাগারে গিয়ে পড়াশোনা করবে তারও উপায় নেই।
ডায়মন্ড হারবারের এক পাঠক বনশ্রী মণ্ডলের কথায়, ‘‘যতই ইন্টারনেট পরিষেবা আসুক, বই পড়ার মজা আলাদা। বইয়ে মুখ ঢুকিয়ে রাখার থেকে কম্পিউটারে চোখ রাখা অনেক কষ্টের। তাই সমস্ত পাঠাগারের পরিষেবা আরও উন্নত করা উচিত।’’
রাজ্যের গ্রন্থাগারমন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী জানান, রাজ্যে ২৪৮০টি গ্রন্থাগার আছে। এর মধ্যে কর্মীর অভাবে ২০৮টি বন্ধ। তবে বাম জমানা থেকে ২২১টি বন্ধ ছিল। তাঁর কথায়, ‘‘কর্মী নিয়োগ নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বহুবার আলোচনা হয়েছে। চুক্তিভিত্তিক অবসরপ্রাপ্ত ১৮৪ জন কর্মী নিয়োগ করার প্রস্তুতি চলছে।’’ ৩০০ গ্রন্থাগারের শৌচাগার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy