Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

রাস্তাঘাটে গান শোনা ডেকে আনছে বিপদ

ব্যস্ত স্টেশন তখন অফিস যাত্রীদের ভিড়ে সরগরম। একের পর এক ট্রেন ঢুকছে। চোখে পড়ল, একজনের পিঠে ব্যাকপ্যাক। কানে হেডফোন। লাইন পার হচ্ছিলেন। কোনও দিকে তাকিয়েও দেখলেন না। সটান পার হয়ে গেলেন। 

বেপরোয়া: এই অভ্যাস বদলাবে কবে? ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

বেপরোয়া: এই অভ্যাস বদলাবে কবে? ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

সুপ্রকাশ মণ্ডল
শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৪:৫৯
Share: Save:

ব্যস্ত স্টেশন তখন অফিস যাত্রীদের ভিড়ে সরগরম। একের পর এক ট্রেন ঢুকছে। চোখে পড়ল, একজনের পিঠে ব্যাকপ্যাক। কানে হেডফোন। লাইন পার হচ্ছিলেন। কোনও দিকে তাকিয়েও দেখলেন না। সটান পার হয়ে গেলেন।

ঘটনাস্থল শ্যামনগর স্টেশন।

তার আগের সন্ধ্যাতেই এই শ্যামনগরে ঘটে গিয়েছে, দুর্ঘটনা। কানে হেডফোন নিয়ে লাইন পার হচ্ছিলেন দুই তরুণী। সে সময়ে আপ লাইনে ঢুকছিল কলকাতা-লালগোলা ধনধান্য এক্সপ্রেস। অন্যান্য যাত্রীরা তাঁদের বারবার সাবধান করলেও কানে যায়নি তাঁদের।

ওই লাইনে ট্রেন আসতে দেখে তাঁদের বাঁচাতে এক রকম লাইনে ঝাঁপিয়ে পড়েন নৈহাটি বিজয়নগরের বাসিন্দা জীবন সরকার। দুই তরুণীর জীবন বাঁচলেও ট্রেনের ধাক্কা খান জীবন। আপাতত কলকাতায় চিকিৎসাধীন।

ওই ঘটনার পরেও যে যাত্রীদের হুঁশ ফেরেনি, শুক্রবার সকালে তা দেখা গেল শ্যামনগর স্টেশনেই। বেশ কয়েক জনকে দেখা গেল, কানে হেডফোন গোঁজা অবস্থায় গুন গুন করতে করতে লাইন পারাপার করছেন। এমনকী, লাইন পারাপারের সময়ে কেউ তাকিয়েও দেখছেন না ট্রেন আসছে কিনা। অথচ রেল বারবার প্রচার করছে, লাইন পারাপার না করার জন্য। দিন কয়েক আগে নৈহাটি স্টেশনে আরপিএফ লাইন পারাপার করার জন্য ২২ জনকে গ্রেফতার করেছিল। তাতেও যে কারও টনক নড়েনি, তার প্রমাণ মিলল এ দিনও।

এক তরুণীকে লাইন পার হওয়ার সময়ে প্রশ্ন করা গেল, কানে হেডফোন গুঁজে কেন লাইন পার হচ্ছেন? প্রথমে কিছুই শুনতে পেলেন না। ইশারায় জানতে চাইলেন কী হয়েছে। পরে কান থেকে হেডফোন খুলে এক গাল হেসে ফেললেন। বললেন, ‘‘আসলে আমি এ ভাবে কানে হোডফোন রাখি না। তাড়াহুড়োয় আজ খুলতে ভুলে গিয়েছি।’’ গত সন্ধ্যার ঘটনা তিনি জানেন কি? জবাব এল ‘না’। ঘটনা শুনে বললেন, ‘‘এ রকম আর হবে না।’’ কিন্তু ওভারব্রিজ না ধরে লাইন পারাপারই বা করছেন কেন? বিপদ তো সেখানেও। আর কথা না বাড়িয়ে হেডফোন খুলে হাঁটা লাগালেন তিনি।

মাঝবয়সী এক ব্যক্তিও হেডফোন কানে দিব্যি লাইন পার হচ্ছিলেন। ডাউন লাইন পার হতেই হুশ করে পার হয়ে গেল একটি ট্রেন। আপ লাইনে তখন ট্রেন ঢুকছিল। মুখোমুখি হতে থমকে দাঁড়ালেন তিনি। লাইন পারাপার করছেন কেন? কানে হেডফোনই বা কেন? থতমত খেয়ে হেডফোন খুলে ফেললেন। তবে প্রশ্নের উত্তর দিলেন না। আপ ট্রেন চলে যেতেই প্রায় দৌড় লাগালেন ভদ্রলোক।

ট্রেনে বাদাম ফেরি করেন তুষার বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘‘রেল প্রচার করছে, পুলিশ ধরপাকড় করছে। তারপরেও রোজ দেখছি, অসংখ্য মানুষ কানে হেডফোন লাগিয়ে লাইন পার করছেন, রাস্তায় হাঁটছেন। আমি নিজে দু’জনকে ট্রেনের ধাক্কায় এ ভাবে মরতে দেখেছি।’’ একই অভিজ্ঞতা জানালেন খড়দহের সুনীল সরকার। মাস তিনেক আগে এই স্টেশনেও হেডফোন কানে লাইন পার হতে গিয়ে প্রাণ গিয়েছিল এক স্কুল ছাত্রের। সুনীল বলেন, ‘‘দিন কয়েক আগে সাইকেল নিয়ে লেভেল ক্রসিং পার হচ্ছিলাম। দেখি, পাশ দিয়ে হেডফোন কানে হাঁটছে একটি অল্পবয়সী মেয়ে। একটি অটো অনেকক্ষণ ধরে হর্ন বাজালেও শুনতে পাচ্ছিল না সে। আমি শেষ পর্যন্ত মেয়েটাকে হাত ধরে টেনে সরিয়ে আনি।’’ তিনি মনে করেন, এই বিষয়ে অভিভাবকদের আরও সচেতন হওয়া দরকার। তাঁরা ছেলেমেয়েদের বোঝান, এ ভাবে চলাফেরা করতে গিয়ে কী ভয়ানক বিপদ ডেকে আনতে পারে তারা!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

music Phone Rail
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE