অপরিষ্কার: মৃতার বাড়ির পিছনে রয়েছে নোংরা ডোবা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
দিন কয়েক ধরে জ্বরে ভুগছিলেন গাইঘাটার মহিলা। শনিবার রাতে বারাসতের একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে গীতারানি দেবনাথ (৫৮) নামে ওই মহিলার মৃত্যু হয়।
এই ঘটনার পর থেকেই গাইঘাটার থানার মোড়ের বাসিন্দারা ডেঙ্গির আতঙ্কে ভুগছেন। নড়েচড়ে বসেছে ব্লক প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতরও। প্রাশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই মহিলার মৃত্যু শংসাপত্রে মৃত্যুর কারণ লেখা হয়েছে ‘রাইট সাইডেড নিউমোনিয়া’, ‘সেপ্টিসেমিয়া’। কিন্তু প্রশাসনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, গীতাদেবীর রক্ত পরীক্ষায় এনএস১ পজেটিভ মিলেছিল।
রবিবার সকাল থেকে প্রশাসনের কর্মীরা এলাকায় মশা মারতে নেমে পড়েন। তাঁরা এলাকায় ঘুরে ঘুরে মশা মারার তেল স্প্রে করছেন। তবে এই ঘটনার পর এ দিন ব্লক প্রশাসন ও ব্লক স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা জরুরি বৈঠক করেছেন। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গীতার বাড়ির আশপাশের ৫০টি বাড়িতে সমীক্ষা করে দেখা হচ্ছে, কারও বাড়িতে কেউ জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন কিনা। কেউ জ্বরে আক্রান্ত থাকলে দ্রুত তাঁর রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
মহকুমাশাসক কাকলি মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ব্লক স্বাস্থ্য ও প্রশাসনের তরফে গাইঘাটার পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে। মশা মারতে লাগাতার অভিযান শুরু হয়েছে।’’
প্রশাসন ও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, গীতা স্থানীয় চাঁদপাড়া ব্লক গ্রামীণ হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী। জুলাই মাসের শেষ দিকে পুরীতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। ৩ অগস্ট বাড়ি ফেরেন তিনি। তারপরই জ্বরে আক্রান্ত হন। বৃহস্পতিবার তাঁকে বারাসতের ওই বেসরকারি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়। সেখানেই তিনি মারা যান।
রবিবার দুপুরে গীতার বাড়িতে অনেকেই জড়ো হয়েছিলেন। তাঁরা জানান, গীতা জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন জানতে পেরে অনেকেই নিজেরাই মশা মারার তেল কিনে এনে বাড়িতে ছড়াচ্ছেন। স্থানীয় বাসিন্দা টুটুলকুমার দত্ত বলেন, ‘‘এলাকায় মশার উপদ্রব বেড়েছে। তেল কিনে এনে বাড়ির চারপাশে ছাড়াতে শুরু করেছি।’’
বাসিন্দারা জানান, সন্ধ্যার পর থেকে মশার দৌরাত্ম্য শুরু হয়েছে। মশারি ছাড়া ঘুমনো যাচ্ছে না। পড়ুয়ারা মশারির মধ্যে বসে লেখাপড়া করছে। এলাকাটি ইছাপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনে। ওই এলাকায় রয়েছে যমুনা নদী। গ্রামবাসী জানান, নদী কচুরিপানায় ভরে রয়েছে। তার ফলেও মশার উপদ্রব বেড়েছে।
গীতাদেবীর বাড়ির ঠিক পিছনে রয়েছে বড় একটি ডোবা। তাতে আবর্জনাও রয়েছে। পাশে কচু ও কলা বাগান। মশার আঁতুড় ঘরে পরিণত হয়েছে এলাকাটি। স্থানীয় এক দোকানি বলেন, ‘‘বিকেলের পর পিছনের দরজা বন্ধ রাখতে হয়। না হলে মশার কামড়ে থাকা যায় না।’’
অভিযোগ, পঞ্চায়েত ও প্রশাসনের তরফে নিয়মিত মশা মারা হয় না। এলাকার বাসিন্দারা জানান, মাস দেড়েক আগে এলাকায় শেষবার মশা মারার তেল স্প্রে করা হয়েছিল। মাঝে মধ্যে ধোঁয়া দেওয়া হয়। কিন্তু তাতে মশা মরে না। উল্টে বাইরের মশা ঘরে ঢুকে পড়ে।
গত বছর গাইঘাটা ব্লকে জ্বর ডেঙ্গির প্রকোপ ছড়িয়েছিল। কয়েকজন মারাও গিয়েছিলেন। অভিযোগ, তারপরও এ বছর আগে ভাগে নিয়মিত মশা মারা হচ্ছে না। প্লাস্টিক ব্যবহারেও রাশ টানা হয়নি। পরিষ্কার করা হয় না নিকাশি নালাগুলিও।
প্রশাসনের দাবি, এখন প্রতি মাসে ৭ দিন করে সব পঞ্চায়েতে মশা মারা, জঙ্গল সাফাই, জমা জল পরিষ্কার করা হচ্ছে। তবে গাইঘাটা ব্লকে সরকারি ভাবে এখনও ডেঙ্গির রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। ফলে সাধারণ মানুষকে বাইরে থেকে মোটা টাকা খরচ করে রক্ত পরীক্ষা করাতে হচ্ছে। পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি ধ্যানেশ নারায়ণ গুহ বলেন, ‘‘চাঁদপাড়া হাসপাতালে অ্যালাইজা টেস্টের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy