Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

সমস্যা চুলোয় যাক, আলোচ্য শুধুই দুই প্রার্থী

ব্যারাকপুরে ভোটের লড়াই শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এমন নানা সমস্যা নিয়ে লড়াই কোথায়?

অর্জুন সিংহ। —ফাইল চিত্র।

অর্জুন সিংহ। —ফাইল চিত্র।

সুপ্রকাশ মণ্ডল
ব্যারাকপুর শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৯ ০০:৪০
Share: Save:

রাস্তাঘাট, পানীয় জল, শিল্প-পরিকাঠামো, নোটবন্দি, জিএসটি— বিষয়ের অন্ত নেই।

ব্যারাকপুরে ভোটের লড়াই শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এমন নানা সমস্যা নিয়ে লড়াই কোথায়? বরং ব্যারাকপুরে এখন লড়াইয়ের কেন্দ্রে দুই শিবিরের প্রার্থী। বাজার-হাট, চায়ের দোকান, বাস-ট্রেন— সর্বত্র একটাই আলোচনা। তৃণমূল-ত্যাগী অর্জুন সিংহ জিতবেন, না তৃণমূল প্রার্থী দীনেশ ত্রিবেদী?

কেন অর্জুন জিতবেন, তার নানা ব্যখ্যা। আবার কেন তিনি জিতবেন না, তারও হাজার ফিরিস্তি ঘুরছে লোকমুখে। সাধারণ মানুষের একটা অংশ তো বটেই, যুযুধান দু’পক্ষও মেতে আছে ওই এক প্রচারে। শেষ পর্যন্ত লড়াই গিয়ে ঠেকেছে দুই প্রার্থীকে ব্যক্তিগত আক্রমণে।

বছরখানেক আগেও ভাটপাড়ার বিধায়ক তথা পুর প্রধান অর্জুন ছিলেন ভোটে তৃণমূলের অন্যতম সেনাপতি। কিছু বছর আগে হওয়া নোয়াপাড়া উপনির্বাচনে কার্যত একার দায়িত্বেই তিনি ভোট করেছিলেন। তৃণমূল নেতাদের অভিযোগ ছিল, সেই ভোটে তিনি দলের নেতাদেরও কাজ করতে দেননি। যার ফলে দলের অনেক নেতাই বিরূপ হয়েছিলেন। ভোট নিয়ে গা-জোয়ারিরও বিস্তর অভিযোগ উঠেছিল।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

তৃণমূলের এক নেতা জানাচ্ছেন, আসলে দল তখন অর্জুনকে অন্ধ ভাবে বিশ্বাস করেছিল। তৃণমূল থেকে মুকুল রায়ের বিদায়ের পরে ব্যারাকপুর এলাকায় দল ভরসা করেছিল তাঁর উপরেই। তা নিয়ে দলে বিস্তর জলঘোলা হলেও কেউ টুঁ শব্দ করার সাহস পাননি। এখন তাঁরাই অর্জুনের বিরুদ্ধে প্রচারে নেমেছেন।

তৃণমূলের তরফে এ বারের ভোটে বিষয়ের অন্ত নেই। আগে থেকেই ঠিক ছিল, অন্য এলাকার মতো বিজেপির ‘অপশাসন’, নোটবন্দি, জিএসটি-সহ একাধিক বিষয় নিয়ে এলাকায় এলাকায় প্রচার হবে। প্রার্থী ঘোষণার পরে তা নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয়ে গিয়েছিল প্রচার। কিন্তু অর্জুন বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরে বদলে গিয়েছে প্রচারের চিত্রনাট্য।

অন্য দিকে, বিজেপিও প্রচারের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে ফেলেছিল। ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের দুরবস্থা, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, নেতাদের দুর্নীতি, রাস্তাঘাট, পানীয় জল-সহ একাধিক সমস্যা তৈরি ছিল তাদের ভাবনায়। কিন্তু অর্জুন বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরে তাদেরও সেই সব বিষয় আড়ালে চলে গিয়েছে। কারণ, অর্জুনের বিজেপিতে যোগ দেওয়া মেনে নিতে পারেননি দলেরই বহু নেতা-কর্মী-সমর্থক। ফলে ঘর গুছিয়ে পরিকল্পনা মতো প্রচারে যেতে পারছেন না তাঁরা। আপাতত দীনেশকে নিশানা করেই চলছে তাঁদের প্রচার।

এরই মধ্যে তৃণমূল অর্জুনকে লক্ষ্য করে একের পর এক আক্রমণ শানিয়ে যাচ্ছে। তৃণমূল নেতাদের বক্তব্য, অর্জুন দলের কথা না শুনে এলাকায় গুন্ডারাজ চালু করেছিলেন। তিনি চলে গিয়ে দলের আখেরে লাভই হয়েছে। অর্জুন যাওয়ায় দলের সব নেতাকে একযোগে ভোটের কাজে নামানো গিয়েছে।

পাল্টা বিজেপি শিবিরও দীনেশকে বহিরাগত বলে আক্রমণ শানাচ্ছে। অর্জুন নিজেই বলছেন, ‘‘সাংসদ গত পাঁচ বছরে এলাকায় আসেননি। ফলে মানুষ তাঁর উপরে বিরক্ত। সেই জন্য বিজেপিই ভোটারদের পছন্দ।’’ দীনেশ অবশ্য বলছেন, ‘‘মানুষ কাকে পছন্দ করবেন, কাকে করবেন না, ভোটের ফলেই তা প্রমাণ হবে।’’

সরকারি ভাবে বিজেপি অবশ্য এখনও প্রার্থী ঘোষণা করেনি। ফলে অর্জুনকে আক্রমণ করা হলে বিজেপি তা এই বলে ফেরাচ্ছে যে, প্রার্থী এখনও ঘোষণা হয়নি। ফলে কে লড়বেন, তা-ই এখনও ঠিক নয়। তবে অর্জুন যে ভোটের কাণ্ডারী, তা নিয়ে মতভেদ নেই পদ্ম শিবিরে।

যদিও অর্জুন ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, নেতাজি (অর্জুনকে এই নামেই ডাকেন তাঁর অনুগামীরা) দিল্লি থেকে পাকা কথা আদায় করেই এসেছেন। সম্প্রতি তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া এক আইনজীবীকেই দল প্রার্থী করার বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছিল। ফলে প্রার্থী ঘোষণা না হওয়ায় বিজেপিকে ব্যাকফুটে থেকেই লড়তে হচ্ছে বলে মনে করছেন দলের নেতারা।

কোনও পক্ষই প্রকাশ্যে কোনও বিষয় নিয়ে প্রচার শুরু না করায় ধন্দে আমজনতাও। শেষ পর্যন্ত ব্যক্তিগত লড়াইয়ে দাঁড়াবে না তো ব্যারাকপুরের লড়াই? সেই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে সব মহলে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Arjun Singh Dinesh Trivedi Lok Sabha Election 2019
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE