টহল: বাঁ দিকে শাসনে চলছে রুট মার্চ। ছবি: সুদীপ ঘোষ।
গায়ে জংলা উর্দি। পায়ে ভারী বুট। হাতে আধুনিক রাইফেল।
রুটমার্চ করছিলেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা। শনিবার সকালে সেই দৃশ্য দেখে আশ্বস্ত হলেন শাসনের খড়িবাড়ি এলাকার বাসিন্দা শেখ অমেদ আলি। ফিরছিলেন খেত থেকে। দু’দণ্ড দাঁড়ালেন। কেন্দ্রীয় বাহিনী চলে যেতেই খুশিতে বলে ওঠেন, ‘‘আশা করছি নিজেদের ভোট নিজেরাই দিত পারব। আমরা চাই বাহিনী এলাকায় থাকুক।’’
বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী বাদুড়িয়া এবং স্বরূপনগরের বিভিন্ন গ্রামের মানুষ নিত্যদিন পাচার, দুষ্কৃতীদের আসা-যাওয়া দেখছেন। এ দিন কেন্দ্রীয় বাহিনী যখন রুটমার্চ করছে, দুষ্কৃতীদের সেই দাপট আর দেখতে পাননি তাঁরা। স্বরূপনগরের কৈজুড়ির এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘শুধু নির্বাচনের সময় নয়। যদি সারা বছরই এমন রুটমার্চের ব্যবস্থা থাকত, তা হলে পাচার, দুষ্কৃতী দৌরাত্ম্য বন্ধ হত।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
শুক্রবারই জেলায় পৌঁছে গিয়েছে এক কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী। শনিবার সকাল থেকেই উত্তর ২৪ পরগনার শাসন থানা এলাকার বাদা, খড়িবাড়ি, কৃষ্ণমাটি, কৃত্তিপুর, দাতপুর, মানিকপুরের মতো বেশ কিছু গ্রামে রুটমার্চ করেন জওয়ানেরা। সঙ্গে ছিলেন শাসন থানার আইসি ফয়জল আহমেদ এবং বারাসতের এসডিপিও সত্যব্রত চক্রবর্তী। বাদুড়িয়া ও স্বরূপনগরেও রুটমার্চ করে কেন্দ্রীয় বাহিনী। প্রথম দিনেই জওয়ানেরা জিতে নেন সাধারণ গ্রামবাসীর ভরসা। বিভিন্ন জায়গায় রাস্তার দু’পাশে বহু মানুষ জওয়ানদের দেখতে ভিড় করেছেন। জওয়ানেরাও কোথাও শিশুকে কোলে তুলে আদর করেছেন, কোথাও গ্রামবাসীর হাল-হকিকতের খোঁজ নিয়েছেন। ভয় দূরে সরিয়ে গ্রামবাসীরাও জওয়ানদের খোলা মনে স্বাগত জানিয়েছেন। ভোটের সময়ে সন্ত্রাসের ছবিটা শাসনে বহু পুরনো। বাম আমলে সিপিএমের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠত। বর্তমানে একই অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের নামে। ভোটের আগে-পরের দিনগুলিতে বোমাবাজি, গুলি চালানো এবং নির্বাচনের দিন ভোট লুট হওয়ার অভিযোগও অতি পরিচত। গত পঞ্চায়েত ভোটেও এখানে এক তৃণমূল নেতার প্রাণ গিয়েছিল। এ বার ভোটের এতদিন আগেই শাসনে কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতি দেখে আশ্বস্ত হতে শুরু করেছেন শাসনের গ্রামবাসীরা। এক সুরে সকলেই মনে করছেন, তাঁরা নিজেরা ভোট দিতে পারবেন। কোনও বাধার সামনে পড়তে হবে না।
বাদুড়িয়ার শায়েস্তানগর-১ পঞ্চায়েত এলাকায় টহলে বেরিয়ে জওয়ানেরা স্থানীয় মানুষের সুবিধা-অসুবিধার খোঁজখবর নেন। তাঁদের নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দেন। সন্দেহজনক বা অপরিচিত কাউকে দেখলে গ্রামবাসীদের দ্রুত পুলিশ প্রশাসনকে জানানোর পরামর্শও দেন জওয়ানেরা। স্বরূপনগরের কৈজুড়ি, বাঁকড়া, গোকুলপুর, হরিশপুর, গাবর্ডা, শাঁড়াপুল, নির্মাণ, বিথারী, বালতি এবং নিত্যানন্দকাটির স্পর্শকাতর বুথ এলাকায় জওয়ানেরা টহল দেন।
বসিরহাট এবং বনগাঁ— পাশাপাশি দু’টি লোকসভা কেন্দ্র। বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে স্বরূপনগর বিধানসভা এবং বাদুড়িয়া থানা এলাকার দু’টি পঞ্চায়েতের ৩২টি বুথ। বনগাঁয় ভোট ৬ এপ্রিল। এর পরে সপ্তম দফায় ১৯ এপ্রিল বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের ভোট। সে দিন বাদুড়িয়ার বাকি অংশের ভোট হবে।
এ দিন দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেও এসেছেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা। বাসন্তী ও কুলতলিতে দু’কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী ঢোকে। এলাকায় টহলদারিও শুরু করেছেন তাঁরা। শুরু হয়েছে রুট মার্চও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy