খোস-মেজাজে: চায়ের দোকানে। নিজস্ব চিত্র
ভোটের দিন যত এগিয়ে আসছে, ততই কে জিতবে, কে হারবে বা কোথায় কত ভুয়ো ভোট পড়বে— তা নিয়ে সকাল-সন্ধে চা-দোকানে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় বাড়ছে। বসিরহাট নতুনবাজারে পারুল গাইনের দোকানে এমনই এক সন্ধেবেলায় দেখা গেল ছোটখাট ভিড়। শুরু হয়ে গিয়েছে ভোট-আলোচনা।
দোকানে বেঞ্চের এক কোণে সরকারি কর্মী পার্থপ্রতিম বন্দ্যোপাধ্যায় বসে। তিনিই শুরু করলেন। বললেন, ‘‘শহরের পাশেই ইছামতী। অথচ কিছুতেই নিকাশি সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। বেহাল নিকাশি এই শহরের মানুষের কাছে ক্রমশ এক বড় সমস্যায় পরিণত হচ্ছে। তা ছাড়া, এখানকার জলে আর্সেনিক রয়েছে। জল পর্যন্ত চড়া দামে কিনে খেতে হচ্ছে। এ সবের কোনও প্রতিকার নেই!’’ এ সব শুনে এগিয়ে এলেন সাহিত্যিক অনিল ঘোষ। তবে রোজকার সঙ্কট বা অভাব-অভিযোগ নয়, অনিল বলেন, ‘‘শহরের সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষের জন্য দু’টি মঞ্চ ছিল। দীর্ঘ দিন ধরে দু’টি মঞ্চই বন্ধ রাখা হয়েছে। এ তো সংস্কৃতিচর্চার প্রতি উদাসীন মনোভাবেরই পরিচয়।’’ এলাকায় অবশ্য যথেষ্ট উন্নয়ন হয়েছে তা স্বীকারও করলেন অনিল। সঙ্গে যোগ করলেন, ‘‘শুধু উন্নয়ন-উন্নয়ন করলেই তো হবে না! তাকে রক্ষার দায়িত্বও নিতে হবে। তা না হওয়ায় শহরের মূল রাস্তার দু’পাশ দখল হতে শুরু করেছে। ফলে শহরে যানজট হচ্ছে। বসিরহাট, টাকি এবং বাদুড়িয়া পুরসভার বয়স দেড়শো পেরিয়ে গেলেও কর্তৃপক্ষের কোনও হেলদোল নেই দেখে শহরবাসী বিমর্ষ। তাই ভোটে লড়তে কোথাও একটা দাঁড়িয়ে পড়লেই হবে না। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যেখানে প্রার্থী হচ্ছেন, সেই অঞ্চলের ইতিহাস-সংস্কৃতি বিষয়ে তাঁর জ্ঞান থাকা জরুরি। অন্যথায় এলাকার উন্নয়ন তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়।’’ তবে শুধু সমালোচনা নয়, অনিল পরামর্শও দিলেন। বললেন, ‘‘ইছামতীই এ শহরের মূল আকর্ষণ। এর সৌন্দর্যায়ন করে বাণিজ্যিক ভাবে তাকে কাজে লাগানোর দিকে নজর দিতে হবে।’’এতক্ষণ ধরে কিছু বলার জন্য উসখুস করছিলেন ব্যবসায়ী দেবব্রত সাউ। অনিল থামতেই তিনি বলেন, ‘‘জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। বেকারত্ব বাড়ছে। জিএসটি বিষয়টা অনেকের কাছেই তেমন পরিষ্কার নয়। এ দিকে শিল্পও নেই। অথচ এ সব নিয়ে কিন্তু কোনও প্রার্থী বা নেতার বক্তব্য শোনা যাচ্ছে না। কেবল এ ওঁর বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে চলেছেন।’’
শিক্ষক পার্থ রায় বলেন, ‘‘শিক্ষা ব্যবস্থার দিকে নজর দিতে হবে। শিল্প নিয়ে ভাবতে হবে। তবেই কমবে বেকারত্ব। সত্যিই এ সব জরুরি বিষয় নিয়ে কারও কোনও বক্তব্য শোনা যাচ্ছে না। সকলেই তরজায় মেতে।’’
ব্যবসায়ী শঙ্কর ঘোষ বলেন, ‘‘টাউনহল এবং রবীন্দ্রভবনে যাতে অনুষ্ঠান করা সম্ভব হয়, তা দেখতে হবে। নতুনবাজারের সংস্কার করতে হবে। আমাদের শহরকে পরিকল্পনা করে গড়ে তুলতে হবে। দেখতে হবে যেন উন্নয়নের সুফল সব মানুষ পান।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy