Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

পাশে শিক্ষক ও প্রাক্তনীরা, কলেজ মেধাবৃত্তি দেবে ছাত্রছাত্রীদের

এই কলেজে মূলত পড়াশোনা করে অত্যন্ত সাধারণ পরিবারের ছেলেমেয়েরা। রুজির টানে অনেকে মাঝপথেই পড়া ছেড়ে দেন। অনেক ছাত্রীর পড়াশোনা করতে করতে বিয়ে হয়ে যায়।

মহেশতলা কলেজ ক্যাম্পাস। নিজস্ব চিত্র

মহেশতলা কলেজ ক্যাম্পাস। নিজস্ব চিত্র

মধুমিতা দত্ত
শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৮ ০২:১৯
Share: Save:

ছিল একটি মেধাবৃত্তি। সেই সংখ্যা বাড়িয়ে এক ধাক্কায় করা হল ৩৩। আর এই মেধাবৃত্তি চালুর ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা নিল কলেজের ফেলে-ছড়িয়ে থাকা কাগজ! সম্প্রতি এমন পদক্ষেপ করতে উদ্যোগী হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মহেশতলা কলেজ।

অধ্যক্ষা রুম্পা দাস শুক্রবার জানালেন, এই কলেজে মূলত পড়াশোনা করে অত্যন্ত সাধারণ পরিবারের ছেলেমেয়েরা। রুজির টানে অনেকে মাঝপথেই পড়া ছেড়ে দেন। অনেক ছাত্রীর পড়াশোনা করতে করতে বিয়ে হয়ে যায়। সেখানেই লেখাপড়ার ইতি। অথচ কিছুটা আর্থিক সাহায্য পেলে তাঁরা পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেন। অনেক সময়ে টিউশন-ফি মকুবও করে দেওয়া হয়। অধ্যক্ষার বক্তব্য, নতুন এই মেধাবৃত্তি ওঁদের আরও উৎসাহিত করবে।

এই কাজের জন্য প্রথমেই কলেজে জমে থাকা খবরের কাগজ এবং অন্য কাগজপত্র বিক্রি করা হয়। সেই টাকা দিয়ে খোলা হয় ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট। এর পরে কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বসেন। এগিয়ে আসেন মূলত শিক্ষক-শিক্ষিকারাই। তাঁরা তাঁদের প্রিয়জনের স্মৃতিতে এক-এক জন পড়ুয়াকে মেধাবৃত্তি দেবেন বলে জানিয়েছেন। উৎসাহিত হয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন প্রাক্তন শিক্ষক এবং পড়ুয়ারাও। কেউ জানিয়েছেন আলমারি দিয়ে সাহায্য করবেন, কেউ আবার দেবেন বুক শেল্‌ফ। রুম্পাদেবী জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত মোট ৩৩টি মেধাবৃত্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

নতুন চয়েস বেসড ক্রেডিট সিস্টেমে (সিবিসিএস) পড়ুয়াদের হাজিরার বিষয়ে কলেজ এখন খুবই কড়া। রুম্পাদেবী জানালেন, ইতিমধ্যেই তাঁর কাছে এক ছাত্রের মা এসেছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, কয়েক বছর হল তাঁর স্বামী মারা গিয়েছেন। ছেলে এক জায়গায় কাজ করে সংসার চালায়। পাশাপাশি কলেজে পড়ে। হাজিরায় খুব কড়াকড়ি হলে ছেলে আর পড়াশোনা চালাতে পারবে না। একটি মেয়েও রয়েছে তাঁর। অধ্যক্ষার কথায়, ‘‘এদের মতো পড়ুয়ারা যদি মেধাবৃত্তি পায়, তা হলে পড়াশোনা করতে কিছুটা উৎসাহিত হতে পারে।’’ উচ্চশিক্ষায় এখন সরকারি সহায়তা দেওয়া হয়। কিন্তু কলেজ থেকে এই ধরনের উৎসাহ দেওয়া হলে সম্বলহীন পড়ুয়াদের পড়াশোনায় আগ্রহ আরও বাড়ে বলেই তাঁর মত।

মেধাবৃত্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে পড়ুয়ার মেধা, আর্থিক অবস্থার পাশপাশি তাঁরা নিয়মিত ক্লাস করেন কি না, গ্রন্থাগারে যান কি না— এই সব বিষয়গুলিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বৃত্তির মধ্যে থাকবে অর্থ এবং বই। আরও একটি তথ্য জানালেন রুম্পাদেবী। মহেশতলা কলেজে মেয়েরা অনুপাতে বেশি পড়েন। মেধাবৃত্তি প্রাপকদের মধ্যেও ছাত্রীর সংখ্যাই বেশি।

এমনই এক জন প্রাপক স্নিগ্ধা দাস। কলেজ পাশ করে গেলেও কলেজ তাঁকে ভোলেনি। স্নিগ্ধার শারীরিক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। বাবার সামান্য রোজগার। সেই পরিস্থিতিতে মহেশতলা কলেজ থেকে ইংরেজিতে অনার্স নিয়ে পাশ করে এখন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে দূরশিক্ষায় এমএ পড়ছেন তিনি। ওই ছাত্রী বলেন, ‘‘কলেজ এ ভাবে আমায় মনে রেখেছে, এটা ভেবেই ভাল লাগছে।’’ অধ্যক্ষ জানিয়েছেন, কাল রবিবার মেধাবৃত্তিগুলি প্রাপকদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Education Academics Human
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE