Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
TMC

‘লোকাল’ নেতাদের হুঁশিয়ার করলেন নেত্রী

মঙ্গলবার দুপুরে বনগাঁ স্টেডিয়ামে জনসভা করেন তৃণমূল নেত্রী। ভাষণের শেষ পর্যায়ে তিনি সিপিএম- বিজেপি-কংগ্রেসের সমালোচনা করে বলেন, ‘‘একটা মজার কাহিনি শুনে নিন। সিপিএম-কংগ্রেস-বিজেপি ভাই ভাই হয়েছে। ওরা জগাই মাধাই বলাই। ওদের কাউকে বিশ্বাস করবেন না,  ভরসা করবেন না।’’ 

মুখ্যমন্ত্রীর সভায় ভিড় মহিলা সমর্থকদের। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

মুখ্যমন্ত্রীর সভায় ভিড় মহিলা সমর্থকদের। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

সীমান্ত মৈত্র
বনগাঁ শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৩:৪১
Share: Save:

‘অন্যায়’ কাজ করলে ‘অ্যাকশন’ নেওয়া হবে বলে বনগাঁর স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের হুঁশিয়ার করে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মঙ্গলবার দুপুরে বনগাঁ স্টেডিয়ামে জনসভা করেন তৃণমূল নেত্রী। ভাষণের শেষ পর্যায়ে তিনি সিপিএম- বিজেপি-কংগ্রেসের সমালোচনা করে বলেন, ‘‘একটা মজার কাহিনি শুনে নিন। সিপিএম-কংগ্রেস-বিজেপি ভাই ভাই হয়েছে। ওরা জগাই মাধাই বলাই। ওদের কাউকে বিশ্বাস করবেন না, ভরসা করবেন না।’’

এই প্রসঙ্গ টেনেই ঘাসফুল শিবিরের স্থানীয় নেতাদের হুঁশিয়ার করে তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূলের লোকাল কোনও লিডারকে যদি বিশ্বাস না হয়, তা হলে বিশ্বাস করবেন না। মনে রাখবেন, লোকাল লিডার দিয়ে দল চলে না। দলটা আমরা চালাই। কোনও লোকাল যদি অন্যায় কিছু করে, আমরা অ্যাকশন নিই। অ্যাকশন নেওয়া ছাড়া আমি কথা বলিনি।’’ তাঁর দল অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয় না বলেও দাবি করে মমতা বলেন, ‘‘এই দল অন্যায় কাজকে প্রশ্রয় দেয় না। কাউকে অন্যায় কাজ করতেও দেবে না।’’ স্থানীয় নেতাদের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, ‘‘মানুষের কাজ করতে হলে মানুষকে ভালবাসতে হবে। তাঁদের ঘরে পৌঁছে যেতে হবে।’’

মুখ্যমন্ত্রী যখন ‘লোকাল নেতা’দের নিয়ে সরব, তখন স্থানীয় ও জেলা নেতাদের অনেকেই মঞ্চে বসে। আচমকা মুখ্যমন্ত্রীর ওই কথায় অস্বস্তি ফুটে ওঠে অনেকের চোখেমুখে।

কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী হঠাৎ কেন বনগাঁর সভামঞ্চ থেকে স্থানীয় নেতাদের ‘অন্যায়’ প্রসঙ্গে মুখ খুললেন?

জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ মনে করছেন, মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সব খবর থাকে। ইদানীং টিম পিকে-ও স্থানীয় নেতাদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে নেত্রীর কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন। এক জেলা নেতার কথায়, ‘‘নেত্রী যে একাংশের নেতাদের সম্পর্কে বিরূপ, এ দিনের ভাষণ থেকে তা স্পষ্ট।’’

তৃণমূল সূত্রের খবর, লোকসভা ভোটে বনগাঁ কেন্দ্রে তৃণমূলের পরাজয়ের অন্যতম কারণ ছিল, স্থানীয় নেতা, জনপ্রতিনিধিদের একাংশের জনবিচ্ছিন্নতা, অহংকার ও মানুষের সঙ্গে দুর্ব্যবহার। যা নিয়ে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল। অনেকেই গাড়ির কাচ তুলে যাতায়াত করতেন শহর-গ্রামের পথ দিয়ে। চায়ের দোকানে বসে গল্পগুজব করতে দেখা যেত না।

এমনকী, কোনও কোনও নেতার ভয়ে সাধারণ মানুষ মুখ খুলতেও সাহস পেতেন না বলে গুঞ্জন ছিল। বনগাঁ, গোপালনগর, বাগদা, চৌবেড়িয়া, গাইঘাটা, গোবরডাঙা এলাকায় কোনও কোনও নেতার বিরুদ্ধে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল।

এ সবের প্রভাব পড়েছিল লোকসভা ভোটে। বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের সাতটি বিধানসভার মধ্যে স্বরূপনগর, বনগাঁ উত্তর, বনগাঁ দক্ষিণ, বাগদা, গাইঘাটা— এই পাঁচটি বিধানসভা এলাকার মানুষকে নিয়েই মূলত এ দিন মমতা জনসভা করেন। লোকসভা ভোটে এই পাঁচটি বিধানসভার মধ্যে একমাত্র স্বরূপনগর ছাড়া বাকি চারটি বিধানসভা এলাকায় লোকসভা ভোটে তৃণমূলের ভরাডুবি হয়। তার মধ্যে বনগাঁ ও গোবরডাঙা পুরসভা এলাকাও রয়েছে। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী মূলত ওই পাঁচটি বিধানসভা এলাকার একাংশের নেতাদের উদ্দেশ্যে ওই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। সামনেই পুরভোট। তার আগে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন দলের একাংশকে সতর্ক করে গেলেন বলেই দলের জেলা নেতৃত্ব মনে করছেন।

তৃণমূলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ওই পাঁচটি বিধানসভা এলাকায় কারও কারও বিরুদ্ধে জোর করে জমি দখল করা, ভয় দেখানো, সরকারি প্রকল্প থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ-প্রশাসন বা জেলা নেতৃত্বের কাছে সব কথা পৌঁছয় না। যদিও তৃণমূল কর্মীদের একাংশের বক্তব্য, দলকে কাজে লাগিয়ে অনেক নেতাই ফুলে ফেঁপে উঠেছেন। গাড়িবাড়ি করেছেন। সে সব কথা নেত্রীর অজানা নয়।

মুখ্যমন্ত্রী এ দিন ‘লোকাল’ নেতাদের কারও নাম অবশ্য বলেননি। তাঁরা কী ‘অন্যায়’ করেছেন, তা-ও স্পষ্ট করেননি। তবে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের পরে নেতাদের মধ্যে তা নিয়ে আলোড়ন পড়ে গিয়েছে। কার কার উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রীর ওই বার্তা, তা নিয়েও চলছে জল্পনা। তবে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে খুশি সভায় আসা তৃণমূলের সাধারণ কর্মী-সমর্থকেরা। তাঁদের কথায়, ‘‘দেরিতে হলেও মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ছবিটা পরিষ্কার হয়েছে।’’

দলের জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘এখন থেকে আমরা আরও বেশি করে স্থানীয় নেতাদের উপরে নজর রাখব। কারও কোনও অন্যায় কাজ বরদাস্ত করা হবে না। মানুষের সঙ্গে দূর্ব্যবহার করা যাবে না।’’

দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই পাঁচটি বিধানসভা এলাকার নেতাদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। কেউ অন্যায় বা বেআইনি কাজে যুক্ত থাকলে তা মুখ্যমন্ত্রীকে জানানো হবে।

আসন্ন পুরভোটের ফলাফলে নেত্রীর হুঁশিয়ারি কতটা কাজে আসে, এখন সেটাই দেখার।

বিরোধীরা অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারিকে কটাক্ষই করছেন। বিজেপির বারাসত সাংগঠনিক জেলার সভাপতি শঙ্কর চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা দলটাকে দুর্নীতি, দাদাগিরি, দলবাজিতে ভরিয়ে রেখেছেন। কাউন্সিলর, পঞ্চায়েত সদস্যেরা গাড়ি-বাড়ি হাঁকিয়ে বেড়াচ্ছেন। এখন মুখ্যমন্ত্রীর কথা শুনতে গেলে দলটাই উঠে যাবে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Mamata Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE