Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Barrackpore

স্ত্রী-সন্তানকে খুনের চেষ্টা, মৃত্যু গৃহকর্তার 

জোর গোলমালের আওয়াজ থেমে গিয়েছিল আচমকাই। পড়শিরা ভেবেছিলেন স্বামী-স্ত্রীর মিটমাট হয়ে গিয়েছে। দীর্ঘক্ষণ ঘর থেকে কোনও আওয়াজ না আসায় খটকা লেগেছিল প্রতিবেশীদের।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০২:২১
Share: Save:

জোর গোলমালের আওয়াজ থেমে গিয়েছিল আচমকাই। পড়শিরা ভেবেছিলেন স্বামী-স্ত্রীর মিটমাট হয়ে গিয়েছে। দীর্ঘক্ষণ ঘর থেকে কোনও আওয়াজ না আসায় খটকা লেগেছিল প্রতিবেশীদের। ঘরে উঁকি দিতেই স্তম্ভিত হয়ে যান তাঁরা। দেখেন, ঘরের মেঝেয় পড়ে যুবক ও তাঁর ছ’বছরের মেয়ে। দু’জনের মুখ থেকেই গ্যাঁজলা বেরোচ্ছে। হাসপাতালে পাঠানোর তোড়জোড় করতেই তাঁদের কানে আসে গোঙানির শব্দ। উৎস খুঁজতে গিয়ে দেখা যায়, রান্নাঘরের মেঝেয় পড়ে কাতরাচ্ছেন যুবকের রক্তাক্ত স্ত্রী। বুধবার দুপুরের ওই ঘটনায় তিন জনকে ব্যারাকপুর বিএন বসু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকেরা রাজেশ ধর (৩৯) নামের যুবককে মৃত বলে ঘোষণা করেন। তাঁর মেয়ে শ্রেষ্ঠাকে পাঠানো হয় সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। রাজেশের স্ত্রী পম্পা ধর ব্যারাকপুর হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন। পুলিশ জানিয়েছে, স্ত্রীকে কুপিয়ে মেয়েকে বিষ খাইয়ে নিজেও বিষ খান রাজেশ। ঘটনায় স্তম্ভিত ব্যারাকপুরের সুকান্তপল্লির বাসিন্দারা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, সুকান্তপল্লির একটি বাড়িতে ভাড়ায় থাকতেন রাজেশ। অন্য পাড়ায় বাপের বাড়িতে থাকতেন তাঁর স্ত্রী পম্পা। শ্রেষ্ঠা থাকত বাবার সঙ্গেই। পম্পা এক জন যাত্রাশিল্পী। যাত্রার পালা লিখতেন রাজেশ। সেই সূত্রেই তাঁদের আলাপ। পম্পা জানিয়েছেন, বছর আটেক আগে তাঁদের বিয়ে হয়। গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন কারণে স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া লেগেই থাকত।

দাম্পত্য কলহের জেরে বছর দুয়েক ধরে পম্পা আলাদা থাকতে শুরু করেন। পম্পা বলেন, ‘‘আমাকে কাজের জন্য বাইরে যেতে হয়। মেয়ের স্কুল এখানে। সে জন্যই ও বাবার কাছে থেকে গিয়েছিল। মাঝেমধ্যে আমি মেয়েকে নিয়ে যেতে চাইলেও আমার কাছে দিত না। প্রতি সপ্তাহে মেয়েকে দেখতে যেতাম।’’

পম্পা পুলিশকে জানিয়েছেন, বুধবার বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ তিনি মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে যান। তখনও বাড়ির রান্না হয়নি। মেয়ে মায়ের কাছে আলুসেদ্ধ ভাত মাখন দিয়ে খাওয়ার আব্দার করে। পম্পা রান্নাঘরে গিয়ে ভাত বসান। তার পরেই শুরু হয় স্বামী-স্ত্রীর গোলমাল। তিনি যখন রান্না করছিলেন, সেই সময়ে পিছন দিক থেকে রাজেশ পম্পার গলায় দড়ি দিয়ে ফাঁস দেওয়ার চেষ্টা করেন। কোনও রকমে তা ছাড়িয়ে পালাতে গেলে বঁটি এবং কাটারি দিয়ে তাঁকে এলোপাথাড়ি কোপান রাজেশ। পম্পা রান্নাঘরে লুটিয়ে পড়েন।

পুলিশ জানিয়েছে, রাজেশ এর পরেই ঘরে রাখা বিষ জোর করে মেয়েকে খাইয়ে নিজেও খেয়ে নেন। স্থানীয় বাসিন্দা রবি সরকার বলেন, ‘‘চুপচাপ হয়ে যাওয়ায় ভেবেছিলাম সব মিটমাট হয়ে গিয়েছে। কিন্তু কেমন যেন অস্বাভাবিক মনে হচ্ছিল। আমরা কয়েক জন ঘরে উঁকি মারতেই দেখি, মেঝেয় বাবা-মেয়ে পড়ে।’’

পম্পা বলেন, ‘‘আমাকে মারধর করত বলেই আলাদা হয়ে গিয়েছিলাম। মেয়েকে নিতে চাইলে ও ঝামেলা করত। আমাকে মারতে চাইলেও মেয়েকে কেন যে শেষ করতে চাইল জানি না!’’ চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ‘‘পম্পার অবস্থা স্থিতিশীল। তবে শ্রেষ্ঠাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। সে বিপন্মুক্ত নয়।’’ পুলিশ জানিয়েছে, একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Barrackpore Suicide
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE