Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
বৌয়ের বিরুদ্ধে সুইসাইড নোট

শ্বশুরকে মেরে, স্ত্রীকে কুপিয়ে ‘আত্মঘাতী’ যুবক

প্রথমে শ্বশুরকে খুন। তার পরে সেই অস্ত্র দিয়েই স্ত্রীকে আঘাত করে শ্বশুরবাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছিল যুবক। পরদিন নিজের বাড়ি থেকে তার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হল।

সুমিত বর্মণ

সুমিত বর্মণ

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০১৬ ০৬:২৩
Share: Save:

প্রথমে শ্বশুরকে খুন। তার পরে সেই অস্ত্র দিয়েই স্ত্রীকে আঘাত করে শ্বশুরবাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছিল যুবক। পরদিন নিজের বাড়ি থেকে তার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হল। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার গভীর রাতে প্রথম ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর ২৪ পরগনার মধ্যমগ্রামে। ধারালো অস্ত্র দিয়ে ওই যুবক আঘাত করলে মৃত্যু হয় শ্বশুর অনুপম দাসের (৫০)। এর পরে স্ত্রী প্রিয়াঙ্কাকেও আঘাত করে তিলজলায় নিজের বাড়িতে পালিয়ে যায় সে। পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার সেখান থেকে উদ্ধার হয় সুমিত বর্মণ (২৪) নামে ওই যুবকের দেহ।

প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, সম্পর্কে অবনতির কারণে আলাদা থাকছিলেন ওই দম্পতি। সেই টানাপড়েনের জেরেই এমন ঘটনা বলে মনে করছে পুলিশ। উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ঘটনার একমাত্র সাক্ষী ওই বধূ হাসপাতালে ভর্তি। তাই ঠিক কী কারণে এই ঘটনা, তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। খুনে ব্যবহৃত ধারালো অস্ত্রটি উদ্ধার হয়েছে।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, ২০১৫ সালের মে মাসে সুমিতের সঙ্গে বিয়ে হয় মধ্যমগ্রামের শ্রীনগর এলাকার বাসিন্দা প্রিয়াঙ্কার। এর পাঁচ বছর আগে থেকেই ঘনিষ্ঠতা ছিল দু’জনের। সুমিতের পরিবারের অভিযোগ, বিয়ের পরে প্রিয়াঙ্কার বিভিন্ন দাবি বেড়ে যাচ্ছিল। তা নিয়েই দু’জনের মধ্যে অশান্তি। গত জানুয়ারি মাসে শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে মধ্যমগ্রামে চলে যান প্রিয়াঙ্কা। তার পরে বারবার ফোন করা সত্ত্বেও শ্বশুরবাড়ি ফেরেননি তিনি। বারাসত কলেজে দ্বিতীয় বর্ষে ফের পড়াশোনা শুরু করেন প্রিয়াঙ্কা।

প্রিয়াঙ্কার প্রতিবেশী শত্রুঘ্ন পাসোয়ান বলেন, ‘‘বুধবার রাতে আমাদের ঘরের দরজায় ধাক্কাধাক্কিতে ঘুম ভেঙে যায়। তখন রাত প্রায় ২টো। দরজা খুলে দেখি, প্রিয়াঙ্কা। মাথা, দু’হাত রক্তে ভেসে যাচ্ছে। ওকে নিয়ে ছুটে যাই মধ্যমগ্রাম হাসপাতালে। সে জানায়, সুমিতই এই কাণ্ড ঘটিয়েছে।’’ দু’হাত এবং মাথায় চোট লেগেছে প্রিয়াঙ্কার। শত্রুঘ্নবাবু আরও বলেন, ‘‘প্রিয়াঙ্কার চিৎকারেই পালিয়ে যায় সুমিত। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখি, পাড়ার ছেলেরা ওই হাসপাতালেই প্রিয়াঙ্কার বাবাকে নিয়ে এসেছে। রক্তে ভেসে যাচ্ছে গোটা শরীর।’’ ততক্ষণে অবশ্য মৃত্যু হয়েছে পেশায় রাজমিিস্ত্র অনুপমবাবুর। পুলিশ জানিয়েছে, ওই রাতেই ট্রেন ধরে তিলজলার সি এন রায় রোডের বাড়িতে ফিরে আসে সুমিত। তাঁর বাবা সঞ্জয় বর্মণ জানান, সুমিত কল সেন্টারে চাকরি করত। অফিসের কথা বলেই বাড়ি থেকে বুধবার রাতে বেরিয়ে যায় সে।

বৃহস্পতিবার সকালে ওই বাড়িতে সুমিতের খোঁজে যায় মধ্যমগ্রাম থানার পুলিশ। পুলিশ সঞ্জয়বাবুকে জানায়, তাঁর ছেলে খুন করে পালিয়ে এসেছে। কিন্তু ছেলে যে বাড়ি ফিরেছে, তা টের পাননি সঞ্জয়বাবু। এর পরেই ভিতরের ঘরের দরজা ভেঙে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে কাপড়ের ফাঁস লাগানো অবস্থায় উদ্ধার হয় সুমিতের দেহ। ঘরে মেলে ‘সুইসাইড নোট’। পুলিশ জানায়, তাতে স্ত্রীর প্ররোচনায় খুনের পরিকল্পনার কথা এবং তার পরে স্ত্রীর চিৎকারে ভয় পেয়ে তাঁকেই আহত করার কথা লিখেছে সুমিত। সে জানায়, শ্বশুরকে খুন করার পরে স্ত্রী যে তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করবে, তা ভাবতে পারেনি সে।

সুমিতের জ্যাঠা বিজয় বর্মণ বলেন, ‘‘বৌয়ের কথার ফাঁদে পা দিয়ে নিজের বিপদই ডেকে আনল ও।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Man stabs father-in-law suicide
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE