Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

জ্বরে ভুগে অনেক পড়ুয়া বসতে পারেনি পরীক্ষায় 

হাবড়া শহরে কামিনীকুমার গার্লস স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় উনিশশো। স্কুলের সব থেকে বড় সমস্যা, স্কুলের মধ্যেই রয়েছে একটি ডোবা। বাইরের জলও সেখানে এসে জমা হয়।

হাবড়া হাসপাতালে রোগীদের ভিড়। ইনসেটে, স্কুলে দেওয়া হচ্ছে মশা মারার ওষুধ। ছবি: সুজিত দুয়ারি

হাবড়া হাসপাতালে রোগীদের ভিড়। ইনসেটে, স্কুলে দেওয়া হচ্ছে মশা মারার ওষুধ। ছবি: সুজিত দুয়ারি

সীমান্ত মৈত্র
হাবড়া শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৯ ০৪:২১
Share: Save:

হাবড়ায় নানা প্রান্তে জ্বর-ডেঙ্গির প্রকোপ ছড়িয়েছে। একাধিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ইতিমধ্যেই। স্কুল পড়ুয়ারাও আক্রান্ত। অনেকেই স্কুলের পরীক্ষায় বসতে পারেনি।

হাবড়া শহরে কামিনীকুমার গার্লস স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় উনিশশো। স্কুলের সব থেকে বড় সমস্যা, স্কুলের মধ্যেই রয়েছে একটি ডোবা। বাইরের জলও সেখানে এসে জমা হয়। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, ডোবার মধ্যে মশার লার্ভা ভেসে বেড়ায়। ছাত্রী ও শিক্ষিকারা আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। সম্প্রতি পুরসভার তরফে ডোবার আশেপাশে ঝোপ-জঙ্গল পরিষ্কার করা হয়েছে। মশার তেল স্প্রে করা হয়েছে। তবে স্কুল কর্তৃপক্ষ চাইছেন সমস্যার স্থায়ী সমাধান। প্রধান শিক্ষিকা জয়িতা দে বলেন, ‘‘নালা তৈরি করে ডোবার জল বের করার ব্যবস্থা করা গেলে মশার হাত থেকে আমরা রক্ষা পেতাম। নালা তৈরি করে তার উপরে সিমেন্টের ঢাকনা দেওয়া প্রয়োজন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।’’

স্কুলের কয়েক জন ছাত্রী ইতিমধ্যেই জ্বর-ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে পরীক্ষায় বসতে পারেনি বলে জানালেন প্রধান শিক্ষিকা। তিনি বলেন, ‘‘ডেঙ্গি সম্পর্কে ছাত্রী ও অভিভাবকদের সচেতনতা বাড়াতে শীঘ্রই পদযাত্রা করা হবে।’’

হাবড়া প্রফুল্লনগর বিদ্যামন্দির স্কুলের তরফে পড়ুয়াদের ডেঙ্গি সম্পর্কে সচেতন করা হচ্ছে। প্রধান শিক্ষক সত্যজিৎ বিশ্বাস জানালেন, ছাত্রেরা অনেকে জানিয়েছে, তারা নিজেদের বাড়ি এবং আশেপাশর এলাকা সাফসুতরো রাখছে।’’ প্রধান শিক্ষকের কথায়, ‘‘তবে সব মানুষ সচেতন নন। আমাদের স্কুলের একটা সুবিধা হল দোতলায় ক্লাস হয়। ফলে সেখানে মশা থাকে না।’’

প্রফুল্লনগর বালিকা বিদ্যালয় ও দক্ষিণ নাংলা কেইউ ইনস্টিটিউটশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, নাংলা স্কুলের তরফে স্কুলে কর্মসূচির মাধ্যমে ডেঙ্গি নিয়ে পড়ুয়াদের সচেতন করা হচ্ছে। হাইস্কুলের তুলনায় প্রাথমিক স্কুলের খুদে পড়ুয়াদের এবং তাদের অভিভাবকদের মধ্যে ডেঙ্গি নিয়ে আতঙ্ক তুলনায় বেশি। একটি প্রাথমিক স্কুলের অভিভাবক গীতা রায় বলেন, ‘‘আমার মেয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। যতক্ষণ স্কুলে থাকে, আতঙ্কে থাকি। মেয়েকে না মশা কামড়ে দেয়। বাড়িতে সব সময়ে চোখে চোখে রাখি। স্কুলে তো সেটা সম্ভব হয় না।’’

অনেক অভিভাবকই তাঁদের ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠানোর আগে হাতে-পায়ে-মুখে তেল, মলম মাখিয়ে পাঠাচ্ছেন। স্কুলে অনেকেই ফুলহাতা জামা পড়ে আসছে। এক অভিভাবকের কথায়, ‘‘প্লাস্টিকের ব্যবহারের ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে আমাদের কোনও ধারণা ছিল না। ছেলে স্কুল থেকে শুনে এসে বলার পরে বুঝতে পেরেছি।’’

প্রশাসনের তরফে স্কুলে স্কুলে প্রার্থনা সঙ্গীতের আগে ডেঙ্গি সম্পর্কে শপথবাক্য পাঠ করানো হচ্ছে। হাবড়া ১ বিডিও শুভ্র নন্দী বলেন, ‘‘কন্যাশ্রী মেয়েদের ডেঙ্গি নিয়ে মানুষকে সচেতন করানো হচ্ছে। এক জন কন্যাশ্রী মেয়ে তার নিজের বাড়ি এবং পাশের চারটি বাড়ির সদস্যদের সচেতন করছে। লিফলেটও বিলি করছে। কোথাও কোনও জমা জল, ঝোপ-জঙ্গল দেখলে স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানাচ্ছে। আমরা সেই মতো পদক্ষেপ করছি।’’

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, স্কুলে গিয়ে প্রশাসনিক কর্তারা শীঘ্রই ডেঙ্গি নিয়ে পড়ুয়া অভিভাবকদের সচেতন করার কাজ শুরু করবেন। প্রতিটি স্কুলে সে সব পড়ুয়া ডেঙ্গি নিয়ে ভাল কাজ করবে, তাদের প্রশাসনের তরফে পুরস্কৃত করা হবে বলেও বিডিও জানিয়েছেন।

হাবড়া পুর এলাকার হাইস্কুলগুলিতে মশার উপদ্রব বন্ধ করতে বিধায়ক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক প্রতিটি স্কুলে মশা মারা মেশিন ও তেল বিনামূল্যে পৌঁছে দিচ্ছেন নিজের বেতনের অর্থে। মঙ্গলবারই অনেক স্কুলে মশা মারা তেল পৌঁছে গিয়েছে। জ্যোতিপ্রিয় বলেন, ‘‘এলাকার ২৩টি স্কুলে ইতিমধ্যেই মশা মারা মেশিন ও তেল পৌঁছে দিয়েছি। আমরা চাই স্কুলে গিয়ে ছেলেমেয়েরা যাতে ডেঙ্গি নিয়ে ভয় না পায়।’’ এলাকার বাকি স্কুলগুলিতেও শীঘ্রই তেল পৌঁছে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Health Dengue Fever Habra
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE