Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

নড়বড়ে রেলসেতুতে উঠতে ভয় হয়

দুর্গাপুজোর নবমীতে মুম্বইয়ের এলফিনস্টোন স্টেশনে ঘটে গিয়েছে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। ফুটওভারব্রিজ ভেঙে পড়ার গুজবে তাড়াহুড়োয় পদপিষ্ট হয়ে মারা গিয়েছেন ২৩জন, আহত আরও ২০। এ রাজ্যের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনগুলির ফুটব্রিজের হাল কেমন? ভিড়ের চাপে সেখানেও কি এমন দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে? বিশদে তারই খোঁজ নিল আনন্দবাজার। এই অবস্থা শুধু ওই দু’টি স্টেশনের রেলসেতুর নয়। ডায়মন্ড হারবার- বারুইপুর শাখার প্রায় প্রত্যেকটি স্টেশনের রেলসেতুগুলি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার হয় না। বেশিরভাগেরই রেলিং নেই। নড়বড়ে ওই সেতুগুলিতে উঠতেই ভয় পান যাত্রীরা।

থেকেও নেই রেলসেতু। রেললাইন দিয়ে চলছে পারাপার। নিজস্ব চিত্র

থেকেও নেই রেলসেতু। রেললাইন দিয়ে চলছে পারাপার। নিজস্ব চিত্র

দিলীপ নস্কর
ডায়মন্ড হারবার শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০১৭ ০৮:১০
Share: Save:

দৃশ্য ১: দেউলা স্টেশনের ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মের রেলসেতুর কাছে দাঁড়িয়ে আছেন এক বয়স্ক মহিলা। যাবেন ডায়মন্ড হারবারে চিকিৎসকের কাছে। সিঁড়ি দিয়ে পার হওয়ার ক্ষমতা নেই। তবু এক পা বাড়ালেন সেতুর দিকে। কিন্তু শেষমেশ পিছিয়ে এলেন। কারণ রেলিং নেই। আর তা না ধরে তাঁর রেলসেতুতে ওঠার ক্ষমতা নেই। রেল লাইনের উপর দিয়েই পার হলেন তিনি।

দৃশ্য ২: নাতরা স্টেশনে মা তাঁর বছর ছ’য়েকের ছেলেকে নিয়ে পার হচ্ছেন লাইনের উপর দিয়ে। তিনিও রেলসেতুতে উঠতে গিয়ে উঠলেন না। একবার রেলসেতুর দিকে তাকিয়েই সরে এলেন।

এই অবস্থা শুধু ওই দু’টি স্টেশনের রেলসেতুর নয়। ডায়মন্ড হারবার- বারুইপুর শাখার প্রায় প্রত্যেকটি স্টেশনের রেলসেতুগুলি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার হয় না। বেশিরভাগেরই রেলিং নেই। নড়বড়ে ওই সেতুগুলিতে উঠতেই ভয় পান যাত্রীরা। এই শাখায় বহু বছর আগে রেল চলাচল শুরু হয়। স্টেশনগুলির কোথাও ১, ২, ৩, আবার কোথাও ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মে যাত্রীদের পারাপারের জন্য রেলসেতুগুলি তৈরি করা হয়েছিল। বহু বছর আগে তৈরি ওই সেতুগুলির কোনও সংস্কার হয়নি বলে অভিযোগ। সেতুর কংক্রিটের স্ল্যাবগুলি নড়বড় করছে। কোথাও আবার রেলসেতুর লোহার রডগুলিতে জং ধরে গিয়েছে। যাত্রীরা জানান, তা ছাড়া সেতুগুলির উচ্চতাও অনেক বেশি, প্রায় ৩০-৪০ ফুট। সেই সেতুতে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ও কটিকাঁচাদের ওঠা সম্ভব হয় না। ছোটদের কোলে নিয়ে ওঠাও কষ্টকর। এর জন্যই বেশির ভাগ যাত্রীই লাইনের উপর দিয়ে পার হয়। আর তাতেই মাঝে মধ্যে ঘটছে দুর্ঘটনা।

শিয়ালদহ-লক্ষ্মীকান্তপুর শাখার লক্ষ্মীকান্তপুর স্টেশনে বহু বছর আগে রেলসেতু তৈরি করা হয়েছিল। সে সময় স্টেশন অনেক ছোট ছিল। এখন স্টেশন বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু রেল সেতু যে জায়গাতে ছিল সেখানেই রয়েছে। ফলে পিছনের বা সামনের বগিতে ওঠা যাত্রীদের অনেকটা হেঁটে তবেই সেতুতে উঠতে হয়। সময় বাঁচাতে অধিকাংশ যাত্রীই সেতু এড়িয়ে চলেন।

ওই স্টেশনে গিয়ে দেখা গেল ২ নম্বর প্ল্যাটফর্মে কাকদ্বীপগামী ট্রেন দাঁড়াতেই যাত্রীরা হুড়মুড় করে নেমে লাইন পার হতে শুরু করলেন। পুরুষ-মহিলা সব যাত্রীই প্রায় হামাগুড়ি দিয়ে ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে উঠে পড়লেন। তাঁদের মধ্যে সমিতা মণ্ডল, জাহানারা বিবিরা জানান, আমাদের বাড়ি বিজয়গঞ্জ বাজারের কাছে। সেতু দিয়ে এলে অনেক ঘুর পথ হবে। তা ছাড়া নড়বড়ে রেলসেতুতে উঠতেও ভয় লাগে। যদি ভেঙে পড়ে। সে জন্য লাইন দিয়েই পার হয়।

রেলসেতুর সমস্যার কথা মেনে নিয়ে বারুইপুর জিআরপির ওসি জ্যোর্তিময় সরকার বলেন, ‘‘আমাদের রেলসেতুর অবস্থা সত্যিই খারাপ। আমি পুজোর পরেই বিষয়টি বিভাগীয় দফতরে জানাব।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘তবে এ ক্ষেত্রে মানুষের সচেতনতারও প্রয়োজন। সচেতন না হলে ঝুঁকি নিয়ে রেল লাইন পারাপার বন্ধ করা যাবে না। আমরা সেতু ব্যবহার করার জন্য নানা ভাবে যাত্রীদের সচেতন করি। কিন্তু তাঁরা শুনছেন না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE