Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

নাম-বিভ্রাটের ফায়দা রাজার, গুঞ্জন দলেই

রাজার প্রত্যাবর্তনের পিছনে যে কাহিনি শোনা যাচ্ছে দলের অন্দরে, সেখানে রয়েছে নাম-বিভ্রাটের এক তত্ত্ব।

স্বমহিমায়: রাজা। —ফাইল চিত্র।

স্বমহিমায়: রাজা। —ফাইল চিত্র।

সুপ্রকাশ মণ্ডল
ব্যারাকপুর শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০১৯ ০৫:২০
Share: Save:

তাঁর পোশাকি নাম একটি আছে বটে, দেবাশিস দত্ত। রাজ্য নির্বাচন কমিশনে সেই নামই নথিভুক্ত রয়েছে। তবে তাঁর দল তৃণমূলের নেতা-কর্মী-সমর্থক থেকে শুরু করে, হালিশহরের তামাম জনতা তাঁকে ‘রাজা দত্ত’ নামেই চেনেন। পুলিশের খাতায় নাম ওঠার পরে গত এক বছর তিনি ‘ফেরার’। সপ্তাহ দু’য়েক আগে সেই তিনিই ফের হালিশহরের উপ পুরপ্রধানের চেয়ার আলো করে বসছেন। পুলিশ অবশ্য এখনও বিষয়টি ‘খতিয়ে দেখা’ ছাড়া বিশেষ কিছু করে উঠতে পারেনি।

রাজার প্রত্যাবর্তনের পিছনে যে কাহিনি শোনা যাচ্ছে দলের অন্দরে, সেখানে রয়েছে নাম-বিভ্রাটের এক তত্ত্ব।

কী রকম?

তৃণমূলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের এক ‘বাহুবলী’ নেতা রাজাকে দলের এক উপর তলার নেতার কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে তাঁর পরিচয় দেওয়া হয় ‘দেবাশিস দত্ত’ নামে। ‘রাজা’ নামটি জানলেও তাঁকে কখনও দেখেননি ওই নেতা। তাঁকে বলা হয়, ‘দেবাশিস দত্ত’ নামে দলের এই কর্মীকে পুলিশ মিথ্যা মামলায় হয়রান করছে। সামনেই লোকসভা ভোট। তিনি ফিরতে পারলে দলের লাভ। তার পরেই ফেরার ব্যবস্থা হয় দেবাশিস দত্তের। তবে দিন কয়েকের মধ্যে উপর তলার নেতারাও জেনে যান দেবাশিসই আসলে রাজা। তার পরেই দলে শুরু হয়েছে বিতর্ক।

স্থানীয় সূত্রের খবর, হালিশহরের উপ পুরপ্রধান রাজা এক সময়ে ছিলেন এলাকার ‘বেতাজ বাদশা।’ পুরসভা তাঁর নিয়ন্ত্রণে তো ছিলই, এমনকী, শহর তৃণমূলও তাঁর অঙ্গুলিহেলনে চলত। তাঁকে ঘিরে থাকত জনা বিশেক শাগরেদের দল। মুকুল রায়ের ঘনিষ্ঠ রাজাকে ঘাঁটানোর সাহস তখন কেউ দেখাতেন না। কিন্তু মুকুলের তৃণমূল ত্যাগের পরে রাজার প্রতিপত্তি কমতে থাকে।

এরই মধ্যে হালিশহরের খাসবাটি এলাকার বাসিন্দা চিত্রা চট্টোপাধ্যায় কলকাতায় হেয়ার স্ট্রিট থানায় তাঁর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ, চিত্রার মেয়েকে সরকারি চাকরি দেওয়ার নাম করে তাঁর কাছ থেকে ৩ লক্ষ টাকা নিয়েছেন রাজা। চিত্রার মেয়ের দুই বন্ধুও আরও ৬ লক্ষ টাকা দিয়েছেন রাজাকে। চাকরি পাননি কেউ। টাকাও বেশির ভাগ ফেরত মেলেনি। পুরভোটের আগে এলাকার সিপিএম সমর্থক এক পরিবারকে খুনের হুমকি দেওয়ার অভিযোগও দায়ের হয়েছিল পুলিশের কাছে। সব মিলিয়ে চাপে পড়েন রাজা। একে একে তোলাবাজি, জমি-বালির বেআইনি কারবারের নানা অভিযোগ উঠতে থাকে রাজার বিরুদ্ধে। তিনি বাধ্য হন এলাকা ছাড়তে।

সপ্তাহ দু’য়েক আগে রাজা এলাকায় ফেরেন বলে জানাচ্ছে দলেরই একটি সূত্র। পুরসভাতেও যাতায়াত শুরু করেন তিনি। চিত্রা ব্যারাকপুর কমিশনারেটে অভিযোগ দায়ের করে জানান, প্রতারণার মামলা প্রত্যাহারের জন্য রাজার লোকজন তাঁদের চাপ দিচ্ছে। এই অভিযোগ দায়েরের পরে হুমকির মাত্রা আরও বেড়েছে বলে জানিয়েছেন চিত্রা। আতঙ্কে আছে পরিবারটি। তাঁর মেয়ে সন্তানসম্ভবা ছিলেন। অভিযোগ, মানসিক অশান্তির জেরে তাঁর গর্ভস্থ সন্তান নষ্ট হয়েছে। চিত্রা বলেন, “এমন অবস্থা চলতে থাকলে আমরা কী ভাবে বাঁচব কে জানে!’’

নাম-বিভ্রাটের জেরে রাজার প্রত্যাবর্তন নিয়ে বিড়ম্বনায় দলের নেতৃত্বও। যে নেতার আশ্বাসে দেবাশিস দত্ত ওরফে রাজা ফিরলেন, তিনি এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তাঁর ঘনিষ্ঠদের এক জন বললেন, ‘‘দাদা নিজেই অস্বস্তিতে। রাজা অনেক দিনই দলের গুডবুকে নেই।’’

তাঁর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগেরই অবশ্য জবাব দিতে চাননি রাজা। তাঁর সংক্ষিপ্ত উত্তর, “সংবাদমাধ্যমকে আমি কিছু বলব না।”

‘ফেরার’ নেতার বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ করছে পুলিশ?

কমিশনারেটের এক কর্তার কথায়, ‘‘বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

এই পরিস্থিতি আরও আতঙ্কের দিকে ঠেলে দিচ্ছে চিত্রার পরিবারকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Confusion Name
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE