প্রতীকী ছবি।
নৈহাটির পলাশি মাজিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সুকুমার হালদার। বয়স ৬৭। বাড়ির কাছাকাছি একটি এটিএম থেকে মাসখরচের টাকা তোলেন অবসরপ্রাপ্ত এই সরকারি চাকুরে। এ মাসে পেনশনের টাকা তুলতে অনেকটা পথ উজিয়ে নৈহাটি শহরে এসেছেন। কারণ, তাঁর বাড়ির কাছের এটিএমে নিরাপত্তা রক্ষী নেই। এত দিন এটিএমে গিয়ে যাঁকে পেতেন, তাঁরই সাহায্য নিয়ে টাকা তুলতেন। কিন্তু সংবাদপত্রে পর পর এটিএম জালিয়াতির খবর দেখে এ বার আর ঝুঁকি নেননি। নৈহাটির একটি ব্যাঙ্কের শাখার এটিএম থেকে টাকা তুলেছেন সুকুমার। কেন না, ওই এটিএমটিতে প্রহরী রয়েছেন। বৃদ্ধের কথায়, ‘‘পেনশনের ক’টা টাকায় সংসার চালাতে হয়। সেই টাকা বেহাত হয়ে গেলে না খেয়ে মরতে হবে। তাই কষ্ট হলেও এত দূর এসে টাকা তুলেছি।’’
ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের প্রায় সব এটিএমই অরক্ষিত। ব্যাঙ্কের শাখা-সংলগ্ন হাতেগোনা কয়েকটি এটিএমে প্রহরী থাকেন। পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, অরক্ষিত এটিএমগুলিতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ব্যারাকপুরের ডিসি (জোন-১) কে কান্নন জানান, ব্যাঙ্কের এটিএমগুলিতে আগে রাতে নজরদারি চালানো হত, যাতে টাকা বা যন্ত্র লুঠ না হয়। ইদানীং পুলিশ এটিএমের ভিতরেও খুঁটিয়ে দেখছে, কোনও ক্যামেরা বা স্কিমার বসানো হয়েছে কিনা।
পুলিশের এমন আশ্বাসে অবশ্য শঙ্কা দূর হচ্ছে না গ্রাহকদের। তাঁদের টাকাও যে জালিয়াতি করে তুলে নেওয়া হবে না, এমন নিশ্চয়তা বা কে দেবে, প্রশ্ন অনেকের। রাষ্ট্রায়ত্ত একটি ব্যাঙ্কের শাখা ম্যানেজার জানান, কোন এটিএমে রক্ষী থাকবে আর কোথায় থাকবে না, তা উপরমহল থেকে ঠিক করা হয়। এ ক্ষেত্রে ব্যাঙ্কের কোনও শাখার কিছু করার থাকে না। ব্যবহারের আগে এটিএম যন্ত্র গ্রাহকদের ভাল ভাবে পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। শ্যামনগরের বাসিন্দা শঙ্কর কর্মকারের অবশ্য প্রশ্ন, ‘‘এটিএম যন্ত্র পরীক্ষা করা আমাদের কাজ? নাকি সেটা আমরা করতে জানি? ব্যাঙ্ককেই তো গ্রাহকদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।’’ আগে ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলতাম। বেশি লেনদেনে টাকা কাটে বলে ইদানীং এটিএম ব্যবহার করি।’’
ইছাপুরের একটি এটিএমে টাকা তুলছিলেন এক বৃদ্ধ। বারবার চেষ্টা করেও টাকা তুলতে পারছিলেন না। দীর্ঘক্ষণ বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা এক যুবক এটিএমে ঢুকলে বৃদ্ধ তাঁকে টাকা তুলে দিতে সাহায্য করতে অনুরোধ করেন। যুবকটি সাহায্য করছিলেন বৃদ্ধকে। তবে বৃদ্ধ যখন পিন টাইপ করছিলেন যুবকটি তখন একটু পাশে সরে গেলেন। কিন্তু বৃদ্ধ যুবকটিকে নির্দ্বিধায় পিন নম্বর বলে দিলেন। যুবকটি তখন অনিচ্ছা সত্ত্বেও পিন দিয়ে টাকা তুললেন। ওই যুবকের কথায়, ‘‘অনেকেই এটিএমে টাকা তোলায় সড়গড় নন। এ ক্ষেত্রে নিরাপত্তারক্ষীর সাহায্য করার কথা। তারা কেউ না থাকলে জালিয়াতে সুযোগ খুঁজবে।’’
শুধু ইছাপুর নয়, কাঁচরাপড়া, নৈহাটি, হালিশহর, কাঁকিনাড়া, জগদ্দল, পলতা, ব্যারাকপুর সর্বত্রই সিহংভাগ এটিএম অরক্ষিত। এত এটিএমে পুলিশের পক্ষে নজরদারি সম্ভব কিনা, সেই প্রশ্নও তুলছেন গ্রাহকেরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy