মোবাইল ফেরত পেলেন তপনবাবু।—নিজস্ব চিত্র
মোবাইল চুরি করেছিল ছেলে। জানতে পেরে ভেঙে পড়েছিলেন মা। শেষমেশ থাকতে না-পেরে ছেলেকে নিয়ে সটান থানায় এসে আইসি-কে বললেন, ‘‘স্যার, ছেলে এই মোবাইলটা চুরি করেছে। যাঁর মোবাইল তাঁকে ফিরিয়ে দিন।’’
বুধবার দুপুরে বছর বাইশের ছেলেকে নিয়ে টেবিলের উল্টো দিকে বসা প্রৌঢ়ার কথা শুনে থ বনগাঁ থানার আইসি সতীনাথ চট্টরাজ। চমকে যান অন্য পুলিশ অফিসাররা। তাঁরা মোবাইলের মালিককে ডাকেন। মোবাইলটি তাঁর হাতে তুলে দেন। ঘটনার কথা শুনে অবাক মোবাইল-মালিকও। গোটা পর্বের পরে আইসি বলেন, ‘‘এই না হলে মা! সমাজে এমন মায়েদেরই এখন প্রয়োজন।’’
ওই প্রৌঢ়া বনগাঁর বাসিন্দা। স্বামী ছোটখাটো কাজ করেন। দুই ছেলেমেয়ে। তাঁকে মোটরবাইক কিনে দেওয়া হয়নি বলে ছেলে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে পড়াশোনা ছেড়ে দেন। ছেলে মাঝেমধ্যেই নানা বেআইনি কাজে যুক্ত হয়ে পড়ছিলেন বলে মায়ের দুশ্চিন্তা বাড়ছিল। তিনি চান, ছেলে মানুষের মতো মানুষ হোক। কিন্তু মঙ্গলবার মেয়ের কাছ থেকে প্রৌঢ়া জানতে পারেন, ছেলে একটি দামি মোবাইল চুরি করে এনেছে। ভেঙে পড়েন তিনি। তার পরেই এ দিন সটান থানায়।
মোবাইলটির মালিক বিচুলিহাটা এলাকার স্বর্ণ ব্যবসায়ী তপন হালদার। গত ১৫ জুন সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ তিনি মোবাইলটি নিজের মোটরবাইকে রেখে দোকানে ঢুকে পড়েছিলেন। মনে পড়তেই ফিরে এসে দেখেন, ফোনটি নেই। তিনি থানায় অভিযোগ জানান। ফোন ফিরে পাওয়ার আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন। কিন্তু বুধবার দুপুরে প্রথমে থানা থেকে ডাক, তারপরে হারিয়ে যাওয়া ফোন পেয়ে তপনবাবু বলেন, ‘‘কোনও মা তাঁর ছেলেকে থানায় এনে মোবাইল ফিরিয়ে দিতে পারেন, ভাবতেই পারছি না। ছেলেটির বিরুদ্ধে আমার কোনও অভিযোগ নেই। আমি লিখিত ভাবে তা পুলিশকে জানিয়ে দিয়েছি।’’
সব মিলিয়ে থানায় ঘণ্টাখানেক ছিলেন প্রৌঢ়া। বারবার পুলিশের কাছে তাঁর একই অনুরোধ, ‘‘আপনারা ছেলেকে একটু ভাল করে বুঝিয়ে দিন। যেন আর চুরি না করে।’’ পুলিশ অফিসাররা ছেলেটির সঙ্গে কথা বলেন। ফেরার পথে প্রৌঢ়া বলেন, ‘‘বারবার ওকে বেআইনি কাজ করতে বারণ করি। তবু শোনে না। এ বার তো প্রথমে আত্মহত্যা করতে ইচ্ছে করছিল। শেষে থানায় এলাম।’’ যুবক বলেন, ‘‘আসলে মোবাইলটা দেখে লোভ সামলাতে পারিনি। এ বার থেকে মায়ের কথা মতোই চলব। পুলিশকেও তা বলেছি।’’
মায়ের মুখে হাসি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy