Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Fox

মা-শেয়ালের কান্নায় কান পাতা দায়

গ্রামবাসীদের দাবি, ২৯ ফেব্রুয়ারি শনিবার সকালে হাটপুকুরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের পাশে একটি মাঠ থেকে সাতটি সদ্যোজাত শেয়ালের ছানা উদ্ধার হয়েছিল।

এই শাবকগুলিকেই নিয়ে গিয়েছে বন দফতর। নিজস্ব চিত্র

এই শাবকগুলিকেই নিয়ে গিয়েছে বন দফতর। নিজস্ব চিত্র

প্রসেনজিৎ সাহা
ক্যানিং শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০২০ ০০:৩৯
Share: Save:

সন্ধ্যা নামলেই শেয়ালের ডাকে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছেন ক্যানিংয়ের হাটপুকুরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দারা। তবে এই শেয়ালের ডাক একটু অন্যরকম বলে মনে করছেন স্থানীয় মানুষ। এই ডাক যেন সন্তানহারা মায়ের বুকফাটা কান্না।

গ্রামবাসীদের দাবি, ২৯ ফেব্রুয়ারি শনিবার সকালে হাটপুকুরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের পাশে একটি মাঠ থেকে সাতটি সদ্যোজাত শেয়ালের ছানা উদ্ধার হয়েছিল। গ্রামবাসীরা মাঠের মাঝে শেয়াল ছানাগুলিকে দেখতে পেয়ে প্রথমে কুকুর বলে ভুল করলেও পরে বুঝতে পারেন ওগুলি শেয়ালের ছানা। তাঁরা খবর দেন বন দফতরে। খবর পেয়ে মাতলা রেঞ্জের বন দফতরের কর্মীরা হাটপুকুরিয়া পৌঁছে শেয়াল ছানাগুলিকে উদ্ধার করে নিয়ে যান। শেয়াল শাবকগুলিকে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয় ঝড়খালি বিট অফিসে। সেখানেই পশু চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে রয়েছে বাচ্চাগুলি।

কিন্তু সেই দিন সন্ধ্যা থেকেই কার্যত সন্ধ্যা নামলেই শেয়ালের ডাকে এলাকায় কান পাততে পারছেন না সাধারণ মানুষ। গ্রামের প্রবীণ মানুষেরা শেয়ালের এমন ডাক আগে কখনওই শোনেননি বলেই দাবি তাঁদের। তাদের মতে সাত সাতটি দুধের বাচ্চা হারিয়ে মা শেয়ালই এমনভাবে কাঁদছে। এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, রবিবার রাতে শেয়ালের কান্না যেন আরও বেড়েছে। সোমবার সকাল হতেই গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় শেয়ালটির খোঁজ করেছেন এলাকার মানুষ। কিন্তু খোঁজ মেলেনি। তবে এই বিষয়টি এলাকার সাধারণ মানুষের মনকে নাড়া দিয়েছে। মাকে সন্তানদের কাছ ছাড়া করা ঠিক হয়নি বলেই মনে করছেন তাঁরা।
এ বিষয়ে গ্রামের বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব সামসুদ্দিন লস্কর বলেন, “শনিবার রাতে প্রথমে বুঝে উঠতে পারিনি কেন ওরকম আওয়াজ করে শেয়ালটি ডাকছে। কিন্তু রবিবার সন্ধ্যা নামতেই ফের শেয়ালের ডাক শুনে বুঝতে পারি সন্তানদের হারানোর কান্না কাঁদছে মা শেয়ালটি।’’

আরেক গ্রামবাসী মনসুর লস্কর বলেন, “দু’দিন ধরে সন্ধ্যা নামলেই শেয়ালের কান্নায় গ্রামে কান পাতা যাচ্ছে না। সোমবার সকাল থেকেই বিভিন্ন ঝোপেঝাড়ে খুঁজেও মা শেয়ালের দেখা মেলেনি। কোনও ভাবে যদি শেয়ালটিকে তার সন্তানদের কাছে পৌঁছে দেওয়া যেত তা হলে ভাল হত।’’ ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে গ্রামবাসীরা বন দফতরকে বিষয়টি জানিয়েছেন। কিন্তু বন দফতর এখনও এ বিষয়ে উদ্যোগী হয়নি বলে এলাকার মানুষের অভিযোগ।

এ ব্যাপারে দক্ষিণ ২৪ পরগনা বিভাগীয় বন দফতরের ডিএফও সন্তোষা জে আর বলেন, “বিষয়টি শুনেছি, কী ভাবে বাচ্চাগুলোকে মায়ের কাছে ফেরত পাঠানো যায় সেটা দেখা হচ্ছে।’’

ক্যানিংয়ের এক পশু প্রেমিক রাকেশ শেখ বলেন, “দ্রুত সন্তানদের মায়ের কাছে ফেরাতে হবে। তার জন্য যদি খাঁচা পেতে মা শেয়ালকে ধরা না যায়, তা হলে সন্তানদের যেখান থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল সেখানে পৌঁছে দিতে হবে। না হলে ওই সদ্যোজাতদের বাঁচানোও মুশকিল হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Fox Canning
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE