Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

ফিরল হারানিধি, বুলি শুনে হতবাক মা

দেড় বছর বাদে সেই ছেলেকেই ফিরে পেয়েছেন বাবা-মা। এখন ছেলের মুখে কথার ফুলঝুরি। কোন জাদুতে এমনটা ঘটল, কেউ জানে না। সে কথা বলতে পারছে না ছেলেও। তবে পাড়া-পড়শির অনুমান, কোনও ভদ্র পরিবারের আশ্রয়ে ছিল সে। সেখানেই চিকিৎসায় সাড়া মিলেছে।

ঘরে-ফেরা: ছেলেকে পাশে নিয়ে অনিতা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

ঘরে-ফেরা: ছেলেকে পাশে নিয়ে অনিতা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

সীমান্ত মৈত্র 
বনগাঁ শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:৪১
Share: Save:

ষোলো বছর বয়সে উধাও হয়ে যায় ছেলে। তখন মুখ থেকে দু’চারটে মাত্র বুলি বেরোত। ভাল করে কথা বলতে না পারায় প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে উদ্বেগ ছিল বাবা-মায়ের।

দেড় বছর বাদে সেই ছেলেকেই ফিরে পেয়েছেন বাবা-মা। এখন ছেলের মুখে কথার ফুলঝুরি। কোন জাদুতে এমনটা ঘটল, কেউ জানে না। সে কথা বলতে পারছে না ছেলেও। তবে পাড়া-পড়শির অনুমান, কোনও ভদ্র পরিবারের আশ্রয়ে ছিল সে। সেখানেই চিকিৎসায় সাড়া মিলেছে।

পেট্রাপোল থানার উত্তর ছয়ঘরিড়া গ্রামের বাসিন্দা সুদীপ কুণ্ডু। বাবা নির্মল ভ্যান চালান। দরিদ্র পরিবার। নির্মল নিজেও কথা বলতে পারেন না। সেই পরিবারের ছেলের মুখে ছোট থেকে দু’টো একটা আধো আধো কথা ছিল। বেশির ভাগটা বোঝা যেত না। টাকার অভাবে ছেলের তেমন চিকিৎসাও করাতে পারেনি পরিবারটি। তবে চার মেয়ের পরে হওয়া ছেলে ছিল মা অনিতার নয়নের মণি। সেই হঠাৎ হারিয়ে যাওয়ায় এত দিন কেঁদে ভাসাতেন তিনি।

ঘটনাটা ২০১৭ সালের ২ জুনের। নির্মল গিয়েছিলেন ভ্যান চালাতে। বাড়ি থেকে বেরিয়ে আর ফেরেনি সুদীপ। তার আগে পর্যন্ত অন্যের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করতেন অনিতা। ছেলের খোঁজে দিশাহারা মা সে সবও ছেড়ে দেন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ছেলের খোঁজে থানা-পুলিশ-হাসপাতাল করে বেড়াতেন। পরিচিত-অপরিচিত কোনও এলাকা খুঁজতে ছাড়েননি। বাড়িতে হাঁড়ি চড়াও কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। ছেলের ছবি-সহ পোস্টার নিজেই বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে সাঁটিয়েছিলেন অনিতা।

ক্রমশ ছেলেকে ফিরে পাওয়ার আশা ক্ষীণ হচ্ছিল পরিবারে। হঠাৎই বুধবার পুলিশের কাছ থেকে খবর আসে, সুদীপকে পাওয়া গিয়েছে। সে গোপালনগর থানায় রয়েছে। অনিতা-নির্মলরা সেখানে যান। পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গোপালনগর থানার হানিডাঙা এলাকায় ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায় সুদীপকে। স্থানীয় বাসিন্দারা তাকে থানায় নিয়ে আসেন।

ছেলেকে জড়িয়ে অনিতা তখন কেঁদে ভাসাচ্ছেন। হঠাৎ ছেলে বলে ওঠে, ‘‘কেমন আছো মা?’’

সেই শুনে থমমত অনিতা। এ তার হারিয়ে যাওয়া ছেলেই তো? মায়ের মনে দ্বিধা কেটেও কাটে না। ছেলেকে খাতা-পেন ধরান তিনি। নানা হিজিবিজি দাগ টানে সেখানে ছেলে। তা-ই দেখে মা বলে ওঠেন, ‘‘হ্যাঁ, এমন দাগই ও টানত ছোটবেলা থেকে।’’ অনিতার মতে, ছেলে কোনও ভাল পরিবারে আশ্রয় নিয়েছিল। পোশাক-আশাক দেখে মনে হয়েছে। তা ছাড়া, চোখেমুখ ঝকঝকে। ভাল খাওয়া-দাওয়া পেয়েছে এত দিন। চিকিৎসাও হয়েছে। না হলে মুখে বুলি ফুটল কেমন করে! কিন্তু সে সব দিনের কথা কিছুই মনে করতে পারছেন না সুদীপ। সে সব নিয়ে আর ভাবতে রাজি নন মা। ছেলেকে পেয়ে ক্ষণে ক্ষণে চোখের জলে ভাসছেন মা।

আর মাকে জড়িয়ে সুদীপ বলছে, ‘‘এ বার স্কুলে ভর্তি হব। লেখাপড়া করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Return Lost Son Surprise
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE